Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা রবিবার, ১১ মে, ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

স্মৃতিতে অম্লাণ বঙ্গবন্ধু


দৈনিক পরিবার | বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজুল ইসলাম এপ্রিল ৯, ২০২৩, ১২:৩২ এএম স্মৃতিতে অম্লাণ বঙ্গবন্ধু

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নানা ঘটনা ও স্মৃতির কথা বলছিলাম। সারা মনপ্রাণ জুড়ে বসে আছে সে সব ঘটনা। ছোট বেলার ঘটনাসমূহ যা ভুলা যায় না, সম্ভবও নয়। তাইতো মানুষ সারা জীবন নানা প্রসঙ্গে ফেলে আসা অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করে আনন্দ নেয়। অবসর মূহুর্তগুলো আনন্দে ভরে উঠে। রেখে আসা অতীতের বাস্তবতা মেলাতে, খুজে পেতে আপ্রাণ চেষ্টা করে। দুঃখের ও কষ্টের স্মৃতিগুলো নিথর পাথর চাপা দেয়। দুঃখ বেদনায় মনপ্রাণ অবশ হয়ে পড়ে। বিংশ শতকের ৫০ এর দশকের প্রথম দিকের স্মৃতি ও কথা। সবেমাত্র শ্রীযুক্ত বাবু রাম সুন্দর বসাকের বাল্য শিক্ষা অক্ষর জ্ঞান শুরু করেছি, নামতা উচ্চারণের মাধ্যমে এক দুই তিন সংখ্যা চেনার চেষ্টা করেছি। গ্রামের উত্তর পাড়ার স্কুল। ৩-৪ কিলোমিটার দূরত্ব। পায়ে হেঁটে যাতায়াত শুরু। বাড়িতেই থাকতেন প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় জনাব সুলতান আহমেদ সাহেব। অক্ষর জ্ঞান দানের সঙ্গে সঙ্গে তিনি তখনকার দিনের নানা ঘটনা ও ইতিহাস গল্পের মতো সুন্দর করে বলতেন, বুঝাতেন, আনন্দ দেবার চেষ্টা করতেন। রাজনৈতিক ঘটনাই বেশি। তখনকার তরুণ তেজদীপ্ত সৌম্য কান্তি সুপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমানের কথাই বেশি বলতেন। আমি, আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। খুব আনন্দ পেতাম, বেশি করে বলার জন্য আবদার করতাম। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি, ইংরেজ তাড়ানো, পাকিস্তান-ভারত নামে দুটো রাষ্ট্রের সৃষ্টি। বাংলা প্রদেশ কত বড় ছিল, কোন কোন জেলায় কোন কোন নেতার জন্ম, বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, কবি গুরু রবীন্দ্রনাথের প্রতিবাদ। তখনই তিনি আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি গানটি লিখেন-১৯০৬ সালে। বলতেন কোন কোন জেলা নিয়ে আমাদের পূর্ব বাংলা এবং কোন কোন জেলা নিয়ে পশ্চিম বাংলা। বর্তমান ভারতের পশ্চিম বাংলা প্রদেশ-রাজধানী কলিকাতা যা এক সময় দুই বাংলার এবং ভারতের রাজধানী ছিল। ১৯১১ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লীতে সরিয়ে নেয়া হয়। ১৯১১ সাল পর্যন্ত কলিকাতাই ছিল ভারতের রাজধানী। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর ঢাকাকে পূর্ব বাংলার নতুন রাজধানী করা হয়। এসময় আলোচনায় সময় ও সুযোগ পেলেই যোগ দিতেন আমার কাকা ও মাঝে মাঝে মামা, দু’জনই ভাষা সৈনিক। ১৯৫২ সালের ভাষা সংগ্রামে দু’জনই কেন্দ্রীয় জেলখানায় জেল খেটেছেন। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, খাজা নামিউদ্দিন সাহেব, শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ জেলখানায় গিয়েছিলেন এবং সবাইকে কমলালেবু ও অন্যান্য ফলমূল দিয়েছিলেন। তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে আনেন। তারা দু’জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলের ছাত্র ছিলেন। এসব বিষয় নিয়ে আমাদের বৈঠকখানা ঘরে যেখানে আমরা পড়তাম-তুমুল আলোচনা হত। ঘর ভর্তি লোক থাকত। সবাই উপভোগ করত, নানা প্রসঙ্গের অবতারনা করত। বাংলা সাহিত্য, কৃষ্টি কালচার কোনটাই বাদ যেত না। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক মহোদয় জানালেন এর মূল নেতা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন জেলখানার ভিতর অনশন ধর্মঘট করেছেন। এক পর্যায়ে তিনি মৃতে্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি জানালেন পৃথিবীতে মাতৃভাষার জন্য একমাত্র বাঙালিরাই প্রাণ দিয়েছিলেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফ্রেবুয়ারি আন্দোলনরত শত শত ছাত্রছাত্রীদের উপর পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের নির্দেশে পাকিস্তানী পুলিশ বাহিনী নির্মমভাবে পাখির মতো গুলি করেন। ঐদিন পুলিশের গুলিতে সালাম, রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার প্রাণ দেন। শেখ মুজিব তখন জেলখানায় আবদ্ধ অবস্থায় অনশন ধর্মঘট করেছিলেন। প্রধান শিক্ষক মহোদয় যে গুরুত্ব দিয়ে ভাষা আন্দোলনের কথা, শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বিগত শতকের ৫০’র দশকে বলেছিলেন-তার বাস্তব প্রমাণ ৬০ ও ৭০’র দশকে এবং একবিংশ শতকের প্রথম দিকে আমরা পাই। শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে একের পর এক আন্দোলন সংঘটিত হয়। ৭০’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়। পাকিস্তানের রাষ্ট্র প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান সুচতুর ভুট্টোর প্ররোচনায় রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর না করায়, শেখ মুজিব বাধ্য হয়ে ২৬ শে মার্চ রাত ১২টার পর স্বাধিনতা ঘোষণা করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী অকৃতিম সাহায্য ও সহযোগিতা করেন। তিনি সারা পৃথিবী ঘুরে ঘুরে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করেন। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নেন। ইন্দিরা গান্ধী সাহায্য সহযোগিতা না করলে, ভারতের সেনাবাহিনী পাশে না থাকলে আমাদের স্বাধিনতা অর্জন আরও দেরি হত। বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়। ত্রিশ লক্ষ মানুষ প্রাণ দেন, শহীদ হন। আমি নিজে আগরতলায় গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। সে সময় দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত হয়। বর্বর পাকিস্তান বাহিনী হেন নির্যাতন অত্যাচার নেই যা তারা মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে করেনি। পশ্চিম পাকিস্তানের জেলখানায় আটকে রেখে সামরিক কায়দায় বিচার করে বঙ্গবন্ধুর ফাঁসি কার্যকর করতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হাসতে হাসতে বলেছিলেন, তোমাদের কাছে একটাই অনুরোধ আমার লাশটা আমার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও, তোমাদের পাকিস্তানে যেন আমার কবর না হয়। এই পর্যায়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোর ভূমিকা ছিল। তিনি নাকি ফাঁসি কার্যকর করতে দেয়নি রাজনৈতিক কারণ দেখিয়ে। আমরা তার কাছেও কৃতজ্ঞ। র্দুভাগ্যবশত জুলফিকার আলী ভুট্টোকে কিন্তু ফাঁসিতেই মৃত্যুবরণ করতে হয়। পাকিস্তানের বর্বর সামরিক সরকার তার ফাঁসি কার্যকর করে। পরবর্তীতে তার মেয়ে পাকিস্তানের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোকে ইসলামাবাদের এক জনসভায় কে বা কারা গুলি করে হত্যা করে। যেমন তারা করেছিল তাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জনাব লিয়াকত আলী খানকে গুলি করে। ৯০’র দশকে বর্বর পাকিস্তানী সামরিক শাসকদল তাদের আর এক সামরিক রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউল হককে বিমানে আমের ঝুঁড়িতে বোমা রেখে রিমোর্ট কন্ট্রোল দিয়ে বিমান গুড়িয়ে রাষ্ট্রপতিসহ সবাইকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে খুন করে। পাকিস্তানের মত জঘন্য, নোংরা, নিৎকৃষ্ট রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্বে বিরল। তার কারণ ধর্মের নামে রাষ্ট্র সৃষ্টি করে যত প্রকার অধর্মের প্রশ্রয় দেয়া, অনৈতিক কার্যকলাপ এবং তালেবান, জঙ্গিবাদের লালন পালন। এই একবিংশ শতাব্দিতে মেয়েদের লেখাপড়ার বিরোধীতা এবং সরকারি কোন পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি না থাকা, অবিশ্বাস্যই মনে হয়। ১৯৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানের লোক সংখ্যা সাড়ে ৪ কোটি, পশ্চিম পাকিস্তানের লোক সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লক্ষ। ২০২০ সালে বাংলাদেশে ১৭ কোটি, পাকিস্তানে ২২ কোটি, বিশ্বে ৬ষ্ঠ বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক সংখ্যার দেশ। পরিবার পরিকল্পনা না থাকার কুফল। পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই চরম দুর্দশাগ্রস্থ একটি জাতি, একটি রাষ্ট্র। এদের রাজনৈতিক কোন আদর্শ আছে বলে মনে হয় না। ছোট বেলার শৈশবকালে যা শুনেছিলাম, আজও তা মনে আছে। প্রধান শিক্ষক মহোদয় বলেছিলেন-৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলনে থাকলে নিশ্চয়ই নেতৃত্বে থাকতেন এবং পাকিস্তানী পুলিশ বাহিনী খুঁজে পেয়ে তাকে হত্যা করতো। পূর্ব পাকিস্তানে আর কোন সংগ্রাম ও আন্দোলন হত না। কেউ এমন দেশপ্রেম ও অসীম সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে সাহস করত কিনা সন্দেহ হয়। উহা সর্বজন বিধিত বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম ও নির্ভীক আন্দোলনের ফলেই স্বাধিন বাংলাদেশ পেয়েছি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি জাতীয় সঙ্গীত পেয়েছি। সেই ছোট বেলায় বৈঠকখানার আলোচনায় বার বার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম শুনতাম। শুনতাম বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতির গল্প, নেতা নেত্রীর কথা যা হৃদয়পটে চির অক্ষয় হয়ে আছে। যেমন বাংলার কৃষকের মুক্তির দূত, শিক্ষার আলো ছড়ানো অগ্রপথিক, সমস্ত কুঃসংস্কার থেকে বাংলার সাধারণ মানুষকে সভ্যতার পথে আনার সমাজ সেবকদের কথা। তারা হলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা ভাষানী, মহাত্মা গান্ধী, পন্ডিত জওহর লাল নেহেরু, তার পিতা বিখ্যাত আইনজীবী পন্ডিত মতিলাল নেহেরু, দেশবন্ধু চিত্ত রঞ্জন দাস, নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু, রাজা রামহোন রায়, স্বামী বিবেকানন্দন, ক্ষুদিরাম বসু, সূর্যসেন, প্রীতিলতা সেনসহ আরও অনেক অনেক নেতা নেত্রীর কথা। তিনি বলতেন, জানো ভারতবর্ষকে স্বাধিন করার জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের মতো সাহসী দেশপ্রেমিকগণ মেদেনীপুর জেলার পরপর তিনজন ইংরেজ জেলা প্রশাসককে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। এমনি এমনি ইংরেজরা এদেশ ছেড়ে যায়নি, ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। তখন থেকেই নেতাদের দেখার বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখার আকাঙ্খা বদ্ধমূল হয়। সময় ও নদীর জোয়ার ভাটা কারও জন্য অপেক্ষা করে না। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছি। ৮ম শ্রেণীতে পড়ি। হঠাৎ কানে মাইকের আওয়াজ এলো-পল্টন ময়দানে বিশাল জনসভা, বিকাল ৪টায়। বক্তৃতা করবেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সহ আরও অনেক নেতার নাম বললো। কিন্তু শেখ মুজিবের নাম বলেনি। সভায় আসলাম, সকলকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, শেখ মুজিব কারাগারে বন্দি, তাই তিনি নেই। উনার মুক্তির উপলক্ষেই আজকের জনসভা। শেরে বাংলাকে দেখলাম। আমার দেব দর্শন হল। বিশাল দেহের অধিকারী, লম্বা মুখ-ভূড়ি এত বড় যে তিনি নিজেই নিজের দেহের নিচের অংশ দেখেন না। দাঁত নেই, কথা অস্পষ্ট। তবুও যতটুকু বুঝার বুঝলাম। নানা যুক্তি তর্কের মাধ্যমে শেখ মুজিবের আশু মুক্তি চাইলেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের নানা দুঃখ দুর্দশা ও দুই পাকিস্তানের সম্পদের বৈষম্যের কথা বলতে চেষ্টা করলেন-সেগুলো প্রকৃতপক্ষে মুজিবেরই দাবি। প্রধান শিক্ষকের মুখে, বাবার মুখে, চাচার মুখে, মামার মুখে যে শেরে বাংলার কথা ও রাজনৈতিক অর্জনের কথা বারবার শুনেছি-শেরে বাংলার বক্তৃতা শুনে তা মেলানোর চেষ্টা করেছি। জনসভায় যাওয়ার কষ্ট সার্থক হল। ১৯৬২ সালে আমরা যখন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেই, তখন আমাদের অংক পরীক্ষার আগের রাতে এ পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন। আমাদের পরীক্ষা বন্ধ। সব পরীক্ষার শেষে অংক পরীক্ষা হয়। ১৯৬৩ সাল, বগুড়া আজিজুল হক কলেজে আইএসসি পড়ছি। শুনলাম, পোস্টার দেখলাম-বগুড়া সফরে আসছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেখ মুজিবুর রহমান, মাওলানা তর্কবাগিশ আরও অন্যান্য নেতা। আমার খুব আনন্দ হল-আজকে খুব কাছ থেকে দেখতে পারব। তখন মোস্তাফিজুর রহমান পটল ভাইয়ের সঙ্গে মিলে মিশে চুটিয়ে ছাত্রলীগ করি। পটল ভাই ৭৩ সালের নির্বাচনে বগুড়া সদর থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ৭৫’র রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নভেম্বর মাসে জেনারেল খালেদ মোশাররফ এর আন্দোলনের সময় খালেদ মোশাররফ নিহত হন। সেই সময় এমপি পটল ভাইকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জেনারেল জিয়াউর রহমান ও ঘাতকদল এ হত্যাকাণ্ড ঘটান। বঙ্গবন্ধুর খুব স্নেহভাজন ছিলেন। পটল বলে ডাকতেন। ১৯৬২/৬৩ সালে হার্নিয়া অপারেশনের সময় বঙ্গবন্ধু পটল ভাইয়ের চিকিৎসার সমস্ত খরচ বহন করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডাক্তার রাব্বি সাহেবকে ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোন করে ভাল করে চিকিৎসা করার সুপারিশ করেন। পটল ভাই বগুড়া ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ সময়। পটল ভাইয়ের স্ত্রী একসময় মহিলা এমপি পুতুল ভাবি এ বছর ইন্তেকাল করেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন মানবতার মহান আদর্শ জননী শেখ হাসিনা পুতুল ভাবির মৃতে্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। যে কথা বলছিলাম। আমরা হাজার হাজার লোক বগুড়ার সাত মাথায় জেলা স্কুল প্রাঙ্গণে এবং নবাব বাড়ির রাস্তায় অপেক্ষা করছি-শেখ মুজিবুর রহমান এবং সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে দেখার ও কথা শুনার জন্য। দুপুর একটায় ট্রেন বগুড়া পৌঁছার কথা থাকলেও বগুড়া পৌঁছাল সাড়ে ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে। সারা রাস্তায়ই জনগণ ট্রেন থামিয়ে নেতাদের কথা শুনেছেন। তখন যাতায়াতের একমাত্র অবলম্বন ছিল রেলপথ। অন্য কোন যানবাহন ছিল না। নেতৃবৃন্দ আসলেন। সবাই অভুক্ত, সোহরাওয়ার্দী সাহেব অসুস্থ। তাড়াহুড়া করে বগুড়া সার্কিট হাউসে খেয়েই মঞ্চে আসলেন। হাজার হাজার লোকের চিৎকার-আমরা সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা শুনব। তিনি উঠে বললেন, আমি কিছু বলার আগে আমার ছোট ভাই শেখ মুজিব কিছু বলবেন, আপনারা শুনবেন? সমস্ত জনগণ সাগরের গর্জনের মত গর্জন করে বললো, আমরা শুনব। তরুণ সিংহ পুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান মঞ্চে উঠলেন, চশমা খুললেন, দু’হাতের পাঞ্জাবির হাতা গুটালেন, শুরু করলেন-আমার স্বাধিন দেশের পরাধিন ভাইয়েরা। যেন সুন্দর বনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার গর্জন করে উঠলেন। লক্ষাধিক মানুষ নড়েচড়ে বসলেন। পিন পতন নীরবতা। মানুষ কেমন যেন মোহগ্রস্ত হয়ে গেছেন। কারও মুখে কোন কথা নেই। শুধু মুহুমুহু করতালি। ১ ঘণ্টার বেশি সময় যেন একটি গদ্য কবিতা তিনি পাঠ করলেন। প্রতিটি মানুষের মনের কথাই যেন তিনি বললেন। আর কারও বক্তৃতার দরকার হয়নি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। শেষ মুহুর্তে সোহরাওয়ার্দী সাহেব দু’এক মিনিট কথা বলে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করলেন। আজ অবধি আমার জীবনে সে রকম একটি তোজোদীপ্ত বাঘের গর্জনের বক্তৃতা আমি আর শুনিনি। ৭ই মার্চ, ১৯৭১’র বক্তৃতার সময়ও খুব কাছ থেকে শুনেছি। মঞ্চের কাছাকাছিই ছিলাম। দুটো বক্তৃতায় দু’রকম মাধুর্য্য। ছোট বেলা থেকে সারা মনপ্রাণ জুড়ে যে নেতাকে দেখার ও যে নেতার কথা শুনার আকাঙ্খা ও বাসনা ছিল তা যেন কানায় কানায় পূর্ণ হল। কেন যেন মনে হল বাঙালি শত বছর যাবত এমন একজন বীর পুরুষ নেতার জন্যই অপেক্ষা করেছিল। বাঙালির সকল দুঃখ দুর্দশা বেদনা লাঘব ও চাওয়া পাওয়া এ নেতার দ্বারাই সম্ভব। তিনি তো মুক্তির দূত। তিনিই তো ক্ষুদিরাম, এই তো দেশবন্ধু চিত্ত রঞ্জন দাস, নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু, রাজা রাম মোহন রায়, স্বামী বিবেকানন্দ। তিনিই তো বাঙালির সমাজ সংস্কারক বিদ্যা সাগর-অর্থাৎ তিনি বাঙালির সকল নেতা নেত্রীর সকল গুণবালি নিয়েই এ ধরাধামে এসেছেন। হাজার হাজার বছরের শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তি দেবার জন্য। আমার সে দিনের অনুমান ও দৃঢ় বিশ্বাস একটুও মিথ্যা হয়নি। পুরোটাই বাস্তবতা পেয়েছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সৃষ্টির মাধ্যমে। বিশ্বের সকল দেশের বড় বড় নেতারা বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট দিলেন। ১৯৬৩ সালের পরই সোহরাওয়ার্দী সাহেব আস্তে আস্তে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তিনি চিকিৎসার জন্য ভূমধ্যসাগরের তীরে বৈরুত নগরীতে গিয়ে একেবারে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মরদেহ ঢাকা এনে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দক্ষিণ পাশে শেরে বাংলার পাশে সমাধিস্থ করা হয়। এ নেতার নামেই বঙ্গবন্ধু এ মাঠের নামকরণ করেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। বঙ্গবন্ধুকে এরপর খুব কাছ থেকে দেখি ১৯৬৭-৬৮ সালে রাজশাহীতে। তখন আমি এমএসসি শেষ বর্ষের ছাত্র। এসএম হলে থাকি। প্রভোস্ট ড. মাজহারুল ইসলাম একজন নির্ভীক আওয়ামী লীগ সমর্থক ও একনিষ্ট কর্মী, বঙ্গবন্ধুর অন্ধ ভক্ত। স্যারের বাসায় দুপুরের খাবার খান বঙ্গবন্ধু। তারপর ঈদগাহ মাঠে বিশাল জনসভা। এস এম হলের ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে আমরা কয়েকজন জননেতার সঙ্গে খাবার খাওয়ার সুযোগ পাই। তখন সভাপতি জনাব আবু সুফিয়ান যার স্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান বর্তমান সরকারের প্রতিমন্ত্রী। নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু ভাই তখন সাধারণ সম্পাদক। ২০১৪ সালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন বোর্ডের সভাপতি নির্বাচিত হন। সুফিয়ান ভাই ১৯৭৪ সালে খুলনার খালিশপুরে শ্রমিকলীগের সভাপতি থাকাকালে দুর্বৃত্তের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মী জীবনে অনেক দেখেছি। কিন্তু সুফিয়ান ভাই ছিলেন অনন্য সাধারণ, ব্যতিক্রম, বিরল। দুপুরে খাবারের পর আমরা সবাই আন্দোলনের দিকনির্দেশনা, বর্তমান অবস্থা এবং আমাদের কি করণীয় জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শুধু বললেন, ষবঃ ঃযব ঃরসব পড়সব, সব জানতে পারবি। শুধু এটুকু জেনে রাখ নিজেদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে, কেউ আদায় করে দিবে না। কাজ করতে হবে নিরলসভাবে, ভয়ভীতি থাকলে চলবে না। প্রয়োজনে জোর করে বাঙালির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে হবে, যুদ্ধ করতে হবে। বিশাল ঈদগাহ মাঠে বিশাল জনতার উপস্থিতিতে অপূর্ব তুলনাবিহীন বক্তব্য শুনলাম। ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ ছাড়া কারও পক্ষে এ ধরনের বক্তব্য সম্ভব নয়। জনতা নিথর, স্তব্ধ। তৃতীয়বার বাঙালির মুক্তির দূত বঙ্গবন্ধুকে দেখি ৭২ সালে তার বেইলি রোডের গণভবন অফিসে। তিনি যখন রোমিও জুলিয়েট পুরস্কারে ভূষিত হন। আমি তখন সোনারগাঁও কলেজে রসায়নের অধ্যাপক। প্রিন্সিপাল জনাব আলতামাসুল ইসলাম জাহাঙ্গীর সাহেবের নেতৃত্বে মাল্য ভূষিত করতে গিয়ে। শতশত দেশি বিদেশী নেতাকর্মী গণভবন ঘিরে আছে। অল্প সময়। তবুও তিনি চিনতে পারলেন, নাম ধরে ডাকলেন। মনপ্রাণ অন্তর ভরে উঠলো। নেতা বললেন, তোরা প্রকৃত মানুষ তৈরি করবি, যারা বাঙালির মুখ বিশ্বের কাছে উজ্জ্বল করতে পারে। বাঙালির কল্যাণ কামনা ও সাধনা তার চিন্তা চেতনা ও ধ্যানের বিষয় ছিল। বাঙালির নিজস্ব সত্ত্বার বিকাশ তিনি সর্বত্র করে গেছেন। তাইতো দোয়েল পাখি বাঙালির জাতীয় পাখি, বিল ও ঝিলের শাপলা ফুল জাতীয় ফুল, সুন্দরবনের বাঘ জাতীয় পশু, বাঙালির সকল মানুষের ধনী গরীবের ফল কাঁঠাল জাতীয় ফল, লাল ও সবুজ জাতীয় পতাকার রং এবং সর্বোপরি বঙ্গভঙ্গ বন্ধের জন্য কবিগুরু প্রতিবাদ স্বরূপ যে গানটি ১৯০৬ সালে লিখে ছিলেন, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি সেই মধুর গানটিই তিনি বেছে নেন জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে। সর্বশেষ দেখা হয় ১৯৭৩ সালে আগস্ট মাসে বাংলাদেশের প্রথম বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলের পর। আমি নিজে একটি ক্যাডারের প্রথম ব্যক্তি। অনেক ধড় পাকড়ের পর দেখা পাই। আমরা কিছু বলার আগেই তিনি আমাদের দু’একজনের নাম ধরে ডাকলেন এবং আমাকে বললেন, কিরে অধ্যাপনা ছেড়ে বিসিএস কর্মকর্তা হয়েছিস, খুব ভাল হয়েছে। আমার সৃষ্টি ক্যাডার। তোরাই বাংলাদেশের প্রথম বিসিএস কর্মকর্তা। দেশটাকে সঠিক পথে চালানোর দায়িত্ব তোদের হাতে। স্বার্থপর ও চোর বাটপারে দেশটা ভরে গেছে। এসব আগাছা সব উপড়ে ফেলতে হবে। সুন্দর শ্যামল সুবজ সোনার বাংলা গড়তে হবে। যা, যার যার কর্মস্থলে গিয়ে সঠিকভাবে কাজ কর। আমাদের আর কোন কথা বলার সুযোগ দেননি। সবাই একে একে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে চলে আসি। নীতি আদর্শ ঠিক রেখে বাঙালির সত্ত্বার বিকাশ ঘটিয়ে যার যার কর্মস্থলে কাজ করে যাবার উপদেশ দেন। এ উপদেশ আজও আমার মনে আছে। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সাল। সেই ভয়াল কালো রাত। বাঙালির সব অর্জন ম্লান হবার সেই অশুভ মুহুর্ত। দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্র। পালের গোদা মীরজাফর খন্দকার মোশতাক, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, নেপথ্যে সুচতুর জেনারেল জিয়াউর রহমান সহ আরও অনেকে। কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য ফারুক, রশিদ, ডালিম, নুরুজ্জামান, শাহরিয়ার প্রভৃতি আরও অনেকে বিভ্রান্ত করে এহেন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড ঘটান। পৃথিবীর ইতিহাসে এ বিরল ঘটনা। এ ঘটনা লিখতে ভাল লাগে না, লিখা যায় না। মনপ্রাণ কান্নায় ভরে উঠে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা সে রাতে দেশের বাইরে জার্মানীতে ছিলেন বিধায় এ হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পান। বঙ্গবন্ধুর পরিবার ছাড়াও পুলিশ সদস্য, উধ্বর্তন সামরিক কর্মকর্তা, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও ভাগিনা শেখ ফজলুল হক মনিসহ তার পরিবারের অনেককে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের সহ মোট ১৮ জনকে ঘটনাস্থলেই অমানবিকভাবে হত্যা করা হয়। যতদিন জিয়াউর রহমান, তার স্ত্রী খালেদা জিয়া এবং জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় ছিলেন, ততদিন এ নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের মামলা হয়নি, বিচার হয়নি। জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিচার করেন। সংশ্লিষ্ট অনেককে ফাঁসি দেন, ফাঁসির আসামী যারা দেশের বাইরে পলাতক রয়েছে তাদেরকে দেশে এনে ফাঁসি কার্যকরের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালিন রাজাকার, আল বদর, আল শামস ও দেশদ্রোহী সকলের বিচার করেন। ক্যান্টনমেন্ট থেকে খালেদা জিয়াকে চলে যেতে বাধ্য করেন। বিডিআর হত্যাসহ সকল বে আইন কর্মকাণ্ড ও হত্যাকাণ্ডের বিচার করেন। জেলখানায় নিরাপরাধ জাতীয় ৪ নেতার হত্যাকাণ্ডের বিচারও শেখ হাসিনা করেন। বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশ্বাস ছিল, কোন বাঙালি কোনদিনই বঙ্গবন্ধুর কোন ক্ষতি করবে না, চোখের দিকে তাঁকিয়ে কথা বলবে না। এ আত্মবিশ্বাস নিয়েই তিনি আর দশজন সাধারণ নাগরিকের মতো জীবন যাপন করতেন। তা না হলে তিনিও চীনের মাওসেতুং, চৌ এন লাই, রাশিয়ার লেলিন, স্টানিন, ক্রসচেব, ব্রেজনেব এবং কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোর মত হাজার হাজার পুলিশ ও সেনা সদস্য বাড়িতে পাহাড়া রেখে ঘুমাতে পারতেন। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেরকম পূর্বাভাসও দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তা আমলে নেননি। উপরোল্লিখিত বিশ্ব নেতাদের দর্শন ছিল লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় আসে তাদের শত্রু কখনও শেষ হয়ে যায় না। সুযোগ পেলেই তারা ছোবল মারে। মহান আত্মার অধিকারী বিশাল হৃদয়ের বাঙালি অন্তপ্রাণ বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতে পারেন নি কোন বাঙালি তার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারে। বাঙালির র্দুভাগ্য। ১৫ আগস্ট রাতে আমি আমার কর্মস্থল খুলনায়। তখন আর মোবাইল ফোন ছিল না। রাতে কেন সকালেও রেডিও, টিভি শুনার আগে কেউ কিছু জানতে পারেনি বাঙালির কত বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। অফিসে যাওয়ার আগে টিভি খুলে হতবাক। মেজর ডালিম একনাগারে বলে যাচ্ছে, স্বৈরাচারি সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে, শেখ মুজিবকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। খন্দকার মোশতাক নতুন সরকার গঠন করেছেন। খবরটি শুনার সাথে সাথে আমি কেমন জানি হয়ে যাই। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। দপ করে কোথায় যেন পড়ে যাই। যখন জ্ঞান ফিরে পাই, তখন আমি হাসপাতালে। ডাক্তার মল্লিকসহ অনেক মানুষ আমার সেবা শুশ্রুষা করছে। জ্ঞান ফিরে পাবার পর শুধু একটাই কথা-একটা প্রশ্ন আমার কাছে বড় হয়ে দেখা দেয়-এ ও কি করে সম্ভব? সব সম্ভবের দেশ আজ এ বাংলাদেশ। এ দুঃসহ যন্ত্রণার স্মৃতি সারা জীবন আমায় তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কি নির্মম নিষ্ঠুর যন্ত্রণাময় এ স্মৃতি!

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সিরাজুল ইসলাম
সাবেক যুগ্মসচিব
উপজেলা চেয়ারম্যান, বাঞ্ছারামপুর উপজেলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

 

Side banner