এখনও বাংলার বউরা তাদের শাশুড়িদের থেকে প্রতিনিয়ত ‘অলক্ষ্মী’ গালিটা শুনে থাকেন। এই গালি কি শুধু হিন্দুরাই দেয়? মুসলিমরা দেয় না? যেহেতু মুসলিমরা ‘অলক্ষ্মী’ গালিটা ব্যবহার করে, সুতরাং ধরাই যায় তাদের জিনের মধ্যে এখনও লক্ষ্মী দেবীর অর্চনা রয়ে গেছে। লক্ষ্মীর বাহন যে পেঁচা এটা কে না জানে! সুতরাং ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে বাঙালিদের পেঁচার ব্যবহার এতোটা দোষের ভাবার কিছু নেই। কারণ, বাঙালিরা কখনোই আরবদের মতো ফ্রেশ মুসলিম না।
নববর্ষে এই ধরণের প্রতীকের ব্যবহার শুধু বাংলাদেশেই নয় ইরান, ইরাক, তুরস্ক, সিরিয়া, আজারবাইজানের মতো মুসলিম প্রধান দেশেও ব্যবহৃত হয়। তাদের প্রতীক সাতটি- দুর্বাঘাঁস, রসুন, সুমাক, আপেল সেনজিদ, সিরকা, সামানু। দুর্বাঘাঁসের বা তুলসী গাছের ব্যবহার বাঙালি করলে সেটা পূজা হয়ে যায়! নওরোজে সেনজিদকে পুনর্জম্মের প্রতীক ধরা হয়। বাঙালি মুসলমানরা কি বলতে পারবে, ইরানিরা কেনো পুনর্জন্মবাদের বিশ্বাস করে। কোনো কোনো দেশে দশটা এগারোটা প্রতীকও রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে- আয়না, সোনালী মাছ এবং পয়সা। পয়সার মতো একটা জড়বস্তুকে কেনো প্রতীক করা হয়েছে? বলতে পারেন? সোজা উত্তর এটা সমৃদ্ধির প্রতীক, বাহন। তারা পয়সাকে গ্রহণ করেছে, আমরা পেঁচাকে।
সো এই পেঁচা নিয়ে এতো প্যাঁচানোর কিছু নাই। যারা মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বৈশাখের নতুন সংস্করণ বলে উড়িয়ে দিতে চাইবেন তারা কিন্তু আকবরের দ্বীন এলাহির প্যাঁচে পড়ে যাবেন বলছি। যে আইনজীবী মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে আইনি নোটিশ দিয়েছে সেও স্বীকার করেছে এটা আমাদের জাতীয় উৎসব। আপনি যদি এই উৎসব আকবর থেকে ধরেন, এবং যদি মনে করেন আকবরের পরে এই উৎসবে আর কোনো সংষ্কার করা যাবে না, আমি মানব আপনার কথা। যদি আপনি আকবরকে দ্বীনি এলাহিসহ সম্পূর্ণরূপে মান্য করেন। তাহলে আমিও নতুন সৃষ্ট মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে কাজ করব। ঘুম থেকে উঠে দেখব, মানুষ সালামের পরিবর্তে আল্লাহু আকবার বলছে, দাঁড়ি রাখার জন্য মৌলানারা ট্যাক্স দিচ্ছে সরকারকে, মাইক বাজানোর জন্য কোটি কোটি টাকা জমা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় খাতে। পেঁচা ছাড়াই যদি ঘরে লক্ষ্মী চলে আসে তাহলে পেঁচার আর দরকার কি! বাঙালি মুসলমানরা ভাবুন, কোথায় যাবেন? মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাবেন নাকি দ্বীনি এলাহিতে যাবেন? আমি আপাতত মঙ্গল শোভাযাত্রায় যাচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :