Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৫ ভাদ্র ১৪৩১
হুমকী দিচ্ছে বিতর্কিত ব্যবসায়ী জালাল মিয়া

বাঞ্ছারামপুরের হোসাইন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে


দৈনিক পরিবার | বাঞ্ছারামপুর প্রতিনিধি নভেম্বর ১৪, ২০২৩, ০২:১৭ পিএম বাঞ্ছারামপুরের হোসাইন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে

রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালের আইসিইউয়ের সামনে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছেন মা সাথী আক্তার। বাবা আবদুল মান্নান বারান্দায় ফ্লোরে বাকরুদ্ধ অবস্থায় হেলান দিয়ে বসে আছে। একমাত্র সন্তান মো. হোসাইন আইসিইউতে জীবন মৃতে্যুর সন্ধিক্ষণে। ডাক্তারগণ হোসাইনকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। অন্যান্য সাধারণ দিনের মতো গত ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্কুলের শিক্ষক মো. সজিব মিয়ার কাছ থেকে প্রাইভেট পড়া শেষ করে স্কুলের গেইটে দাঁড়িয়ে ছিল। কোন কিছু বুঝে উঠার পূর্বে আকস্মিকভাবে হোসাইনকে পিছন থেকে এসে চাপা দেয়া পাওয়ার ট্রাক্টর। মুহুর্তেই হোসাইনের চিৎকারে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠে। কিন্তু ঘাতক ড্রাইভার সবুজ মিয়ার (১৭) কানে হোসাইনের চিৎকার পৌঁছেনি। বরং দ্বিতীয়বার পুরোপুরিভাবে ট্রাক্টরটি হোসাইনের উপর তুলে দেয় বাকবন্ধী লাইন্সেসবিহীন চালক সবুজ মিয়া।
হোসাইনের বুকফাঁটা আর্তচিৎকার শুনে পথচারিরা ট্রাক্টরটি আটক করে। সেই সাথে স্থানীয় রূপসদী মাহবুবুর রহমান মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় থাকায় হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসগণ জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় পাঠানো সিদ্ধান্ত জানায়। সেখান থেকে দ্রুত হোসাইনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারগণ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পাঠান। নানাবিধ পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে জানানো হয় হোসাইনের কোমর থেকে নিচের অংশ (ডান পাশ) পুরোপুরি অকেজো হয়ে গেছে। পরে পাঠানো হয় জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালে। ডাক্তারগণ দেখে জানালেন ওকে বাঁচাতে হলে একটা পা কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভাবনা খুবই কম। যেহেতু ওর অনেকগুলো হাড় ভেঙে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় থেকে রগ ছিঁড়ে যায় ও পুরুষ লিঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বর্তমানে ধানমন্ডি ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছে মো. হোসাইন। কিন্তু তার জীবন এখন মারাত্মক হুমকীর মুখে। মৃতে্যুর ঝুঁকি নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছে মো. হোসাইন। তাকে বাঁচাতে প্রতি মুহুর্তে ডাক্তারগণ অক্লান্ত পরিশ্রমের সাথে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন অপারেশনের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এই অবস্থায় পরিবারের আহাজারি কোনভাবে থামছে না।
এদিকে ট্রাক্টরের মালিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার রূপসদী ইউনিয়নের রূপসদী গ্রামের চান্দেরবাড়ির হারুন মিয়ার ছেলে জালাল উদ্দিন। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন জালাল মিয়া নানাবিধ অবৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত। জালাল মিয়ার ট্রাক্টরটির ড্রাইভার ছিলেন সবুজ মিয়া। তিনি একজন বাকপ্রতিবন্ধী মানুষ এবং গাড়ি চালানোর জন্য তার কোন সরকারি লাইন্সেস নেই। রূপসদী গ্রামের লেংটাবাড়ির আবদুল হালিমের ছেলে সবুজ মিয়া সেই ছোটবেলা থেকে বাকপ্রতিবন্ধী এমনটাই জানিয়েছে এলাকার লোকজন। আর সেই কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, একজন বাকপ্রতিবন্ধী এবং লাইন্সেবিহীন ব্যক্তি কিভাবে একটি ট্রাক্টর চালাতে পারে? তাছাড়া ঘটনার দিন ট্রাক্টরে কোন হেল্পপারও ছিল না বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
দূর্ঘটনার শিকার হোসাইন মিয়ার পরিবার ও এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জানান, জালাল মিয়া একজন অবৈধ ব্যবসায়ী।
এদিকে হোসাইনের চিকিৎসার খরচ বহন করতে হিমসিম খাচ্ছে তার পরিবার। তাদের চোখের জলে আকাশ ভারি হয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রূপসদী গ্রামের জনৈক ব্যক্তি জানান, একসময়ের হতদরিদ্র জালাল মিয়া নানাভাবে অবৈধ ব্যবসা করে টাকা পয়সার মালিক হয়েছে। সে ধরাকে সরাজ্ঞান করে। ইতোপূর্বেও তার ট্রাক্টর দ্বারা বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিল।
রূপসদী মাহবুবুর রহমান মেমোরিয়াল হাসপাতালের জনৈক ডাক্তার জানান, হোসাইনের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। একমাত্র আল্লাহপাকই এখন ভরসা।
রূপসদী জামিদা মনসুর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সজিব মিয়া জানান, মো. হোসাইন একজন মেধাবী ছাত্র। সে রূপসদী জামিদা মনসুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশুনা করতো। তার উপর এমন ঝড় বইয়ে যাবে তা কল্পনাও করতে পারিনি।

 

Side banner