রমজানে দীর্ঘ সময় খাবার ও পানি খাওয়া থেকে বিরত থাকার ফলে মুখে লালা উৎপাদন কমে যায়। লালা মুখের ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং দাঁত ও মাড়ির সুস্থতা বজায় রাখে। যখন লালা কমে যায়, তখন মুখে ব্যাকটেরিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যা মুখের দুর্গন্ধ ও দাঁতের ক্ষয়ের প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এছাড়া দীর্ঘক্ষণ শুষ্ক মুখ থাকার ফলে দাঁতের এনামেলও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা ক্যাভিটি সৃষ্টি করে। পাশাপাশি, সেহেরি ও ইফতারে অতিরিক্ত মিষ্টি বা চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলেও দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রোজায় মুখের সুস্থতা বজায় রাখার উপায়
রমজান মাসে মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে কিছু অভ্যাস অনুসরণ করা জরুরি। প্রতিদিন সেহেরি ও ইফতারের সময় বেশি পরিমাণে পানি গ্রহণ করতে হবে, যাতে শরীর আর্দ্র থাকে এবং মুখ শুষ্ক না হয়। মুখের শুষ্কতা ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
প্রতিদিন সেহরি ও ইফতারের পর সময় দাঁত ব্রাশ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয় অনেকটাই প্রতিরোধ হয়।
অনেক সময় শুধুমাত্র ব্রাশ করলেই মুখের সব অংশ পরিষ্কার হয় না, এজন্য অন্তত একবার ফ্লস ও মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত। তবে মাউথওয়াশ ব্যবহার করলে নিশ্চিত করতে হবে যে তা অ্যালকোহল-মুক্ত হয়।
রোজায় মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধে কিছু পরামর্শ অনুসরণ করা যেতে পারে।
শরীরে পানির ঘাটতি হলে মুখ শুষ্ক হয়ে যায় এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। তাই সেহেরি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে।
পেঁয়াজ ও রসুন মুখের দুর্গন্ধের অন্যতম কারণ হতে পারে। রোজার সময় এগুলো আলাদা করে খাওয়া যাবে না। রান্নার সময়ে যতটুকু ব্যবহার করা হয় শুধুমাত্র ততটুকুই খেতে হবে।
চিনি ও ক্যাফিন মুখের ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায়। শুষ্কতাও তৈরি করে। যা দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে। অনেক সময় জিহ্বার ওপর ব্যাক্টেরিয়া জমে গিয়েও দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। তাই ব্রাশের পাশাপাশি জিহ্বা পরিষ্কার করাও একই ভাবে জরুরি।
কিছু পরামর্শ
রমজানে দাঁতের সমস্যা এড়ানোর জন্য কিছু পরামর্শ মেনে চলা উপকারী।
ইফতারে অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার গ্রহণ করলে দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। তাই হালকা ও অল্প পরিমাণে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার পর ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নেওয়া উচিত। চর্বিযুক্ত ও ভাজা খাবার দাঁতে আটকে গিয়ে ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই এ ধরনের খাবার কম খাওয়াই ভালো। রোজার আগে বা পরে একজন দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। দাঁতের কোনো সমস্যা থাকলে আগে থেকেই চিকিৎসা করানো ভালো।
রোজায় অনেকেই ব্রাশ করতে ভুলে যান বা অলসতা করেন। এতে মুখের ব্যাক্টেরিয়া বৃদ্ধি পায় এবং দাঁতের সমস্যা দেখা দেয়। তাই নিয়মিত ব্রাশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইফতারে পানি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে যেমন শসা, আপেল এবং অন্যান্য মৌসুমি ফল। দই সেহরিতে খাওয়া উচিত।
চা কফি কম খেতে হবে কারণ ক্যাফিন, মূত্রবর্ধক, যা শরীর থেকে পানি বের করে দেয়। এছাড়া ইফতারে অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এটি ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়।
অবশ্য ইফতার ও সেহরিতে ব্রাশ করার পর কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলি করতে হবে। এতে মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :