স্বাস্থ্যসেবা খাতে ব্যয় কমানোর জন্য প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সাইদুর রহমান।
তিনি বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিবর্তে যদি আমরা স্বাস্থ্যসেবা খাতের প্রথম স্তর হিসেবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি তাহলে শুধু ব্যয় কমবে না, জাতির স্বাস্থ্যও সুসংহত হবে এবং আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাবে।
রবিবার (৩১ আগস্ট) রাতে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশস্থ আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টারের (এডব্লিউসি) আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্য সচিব।
মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, আমরা যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে বিনিয়োগ করি, তা শুধু আজকের জন্য নয়, দীর্ঘমেয়াদে দেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। মানুষ যদি সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করায়, সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে এবং জীবনযাপনে সতর্ক থাকে, তবে ব্যয়বহুল চিকিৎসা সেবার প্রয়োজনীয়তা অনেকাংশে কমে যাবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে। যদি জনগণ নিজেদের স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন হয় এবং প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার দিকে মনোনিবেশ করে, তবে শুধু স্বাস্থ্য খাতে নয়, পুরো দেশের অর্থনীতিতেও তা একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিলে যেসব রোগের চিকিৎসা গ্রহণে মানুষ ব্যয় করে, সেগুলোর পূর্বাভাস করা সম্ভব হবে। যার ফলে শুধু চিকিৎসার খরচ কমবে না, মানুষের কর্মক্ষমতা ও স্বাস্থ্যও উন্নত হবে।
এডব্লিউসির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মজিবুল হক সেমিনারে তার ১১ বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশের খাদ্যাভ্যাসে পোল্ট্রি ডিম, পোল্ট্রি দুধ ও মাংস খাওয়ার ফলে শরীরে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক প্রবাহিত হচ্ছে, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়া মারা যাচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি করছে।
অধ্যাপক ড. মজিবুল হক দাবি করেন, এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার এতটাই বেড়ে গেছে যে, খাদ্যপণ্যগুলোতে এটির পরিমাণ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত চলে গেছে। এই অ্যান্টিবায়োটিক আমরা প্রতিদিন না চাইলেও গ্রহণ করছি। এর ফলে পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়া মারা যায়, ফলে শারীরিক ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
এডব্লিউসির চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে আয়োজিত সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন বিশিষ্ট পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবী ব্যক্তিরা। সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য সেন্টার অব ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিনের কনসালটেন্ট অধ্যাপক ড. মজিবুল হক মূল আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি নিয়ে দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।
এছাড়াও সেমিনারে আমেরিকান ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) দিক থেকে খাদ্য ও চিকিৎসার সংমিশ্রণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়, আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি, তাতে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ আমাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সৃষ্টি করতে পারে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয় এবং অধ্যাপক ড. মজিবুল হকের নতুন গ্রন্থ ‘সুস্থতার মূলমন্ত্র’ এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক নিউজ পোর্টাল হেলথ২৪ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে ড. মজিবুল হক বলেন, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য আমাদের আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি সাধারণ মানুষ সুস্থ জীবনযাপন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলে, তবে দেশব্যাপী দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :