সময়টা তখন ১৯৬৮ সাল। সদ্য রংপুর কলেজ ছাত্রলীগ শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদ দপ্তর সম্পাদক এর দ্বায়িত্ব এসে পরে মজাহারুল হক প্রধানের উপর। তিনি তখন এইচএসসির ছাত্র।
সময় ছিলো ‘বঙ্গবন্ধু’র দিকে তাঁকিয়ে, একই সাথে তাঁকিয়ে ছিলো পুরো বাঙালি জাতি।
তখন ছিলো ছাত্রদের হাতে লিখা পোষ্টার-লিফলেট বিতরণ এর সময়।
এর মাঝে ১৯৬৯ এ বঙ্গবন্ধুর পলাশবাড়ী সফর। তিনি খুব কাছ থেকে দেখতে পান বঙ্গবন্ধুকে। পারাপারের সময় সুযোগও হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর স্নেহের ছোঁয়া পাবার। সেদিন বঙ্গবন্ধু সেই ছেলেটির কাঁধে হাত রেখেছিলেন, এ যেন তার স্মৃতিতে তার ছাত্র রাজনীতির স্বীকৃতিস্বরূপ এক অনন্য অনুপ্রেরণা। সেই অনুপ্রেরণাই পৌঁছে দেয় তাকে বৃহত্তর রংপুর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যন্ত। কিন্তু তখনকার সময়ে ছাত্ররাজনীতি ছিল খুবই কষ্টের। অকারণে জেল-জুলুম সহ সামাজিকভাবে হেয় করা ছিল এক নিয়মিত ঘটনা। এরই সূত্র ধরে তাকে যেতে হয় দু'বার জেলে। শেষ করা হয় না আর ছাত্র জীবন।
তখন তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের ছাত্র। এ যেন বঙ্গবন্ধুর পথে তারই কর্মীর পদচিহ্ন অনুসরণ করা। এছাড়াও ভোররাতে পোস্টার লাগাতে গিয়ে পুলিশের কাছে তাড়া কিংবা কিছু সময় আটক রাখা, পুলিশ দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার নজির তার জীবনে অহরহ হয়েছে।
১৯৭৪ সালে আবার দেখা হয় বঙ্গবন্ধুর সাথে। এবার কিছুটা অন্যভাবে। সভা কিংবা সমাবেশে নয়। তখন তিনি আহত এনএসএফের হামলায়। তার পায়ে আজও রয়েছে সে চিহ্ন। বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক পিজি হাসপাতালে (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এবং সে সময়ে ৭শত টাকা হাতে ধরিয়ে দেন।
তারপর বাঙালি জাতির জীবনে নেমে আসে কালো রাত ১৫ আগস্ট ১৯৭৫। ৭৫ পরবর্তী সময়ে যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নাম মুখে নেওয়া ছিল এক অপরাধ। সে সময়ে গোপনে গোপনে তিনি চালিয়ে যান পঞ্চগড় জেলা ছাত্রলীগকে সংগঠিত করার অভিযান। তারই স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দায়িত্ব পান পঞ্চগড় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে ৭৬ এ।
এক দোকানকে বন্ধ রেখে তার ভিতরে গোপনে আয়োজন করেন বঙ্গবন্ধুসহ '৭৫ এ নিহত সকলের আত্মা মাগফিরাতের দোয়া।
তারা ছিলেন ৬/৭ জন। কিন্তু বিপাক বাঁধে ইমামকে নিয়ে। কিছুতেই ইমাম বঙ্গবন্ধুর নাম নিবে না। কিন্তু কিছুটা চাপ প্রয়োগ করেই ইমামকে দিয়ে ইমাম সহ সেই ৬/৭ জন দোয়া শেষ করে। '৮০ এর শেষ পর্যন্ত তিনি স্ব-গৌরবে চালিয়ে যান তাঁর ছাত্র রাজনীতি।
ধন্য ধন্য তুমি হে ছাত্রনেতা।
আর তাইতো তিনি আজও ছাত্রলীগের কথা ভাবেন, ছাত্রলীগের খোঁজ রাখেন। পরম স্নেহে আগলে রেখেছেন ছাত্রলীগকে। তৃণমূল আওয়ামীলীগ সুসংগঠিত করার কারণে হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নৌকা মার্কা নিয়ে বিজয়ী হয়ে দীর্ঘদিনের হারানো আসন পুনরুদ্ধার করে দলকে পঞ্চগড় ১ আসন উপহার দেন। ৫ বছর সাধারণ মানুষের সেবা করার সুযোগে দলকে আরো শক্তিশালী করেন। তারই ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালে আবার তিনিই নৌকা পান। তবে জোটের স্বার্থে তখন জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। তারপর তিনি দলকে সুসংগঠিত করে তৃণমূল আওয়ামী লীগ শক্তিশালী করেন। এরই পুরস্কার স্বরূপ ২০১৮ সালে নৌকার টিকিট পেয়ে ২য় বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন মজাহারুল হক প্রধান। তার হাত ধরে পঞ্চগড় ১ আসনে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে, রাস্তা ঘাট, স্কুল/ কলেজ এর উন্নয়ন করে এলাকায় বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
পঞ্চগড় ১ আসনের তৃণমূল আওয়ামী লীগ এখনো তার নেতৃত্বে শক্তিশালী, একমাত্র মজাহারুল হক প্রধানই এই আসনটি ধরে রাখতে পারবে তৃণমূল আওয়ামী লীগ তাই মনে করে। নচেৎ এই আসনটি হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আপনার মতামত লিখুন :