ভারতের প্রবীণ ইসলামী শিক্ষাবিদ ও জামিয়া ইসলামিয়া ইশাতুল উলুম আক্কালকুয়ার প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক মাওলানা গোলাম মোহাম্মদ ভাস্তানভি ইন্তেকাল করেছেন। রবিবার (৪ মে) বিকেলে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। সোমবার (৫ মে) নন্দুরবার জেলার আক্কালকুওয়ায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে জামিয়া ইসলামিয়া ইশাতুল উলুমের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মাওলানা গোলাম মোহাম্মদ ভাস্তানভি (রহ.) ভারতের ভারতের একজন প্রভাবশালী ও দূরদর্শী ইসলামী শিক্ষাবিদ। তিনি ঐতিহ্যবাহী ইসলামী শিক্ষা কাঠামোর মধ্যে আধুনিক শিক্ষার একীভূত করার অন্যতম পথিকৃৎ। তিনি কেবল মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন করেই দমে যাননি; বরং স্কুল-কলেজের পাশাপাশি মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, পলিটেকনিক, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
মাওলানা ভাস্তানভি মহারাষ্ট্রের আক্কালকুয়ায় জামিয়া ইসলামিয়া ইশাতুল উলুম প্রতিষ্ঠাতা করেছেন এবং আমৃত্যু এর রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি ভারতের ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার অন্যতম প্রভাবশালী কেন্দ্র হয়ে ওঠে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ ভারতের মেডিক্যাল কাউন্সিল (এমসিআই) স্বীকৃত একটি প্রতিষ্ঠান যা ভারতের প্রথম সংখ্যালঘু-পরিচালিত মেডিক্যাল কলেজ।
মাওলানা গোলাম মোহাম্মদ ভাস্তানভির ১৯৫০ সালের ১ জুন গুজরাটের সুরাট জেলার কোসাদিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ১৯৫২ সালে মাঝামাঝি সময়ে ভাস্তানে চলে আসে। এরপর থেকে তিনি ”ভাস্তানভি” নামে পরিচিতি লাভ করেন। মাওলানা ভাস্তানভি কোসাদির কুওয়াতুল ইসলাম মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। সেখানে তিনি অল্প বয়সেই পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে তিনি বরোদার শামসুল উলুম মাদরাসায় পড়াশোনা করেন এবং ১৯৬৪ সালে গুজরাটের তুর্কেসারের মাদরাসা ফালাহ-ই-দারাইনেও শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে মাওলানা ভাস্তানভী উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরের মাজাহির উলুমে ভর্তি হন।
পড়াশোনা শেষ করে ১৯৭৩ সালে তিনি ভারুচের দারুল উলুম কাঁথারিয়ায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি মহারাষ্ট্রের নন্দুরবার জেলার আক্কালকুওয়ায় জামিয়া ইসলামিয়া ইশাতুল উলুম প্রতিষ্ঠা করেন এবং আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠানের রেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাত্র ছয়জন ছাত্র ও একজন শিক্ষক দিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও সময়ের পরিক্রমায় এই প্রতিষ্ঠানে এখন এই প্রতিষ্ঠানে ১৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। পরে সেখানে পলিটেকনিক, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং কলেজ অব এডুকেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ ছাড়া একই শহরে একটি ইউনানি মেডিক্যাল কলেজও প্রতিষ্ঠা করা হয়।
জামিয়া ইসলামিয়া ইশাতুল উলুম আক্কালকুয়া একটি ছোট মাদরাসা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। পরবর্তীতে তা একটি বিশাল ক্যাম্পাস নিয়ে বিস্তৃতি লাভ করে এবং ধীরে ধীরে পুরো ভারতজুড়ে এর শাখা-প্রশাখা খোলা হয়। এই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, স্নাতক (বি.এড.) এবং ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (ডি.এড.) কলেজ ও বৃত্তিমূলক প্রোগ্রাম রয়েছে। তা ছাড়া এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মেসি ও এমসিআই স্বীকৃত একটি মেডিক্যাল কলেজের মতো পেশাদার কোর্সও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তথ্যপ্রযুক্তি, অফিস ব্যবস্থাপনা, সেলাই ও সফটওয়্যাসহ বিভিন্ন দক্ষতামূলক বিষয়ে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এই মিশ্র শিক্ষা মডেলের লক্ষ্য হলো, ধর্মীয় ও সমসাময়িক সামাজিক ভূমিকার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করা।
মাওলানা ভাস্তানভী ২০১১ সালে কয়েক মাস দারুল উলুম দেওবন্দের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :