সময়টা বুঝি ভারতেরই! রোহিত-কোহলিদের হাত ধরে ভারতীয় পুরুষ দল ১৩ বছরের শিরোপাখরা কাটিয়েছে ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। পরের বছর তারাই ফের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জেতে। এবার নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবার শিরোপা জিতে ইতিহাস গড়ল হারমনপ্রিত কৌরের দল। শেফালি-দীপ্তির দুর্দান্ত অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫২ রানে হারিয়েছে ভারত।
ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা দুই দলের সামনেই রবিবার প্রথমবার নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়ার সুযোগ ছিল। এর আগে কেউই শিরোপার স্বাদ পায়নি। মিতালি রাজের নেতৃত্বে ভারত দু’বার রানার্সআপ হলেও, প্রোটিয়া মেয়েরা এবারই প্রথম ওয়ানডের ফাইনালে ওঠে। এর আগে দু’বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেললেও জেতা হয়নি উলভার্ট-ডি ক্লার্কদের। আজ ফাইনালের মহারণে লরা সেঞ্চুরি করলেও হার এড়াতে পারেননি। তিন ফাইনালে হার যেন সেই চোকার্স তকমাই পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিলো।
বৃষ্টির বাধায় নাভি মুম্বাইয়ে আজ বিশ্বকাপের ফাইনাল গড়ায় কয়েক ঘণ্টা দেরিতে। এরপর আগে ব্যাট করতে নেমে ভারত নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেটে ২৯৮ রানের বড় পুঁজি পায়। যা মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান। প্রোটিয়ারা এর আগে ওয়ানডেতে কখনও ২৭৫ রানের বেশি তাড়ায় জেতেনি। ফলে তাদের আজ ইতিহাসই গড়তে হতো। কিন্তু মিডল অর্ডার ও টেল-এন্ডারের ব্যর্থতায় তারা ২৪৬ রানেই গুটিয়ে গেছে। ভেস্তে গেছে সেমিফাইনালের পর ফাইনালেও লরা উলভার্টের সেঞ্চুরি (১০১)।
ভারতের ইতিহাস গড়ার পথে যেন ম্যাজিক হয়ে এসেছিলেন শেফালি ভার্মা। প্রথমে তার বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি, প্রতিকা রাওয়ালের ইনজুরি সেমিফাইনালে দিয়ে তার জন্য দুয়ার খুলে দেয়। ফাইনালে তার ব্যাটেই সর্বোচ্চ ৮৭ রানের ইনিংস পেয়েছে ভারত। এরপর বল হাতে ব্রেকথ্রুও এসেছে শেফালির ঘূর্ণিতে। অথচ এর আগে ৩১ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে মাত্র ৫ বার বল হাতে নিয়ে ১ উইকেট শিকার করেছিলেন। আজ ফাইনালের মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচে নিলেন ২ উইকেট।
ভারতের ফাইনাল জয়ের অন্যতম নায়ক দীপ্তি শর্মা। নারী বিশ্বকাপে তিনিই প্রথম কোনো ক্রিকেটার হিসেবে ন্যূনতম ২০০ রান এবং ১৫ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন। প্রোটিয়াদের শক্ত ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে দেওয়ার পথে ৫ উইকেট শিকার করেন এই ডানহাতি স্পিনার। এর আগে ব্যাট হাতে দীপ্তি করেছেন ৫৮ রান। যা ভারতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান। এ ছাড়া স্মৃতি মান্দানা ৪৫ ও রিচা ঘোষের ৩৪ রানের ক্যামিওতে ভারত ২৯৮ রানের বড় পুঁজি পায়। আফ্রিকার পক্ষে ৩ উইকেট নেন আয়াবোঙ্গা খাকা।
লক্ষ্য তাড়ায় ভালো শুরুই পেয়েছিল উলভার্টের দল। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাজমিন ব্রিটস রানআউট হলে তাদের ৫১ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে। এরপর সুনে লুসের ২৫ এবং এনেরি ডার্কসেনের ৩৫ রান ছাড়া আর কেউই উলভার্টকে সঙ্গ দিতে পারেননি। সতীর্থদের যাওয়া-আসার একা ত্রাতা হয়ে উঠছিলেন প্রোটিয়া দলপতি। দলীয় ২২০ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে উলভার্টের বিদায়ে ভারতের জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যায়। তবে তাদের শঙ্কা ছিল নাদিনে ডি ক্লার্ককে নিয়ে। কারণ লিগপর্বে ভারতের জয় কেড়ে নিয়েছিলেন এই বিধ্বংসী ব্যাটার। আজ আর পারলেন না। আউট হলেন ১৮ রানে।
উলভার্ট ৯৮ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১০১ রান করেছেন। নারী ও পুরুষদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ মিলিয়ে তিনি মাত্র দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে সেমিফাইনাল ও ফাইনালে সেঞ্চুরি করলেন। তার আগে কেবল অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি ম্যাজিক ফিগার পূর্ণ করেছিলেন ২০২২ আসরে সেমি এবং ফাইনালে। ওয়ানডে বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অষ্টম সেঞ্চুরি এবং এক আসরে সর্বোচ্চ ৫৭১ রান হয়তো উলভার্টকে কিছুটা সান্ত্বনা দেবে। কিন্তু কমাতে পারবে না প্রথম কোনো বিশ্বকাপ না জেতার ক্ষত!








































আপনার মতামত লিখুন :