প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে কাশফুল মানেই ভালো লাগার অনুভূতি। শরৎ এলেই তাঁরা ছুটে যান কাশবনে। কাটান অবসর সময়। কাশফুল সাধারণত চরাঞ্চল বা খালবিলের ধারে জন্মে। গাইবান্ধার অনেকে কাশফুল পরিচর্যা করে কাশিয়া বিক্রি করেন। এতে করে অনেকর সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দার পাড়া চর ব্রহ্মপুত্র নদের বালাসীঘাট ও বিভিন্ন চরে প্রাকৃতিকভাবে কাশবন তৈরি হয়েছে। কোনো খরচ ছাড়াই ১ বিঘা জমির কাশবন বিক্রি করে ১৪-১৫ হাজার টাকা আয় করছেন কৃষকেরা। অনাবাদি বালুচরে বন্যার পরে কাশগাছ জন্মে। ৫-৬ মাসের মধ্যে গাছগুলো বড় হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়। কাশিয়া বিক্রি করে অনেক কৃষকের পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে। কাশবন দেখতে আসা শাহিন ও নাজমা আক্তার দম্পতি বলেন, কুয়াকাটা বা কক্সবাজার যাওয়ার জন্য যে ব্যয় হয় তা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য বহন করা খুবই কষ্টকর। তাই আমরা ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে ওঠা ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে আসি। বিশেষ করে শরৎকালে এই দ্বীপচরগুলোতে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা কাশবন আর কাশফুলগুলো নয়নাভিরাম। শিশু থেকে বৃদ্ধ বয়সের মানুষ—সবাই কাশফুল পছন্দ করেন।
কামারজানি ইউনিয়ন মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমার দুই বিঘা জমিতে কাশবন আছে। এগুলো পরিচর্যা করা হয়। পাঁচ-ছয় মাস পর কাশগাছের ফুল পড়ে গেলে গাছ কেটে আঁটি বাঁধি। প্রতি হাজার আঁটি ৪ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।
ব্রহ্মপুত্র নদের ফুলছিড়ি চর এলাকার সোহাগ বলেন, ‘আমার ৩ একর জমির কাশিয়া পরিচর্যা করা হয়েছে। প্রতিবছর বন্যার পর আপনা-আপনি জমিতে জন্ম নেয় কাশ। এক থেকে দেড় মাস পর আমার জমির কাশিয়া বিক্রি করতে পারব। আশা করছি, এই টাকা দিয়েই ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও সংসারের খরচ চালাতে পারব।’
‘ঋতুপরিক্রমায় এখন শরৎকাল। শরৎকালে কাশফুল ফোটে। গাইবান্ধায় অনেকগুলো বেশি চরাঞ্চল রয়েছে। এসব চরে এখন কাশফুলের সমারোহ। কাশ দিয়ে গ্রামাঞ্চলে ঘরের ছাউনি, বেড়া নির্মাণ করা হয়। আমাদের পানের বরজেও ব্যবহার হয়।’ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বড়দহ ব্রিজের পাশে প্রতিদিন শতাধিক মানুষ দেখতে আসছে কাঁটাখালী নদীর ধারে দুই ধারের কাশবন দেখতে আসা দর্শনার্থী আনোয়ার হোসেন কে জিজ্ঞেস করলে আনোয়ার হোসেন বলেন ফুল কে না ভালোবাসে। বড়দহ ব্রিজের পাশে রাখাল বুরুজ ইউনিয়ন এর কাটাখালি নদির ধারে কাশবন দেখতে এসেছি। ব্রিজটা যেমন সুন্দর তার পাশের এই কাশ ফুলগুলো দেখতে মনমুগ্ধকর লাগছে। তাই কোথাও না গিয়ে আজ এ কাশ ফুল গুলো দেখতে এসেছি। এখন তো লোক কম মনে হচ্ছে। বিকেল হলে সারিসারি দর্শনার্থী আসে এই কাশফুল দেখার জন্য। সৌন্দর্য দেখার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকে দর্শনার্থীরা। বড়দহ ব্রিজের পাশের মুদি দোকানদার শিহাব বলেন প্রতিদিন কাশফুল দেখতে দর্শনার্থীরা আসেন কাশফুল দেখা শেষে আমার দোকানে এসে চা, বিস্কুট এবং ঠান্ডা কোমল পানি গ্রহণ করেন। কিন্তু সপ্তাহে শুক্রবারে দর্শনার্থী বেশি আসে। শুক্রবারে অনেকের অফিস আদালত বন্ধ থাকে অনেকেই সৌন্দর্য দেখার জন্য এই বড়দহ ব্রিজের কাশবনে আসে। সমস্যা হল অনেক দর্শনার্থী তাদের ছেলেমেয়েকে সাথে নিয়ে আসে। ছোট বাচ্চাগুলো না বুঝে কাশফুল গুলো ছিড়ে ফেলে এতে কাশফুল গুলো অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়।
শিহাব আরো বলেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ছয়ঘরিয়াতেও বিশাল কাশবন আছে নদীর ধারে সেখানেও পর্যটকরা যান দেখতে। সন্ধ্যা হলে শিয়ালের ডাকও শোনা যায় কাশবন থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক সচেতন নারী বলেন অনেকেই সৌন্দর্য দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসেন। কিন্তু আমাদের এলাকার কিছু কতিপয় ছেলে অনেক সময় মোবাইল কেড়ে নেয়, টাকা-পয়সাও ছিনিয়ে নেয়। এগুলো করতে থাকলে দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা কাশবনের সৌন্দর্য দেখা তো দূরের কথা ভুলেও এইদিকে পা বাড়াবে না।
কাশবনের বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার উপজেলা প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার যেসব এলাকায় কাশবন আছে, সেসব এলাকায় পর্যটকদের জন্য সুব্যবস্থা করা হচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জে তেমন দর্শনীয় স্থান না থাকায় পর্যটকরা কাশফুলের সৌন্দর্য দেখতে ছুটছে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক আমরা আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা কার্যকর রাখার চিন্তা করছি। তুলনামূলকভাবে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি গোবিন্দগঞ্জে অনেক ভালো। পর্যটকরা যাতে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সুন্দর ভাবে কাশফুল এর সৌন্দর্য দেখে ভালো ভাবে বাড়ি ফিরতে পারে সে জন্য গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করছে। যাতে পর্যটকরা অবিরাম সৌন্দর্য দেখে নিরাপদে বাসায় ফিরে যেতে পারে।
আপনার মতামত লিখুন :