Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
ড্রোন দিয়ে নজরদারি

তফসিল ঘিরে দেশজুড়ে নিরাপত্তা


দৈনিক পরিবার | নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৫, ২০২৩, ০৩:৪২ পিএম তফসিল ঘিরে দেশজুড়ে নিরাপত্তা

তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধিসহ সহিংসতা ঘটতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকে দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে ১৮১ প্লাটুন বিজিবি। এছাড়া জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারদের সতর্ক থাকতে ও জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে।
দেশের সব বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থানে থাকার খবর পাওয়া গেছে। তবে বুধবার দুপুর দেড়টায় এ খবর লেখা পর্যন্ত কোথাও বড় ধরনের কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। আজ সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেন বলেন, তফসিল ঘোষণার সময় থেকে পুলিশের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সারাদেশে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যদি কেউ নাশকতার চেষ্টা চালায়, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার সকালে সরেজমিনে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বাইরে জলকামানসহ আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার কার দেখা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সকাল থেকেই নির্বাচন কমিশন ভবনের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেখানে পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও আনসার সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সড়কে টহল দিচ্ছে র‌্যাব ও বিজিবি। তৎপর আনসার সদস্যরাও। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করছে। রাজনৈতিক কার্যালয় ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ঘিরেও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে এই তফসিল ঘোষণাকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইতবাচকভাবে দেখলেও রাজপথে সরকার পতনের আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ইসি ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। বলেছে হরতালের মতো কর্মসূচি দেওয়ার কথাও। যদিও সরকার পতনের এক দফা দাবিতে পঞ্চম দফায় শুরু হয়েছে বিএনপির ডাকা অবরোধ।
ঢাকা মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তফসিলের পর ঢাকার প্রধান সড়কগুলোর ওপরে ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে নজরদারি করা হবে। একইসঙ্গে ঢাকার ভেতরে এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার বাসগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে আগুন দেওয়া ব্যক্তিদের শনাক্ত করা যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, তফসিল ঘোষণার পর নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নাশকতা ঠেকাতে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করা হবে। আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া। এ জন্য আইনানুগভাবে সবকিছুই করা হবে।
এ বিষয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সংসদ নির্বাচনের তফসিল কেন্দ্র করে কেউ নাশকতার চেষ্টা করছে কিনা- তা শনাক্তে র‌্যাবের গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছে। পাশাপাশি তফসিল ঘোষণার আশপাশের এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সারাদেশেই বিশেষ টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। ওই ভাষণেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলের ঘোষণা হবে। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, এবার নির্বাচনের আগে বেশি সহিংসতা হচ্ছে রাজধানী ঢাকায়। সহিংসতা হচ্ছে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও বগুড়ায়ও।
ডিএমপির তথ্য বলছে, গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় মোট ৬২টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মিরপুর বিভাগে ১৫টি, ওয়ারী বিভাগে ১৩টি, মতিঝিল বিভাগে ১০টি, তেজগাঁও বিভাগে ৮টি, রমনা বিভাগে ৬টি, গুলশানে ৫টি, লালবাগে ৩টি, উত্তরা বিভাগে ২টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া থানা এলাকা হিসেবে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সবচেয়ে বেশি ৯টি গাড়ি পোড়ানো হয়েছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দিনভর ডিএমপি সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ ঢাকার ৫০ থানার ওসিদের নিয়ে বৈঠক করেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মনিটরিং সেলের মামলাগুলো নিয়ে বৈঠক হয়। দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা করা হয়। তবে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনার পুরো সময়টাতেই বিএনপি ও সমমনা বিরোধীদল গুলোর চলমান আন্দোলন, অবরোধ ও তফসিলের পর সম্ভাব্য নাশকতা এবং সহিংসতা কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে থাকা ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিএমপি কমিশনার আইনের মধ্যে থেকে সহিংসতা ঠেকানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কোনও অবস্থাতেই পুলিশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহলে নেতিবাচক প্রচারণা হয়- এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এবং গুলি চালাতে নিষেধ করা হয়েছে। ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গণগ্রেপ্তার না করে সুনির্দিষ্টভাবে নাশকতার সঙ্গে সম্পৃক্তদের গ্রেপ্তারে জোর দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
ডিএমপি সূত্র জানায়, ঢাকায় বাসে আগুন ঠেকানোকে জোর দিয়ে প্রতিটি ঘটনায় সরাসরি জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কশিনার। কোনও অবস্থাতেই যেন চলমান সহিংসতার পরিধি আর না বাড়ে সেজন্য সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি। রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় কেউ যেন গ্রেপ্তার-বাণিজ্যে যুক্ত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেছেন ডিএমপি প্রধান।
সূত্র আরও জানায়, বুধবার তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি অনুযায়ী আরও ফোর্স মোতায়েন করা হতে পারে। এসব ফোর্স রিজার্ভ রাখা হয়েছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় সহিংসতা হতে পারে, সেসব এলাকায় পোশাকধারী পুলিশের টহল জোরদারের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করার নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। এদিকে, পঞ্চম দফায় বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে প্রথম দিন বুধবার নাশকতা এড়াতে সারা দেশে ১৮১ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে বলে বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় ৩৩ প্লাটুন এবং সারা দেশে ১৮১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্তসংখ্যক বিজিবি প্লাটুন স্ট্যান্ডবাই রয়েছে। অবরোধে জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা, নাশকতা ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে কাজ করবে বিজিবি।

Side banner