২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপ সামনে রেখে বিশ্বের ফুটবল মহলে উত্তেজনা তুঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় আয়োজিত হতে যাওয়া এই আসরে প্রথমবারের মতো ৪৮ দল অংশ নেবে। ফুটবলের স্বর্ণালী ট্রফি তুলে নিয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজেদের নাম অঙ্কিত করতে প্রতিটি দলই লড়াই করবে সেরাটা দিয়ে। অনেক দলই ইতোমধ্যে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়ে গেছে, তবে শিরোপা জয়ের বাস্তব সম্ভাবনা রয়েছে কেবল কয়েকটি দেশের হাতেই।
স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড (এসআই) প্রকাশ করেছে ২০২৬ বিশ্বকাপের সেরা ১০ র্যাঙ্কিং, যেখানে সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়নদের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।
১০. ইতালি
চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালি শেষ দুই বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি, যদিও মাঝখানে তারা জিতেছে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। এই অনিশ্চয়তাই হয়ে উঠেছে তাদের সবচেয়ে বড় বাধা। লুসিয়ানো স্পাল্লেত্তিকে বরখাস্ত করে এখন দায়িত্বে জেনারো গাত্তুসো। কোচ হিসেবে খুব উজ্জ্বল না হলেও তার হাতে রয়েছে প্রতিভায় ভরপুর এক দল। নরওয়ের পিছনে থেকে শেষ করায় তাদের এখন প্লে-অফ খেলতে হবে। যদি তারা শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করে তারা শিরোপার দাবিদার শীর্ষ দলগুলোর একটি হবে।
৯. উরুগুয়ে
দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে ১৯৫০ সালের পর আর ফাইনালে যেতে পারেনি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ সালে তারা চতুর্থ হয়েছিল। মার্সেলো বিয়েলসার অধীনে উরুগুয়ে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই করেছে দুর্দান্তভাবে। এই পথে তারা হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলকে। তাই তাদেরকে এই বিশ্বকাপে ডার্ক হর্স বলাই যায়। তৃতীয় শিরোপা জিততে হলে বড় দলগুলোকে হারানোর চ্যালেঞ্জ নিতে হবে, আর সেই সামর্থ্য তাদের আছে।
৮. নেদারল্যান্ডস
তিনবার ফাইনাল খেলেও কখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেনি নেদারল্যান্ডস। তবে বিশ্বমানের তারকায় ভরপুর তাদের স্কোয়াড সবসময়ই সম্ভাবনা রাখে। সমস্যা হচ্ছে রোনাল্ড কোম্যানের অধীনে দলটি এখনো ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেনি। রক্ষণে দুর্বলতা এবং একটি মানসম্পন্ন নাম্বার নাইন-এর অভাব স্পষ্ট। তবু ইউরো ২০২৪–এর সেমিফাইনালে ওঠা তাদের জন্য আশার খবর।
৭. জার্মানি
২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি আর আগের মতো ভয়ংকর নেই। ২০১৮ ও ২০২২ বিশ্বকাপে তারা গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় এবং ইউরো ২০২৪ এ কোয়ার্টার ফাইনালে হারে। জুলিয়ান নাগেলসমান দলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে লড়ছেন। খেলোয়াড়দের মান ভালো হলেও রক্ষণভাগ ও গোলবারে প্রশ্নচিহ্ন রয়ে গেছে।
৬. ব্রাজিল
পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল যে কোনো বিশ্বকাপেই ফেভারিট, তবে তাদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স হতাশাজনক। ২০০২ সালের পর আর কোনো ফাইনাল খেলেনি তারা এবং শেষ দুইবারই কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়ে। যদি কার্লো আনচেলোত্তির আগমনে নতুন করে আশা জেগেছে দলে, বিশেষ করে তার নকআউট ম্যাচের অভিজ্ঞতা বিবেচনায়। আক্রমণভাগে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রোদ্রিগো, এস্তেভাও, রাফিনিয়াসহ তারুণ্যের ঝলক রয়েছে।
৫. পর্তুগাল
কখনো বিশ্বকাপ না জিতলেও ইউরোপীয় মঞ্চে পর্তুগালের সাফল্য বিস্ময়কর। ইউরো ২০১৬ এবং দুইবারের নেশনস লিগ জিতেছে তারা। এবারে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো শেষবারের মতো বিশ্বকাপে খেলবেন, আর তার চারপাশে রয়েছে দুর্দান্ত স্কোয়াড, ব্রুনো ফার্নান্দেস, ভিতিনিয়া, হোয়াও নেভেস, রাফায়েল লেয়াওদের মতো তারকা। তবে কোচ রবার্তো মার্টিনেজের রক্ষণাত্মক মনোভাব সম্ভাবনাকে সীমিত করতে পারে।
৪. ইংল্যান্ড
১৯৬৬ সালের পর আর বড় শিরোপা জিততে না পারলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইংল্যান্ড ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে, বিশ্বকাপে কাপে চতুর্থ স্থান, এবং ইউরো ২০২০ ও ২০২৪ এ ফাইনাল। নতুন কোচ থমাস টুখেল দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ইংল্যান্ড দুর্দান্ত ফর্মে আছে। বাছাই পর্বে আট ম্যাচে একটিও গোল হজম করেনি তারা। সম্ভবত এটাই তাদের বড় সুযোগ।
৩. ফ্রান্স
২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের দলে সম্ভবত আন্তর্জাতিক ফুটবলের সেরা স্কোয়াডই রয়েছে। তবে দিদিয়ের দেশম সাম্প্রতিক তিনটি বড় টুর্নামেন্টে শিরোপা জিততে পারেননি। তারপরও ফ্রান্স সবসময়ই টুর্নামেন্টের শেষ পর্যায়ে থাকে। এমবাপ্পে, মাইকেল ওলিসের মতো তারকারা এবারও তাদের এগিয়ে নেবে।
২. স্পেন
ইউরো ২০২৪ এর চ্যাম্পিয়ন স্পেন নতুন করে জেগে উঠেছে লুইস দে লা ফুয়েন্তের অধীনে। নেশনস লিগের পর ইউরো জয় প্রমাণ করেছে যে তারা আবারও শীর্ষে ওঠার পথে। শেষ তিন বিশ্বকাপে শেষ-১৬ এর বাইরে যেতে না পারলেও এবারের দলটি ভিন্ন। দুর্দান্ত রক্ষণ, টেকনিক্যাল মিডফিল্ড আর লামিনে ইয়ামাল–নিকো উইলিয়ামসের মতো তেজি উইঙ্গার এবার তাদের আশা দেখাচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের।
১. আর্জেন্টিনা
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে এড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব। ৩৬ বছরের অপেক্ষা শেষে কাতারে শিরোপা জিতে লিওনেল মেসি তার স্বপ্ন পূরণ করেছেন। ২০২৬ বিশ্বকাপ হতে পারে মেসির শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, আর শিরোপা জিততে পারলে সেটি হবে এক মহাকাব্যিক বিদায়। কোচ লিওনেল স্কালোনি আর্জেন্টিনাকে আধিপত্যের চূড়ায় নিয়ে গেছেন, শেষ দুই কোপা আমেরিকাসহ বিশ্বকাপও তার হাত ধরে এসেছে। সব ঠিক থাকলে আগামী বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাই হবে প্রথম সারির ফেভারিট।








































আপনার মতামত লিখুন :