এ সমাজে কিছু মানুষ নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি ও ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন সমাজকে আলোকিত করার জন্য। যেখানেই তার হাত প্রসারিত করেন, সেখানেই আলো পড়ে। তার কর্মস্পর্শে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে ব্যক্তি ও সমাজ। সেরকমই এক আলোর সারথি প্রফেসর আবদুস ছালাম।
তিনি একজন সজ্জন ও মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ। শোভন ও আকর্ষণীয় তার ব্যক্তিমাধুর্য ও পেশাগত কর্মযজ্ঞ। তাঁর সৌজন্যবোধ প্রখর ও অনুকরণ যোগ্য।
প্রফেসর আবদুস ছালামের জন্ম ১৯৬৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর বাবার কর্মস্থল রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানা-সদরে। তাঁর বাবা আবুল হাসেম ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা। প্রফেসর আব্দুস ছালামের পৈতৃকবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ভেলানগর গ্রামে। বাবা সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর সপরিবারে গ্রামের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগ থেকে অনার্সসহ মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জ ইস্পাহানি ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। একই কলেজে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করার পর তিনি ১০% কোটায় সাধারণ শিক্ষা বিসিএস ক্যাডার হন। এরপর তিনি চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভূগোল বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন। সেখান থেকে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজে ২০০৮ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০১০ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। কিছুদিন তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান ছিলেন। পরবর্তীকালে প্রেষণে তিনি কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে উপ-পরিচালক পদে যোগদান করেন। ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল, তিনি প্রফেসর পদে পদোন্নতি পান। তারপর তিনি ২০১৪ সালে উক্ত প্রতিষ্ঠানে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হন। ২০১৯ সালের ১১জুন থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ পর্যন্ত তিনি চেয়ারম্যান পদে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে কর্মজীবন থেকে অবসরে যান।
দুবছর মডেল কলেজের প্রিন্সিপালসহ কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে সুনামের সঙ্গে কর্মরত ছিলেন প্রায় ১৪ বছর। তিনি সৎ ও যোগ্য ছিলেন বলেই একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে একটানা এতো বছর দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পেশাকে প্রাধান্য দিয়ে খাঁটি দেশপ্রেমিকের পরিচয় দিয়েছেন। অধ্যাপনাকালে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থা ও ভূমি ব্যবহার বিষয়ে গবেষণা করেন। তাঁর রচিত ভূগোল বিষয়ে উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি পর্যায়ে বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি ৩৫টি সুভ্যিনিয়রসহ ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেছেন। তিনি দেশ-বিদেশে প্রায় ৫০টি সেমিনার ও ওয়ার্কসপে অংশগ্রহণ করেছেন গৌরবের সঙ্গে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বৃটিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও এফসি-এর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তিনি একজন সংগীতপ্রিয় ও ভ্রমণপিপাসু মানুষ, বিশ্বের বহু দেশ তিনি ভ্রমণ করেছেন। পরিচ্ছন্ন ও অন্তর্মুখি স্বভাবের মানুষ তিনি। পরচর্চা ও পরনিন্দা স্বভাব তাঁর চরিত্রে সর্বদা অনুপস্থিত। তার চরিত্র মাধুর্য অনুকরণ যোগ্য। নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা করেন তিনি সবসময়। ফলে কর্মক্ষেত্রসহ সর্বমহলে তিনি নন্দিত ও সমাদৃত। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুন্দর ব্যবহার ও মানবিক গুণাবলি উপহার দিয়ে তিনি পেশাগত জীবনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর অধীনে নিম্নপদস্থ কর্মচারী এবং ড্রাইভারের সঙ্গেও ছিল তার মধুর সম্পর্ক। তার দৃষ্টিতে ওরাও সহকর্মী। তিনি ওদের সাথে কখনো উঁচুস্বরে কথা বলেননি, রেগে যাননি, করেন নি খারাপ আচরণ। এই নির্লোভ সাদা মনের মানুষটি সারাটি জীবন মানুষকে দিয়ে এসেছেন সুশিক্ষা সৌজন্যবোধ ও ভালোবাসা। শুধু তাই নয়, রাজধানীতে তাঁর নেই কোনো বাড়ি-গাড়ি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আসা-যাওয়া করেন বাসে চড়ে এবং বাসা থেকে বের হলে রিকশা ছাড়া তাঁর কোনো গতি নেই। এই নিয়ে তার মধ্যে কোনো আক্ষেপ কিংবা অনুশোচনা নেই। সব ধরনের ধর্মীয় অনুশাসন তিনি মেনে চলেন। মানবিক ও নৈতিক শিক্ষার দিকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন। আমি মনে করি এ ধরনের যোগ্য ও ভালো মানুষকে রাষ্ট্রের উচিত আলাদা মর্যাদার আসেন অধিষ্ঠিত করা।
কর্মজীবনের মতোই তিনি অবসর জীবনেও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত থাকবেন, এ প্রত্যাশা করা নিশ্চয়ই অসঙ্গত নয়।
তার মতো সৎ, যোগ্য ও উন্নত চিন্তা-চেতনার মানুষদের সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তাতে দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে। এই কর্মবীর, আলোর সারথি তাঁর উত্তর প্রজন্মের স্বাপ্নিক জীবনকে প্রজ্জ্বলিত করুক, এ প্রত্যাশাই করছি।
আপনার মতামত লিখুন :