দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে প্রচণ্ড গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছেন। গরমের সঙ্গে চাহিদা বেড়েছে শরবত ও কোমল পানীয়র। দিনের বেলা প্রচণ্ড গরম থাকলেও রাতের শেষ ভাগে শরীরে জড়াতে হচ্ছে কাঁথা বা কম্বল।
প্রচণ্ড গরমে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট মানুষকে বেকায়দায় ফেলেছে। টিউবওয়েল ও সেচযন্ত্রে প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না। প্রতিবছরই পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান কৃষি বিভাগের লোকজন।
তাপপ্রবাহ ও ভ্যাপসা গরমে মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না। রিকশা ও ভ্যান চালকরা একটু গাড়ি চালিয়েই ছায়ায় গিয়ে জিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে বিকেলে তাপমাত্রা কমলে যানবাহন নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন।
ফুলবাড়ী পৌরশহরের কাঁটাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা রিকশা চালক সিঙ্গেল জয়সোয়াল (৬৩) বলেন, বয়স হয়েছে, তাই রোদে বাইরে যেতে পারেন না। আাবার সংসারও চলে না। তাই বাধ্য হয়ে বিকেলে রোদের তেজ কমে এলে রিকশা নিয়ে বাইরে যান।
গরমে তৃষ্ণা মেটাতে লোকজন শরবতের দোকানে ভিড় করছেন। ফুলবাড়ী শহরে, এমনকি হাটবাজারেও গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান। আখের রস, তোকমা, এলোভেরা, পাকা বেল, শিমুলের মূল, হরতকি, বয়রা ও লেবুর শরবত এবং ফলের জুস বিক্রি হচ্ছে। তোকমা, এলোভেরা, পাকা বেল, শিমুলের মূল, হরতকি, বয়রা ও লেবুর শরবত বিক্রি হচ্ছে গ্লাস ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা এবং বরফ, পানি, লেবু ও বিট লবন দিয়ে তৈরি শরবত ১০ টাকা গ্লাসবিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে চাহিদা বেড়েছে বেড়েছে আইসক্রিম ও কোমল পানীয়র।
উপজেলার মহেলপুর গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক মো. নাজিম উদ্দিন মন্ডল বলেন, এত গরম সহ্য হয় না, বাইরে আগুনের মতো রোদ।
ফুলবাড়ী পৌরশহরের সড়কের পার্শ্বে ভ্রাম্যমাণ শরবত বিক্রেতা সাইদার রহমান (৫৫) বলেন, তিনি তোকমা, এলোভেরা, পাকা বেল, শিমুলের মূল, হরতকি, বয়রা ও লেবুর শরবত তৈরি করেন। গরম ও রোদের তাপ বাড়লে তার শরবতের বেচাবিক্রি বেশি হয়। তবে প্রচন্ড রোদের জন্য মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ীর বাইরে বের হচ্ছে, এজন্য ক্রেতাও কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে বিকেলের পর বেচাবিক্রি বেড়ে যায়। গ্লাস ভেদে ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করেন তার শরবত।
আরেক শরবত বিক্রেতা মোহাম্মদ আলী বলেন, তিনি বরফ, পানি, লেবু ও বিট লবন দিয়ে শরবত তৈরি করে ১০ টাকা গ্লাস বিক্রি করেন। এ সময় বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। গরম যত বাড়বে ততই শরবতের চাহিদা বেড়ে যায়। প্রচন্ড গরমের জন্য তিনিও তার শরবতের দোকান নিয়ে এক জায়গায় টিকে থাকতে পারছেন না। মাঝেমধ্যেই ছায়ায় জিরাতে হচ্ছে।
প্রাণ কোম্পানীর কোমলপানীয়র এজেন্ট মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, প্রচন্ড গরমের জন্য অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ সময় একটু বেশি কোমলপানীয়র বিক্রি হচ্ছে।
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া দপ্তরের আঞ্চলিক কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত শনিবার (১০ মে) বিকেল ৩টায় দিনাজপুর জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবং রোববার (১১ মে) দুপুর ১২টা পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেরসিয়াস। এ সময় বাতাসের জলীয় বাস্পের পরিমাণ ছিল ৫৬ শতাংশ। বর্তমানে জেলায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, চলতান মৃদু তাপদাহে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, বিশেষ করে সর্দি-জ্বর, মাথা ব্যাথা, গলা ব্যাথা, ডায়রিয়া, পেটের ব্যথা উল্লেখ্যযোগ্য। প্রতিদিনই এসব রোগে আক্রান্ত অন্তত শতাধিক রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের অবস্থা একটু খারাপ মনে হচ্ছে তাদেরকে অন্তঃবিভাগে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :