নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু গত তিন বছর ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে। জনসাধারণের চলাচল সহজ করার উদ্দেশ্যে সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।
উপজেলার বজরা ইউনিয়নের দীঘিরজান-বজরা সড়কের মাওলানা বাড়ির সামনে খালের ওপর নির্মিত এ সেতুটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে আছে। ফলে সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সেতুর একপাশে ভাঙাচোরা সড়ক, অপর পাশে পুকুর। খালের ওপর ১৮ মিটার দৈর্ঘ ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণ শুরু হয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়। পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর বিকল্প হিসেবে এটি নির্মিত হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো সুফল মিলছে না স্থানীয়দের।
সেনবাগ উপজেলা থেকে সোনাইমুড়ী উপজেলায় চলাচলের অন্যতম সহজ পথ এই সড়ক। কিন্তু পুরাতন সেতুর বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলায় ও রেলিং না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে রাতে চলাচলের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এছাড়াও খারাপ রাস্তার কারণে যানবাহন বিকল হচ্ছে। বিভিন্ন সময় আহত হচ্ছেন যাত্রী ও পথচারীরা।
সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক ফরহাদ উদ্দিন বলেন, দীঘিরজান থেকে বজরা বাজার পর্যন্ত সড়কটি আগে খুবই ভাঙাচোরা ছিল। নতুন করে সংস্কারের পর গাড়ির চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। মানুষও আগের চেয়ে বেশি এই পথে চলাচল করছে। কিন্তু দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন সেতু নির্মাণ হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটি চালু হয়নি। ফলে আমরা চালকরা এর কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। উল্টো ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো সেতু দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে।
পিকআপচালক মনির হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সড়ক চালু না থাকলে আমাদের চৌমুহনী হয়ে সোনাইমুড়ী বা আশপাশের বাজারগুলোতে যেতে হয়। সেখানে ১৫ মিনিটের পথ যানজটের কারণে দুই ঘণ্টায়ও শেষ হয় না। সংযোগ সড়ক তৈরি করে নতুন সেতুটি চালু করে দিলে শুধু আমাদের মতো চালকরাই নয়, লাখো মানুষ উপকৃত হবে।
দীঘিরজান বাজারের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, সেতুর কাজ শেষ হওয়ার সময় আমরা ভেবেছিলাম অবশেষে ভোগান্তির অবসান হবে, ব্যবসাও ভালো হবে। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেছে, এখনো সেতুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এটা যেন সাজানো পণ্য। যেটি শুধু চোখে দেখার জন্য, কিন্তু কোনো বাস্তব কাজে লাগে না।
স্থানীয় বাসিন্দা গৃহবধূ শাহিনা আক্তার বলেন, পুরোনো সেতুতে রেলিং নেই, কাঠামোও ভাঙা। দিনের বেলায় কোনোভাবে পার হওয়া গেলেও রাতে সেখানে পারাপার করতে গেলে মনে হয় প্রাণ হাতে নিয়ে যাচ্ছি। সেটি চালু না থাকায় শুধু সময়ের অপচয় হচ্ছে না, আমাদের জীবনও প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে আছে।
এ বিষয়ে জেলা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সেতুর সঙ্গে সড়ক সংযোগ করা সম্ভব হয়নি। অধিগ্রহণের ৭ ধারা শেষ হয়েছে, স্টিমেট অনুমোদন ও জটিলতা কেটে গেলে দ্রুত সেতুটি চালু করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :