Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
প্রাণে বাঁচলেও রক্ষা পায়নি ‘সুতা পরিমাণ’ সম্পদও

কড়াইলের আগুনে নিঃস্ব হাজারও পরিবার


দৈনিক পরিবার | নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ১২:৪৬ পিএম কড়াইলের আগুনে নিঃস্ব হাজারও পরিবার

কড়াইল বস্তির আগুনে অন্তত দেড় হাজার ঘরবাড়ি পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুনের সময় কোনোভাবে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও সহস্রাধিক পরিবার সম্পদের দিক থেকে পুরোপুরি উজাড় হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে তারা বলছেন, জীবন আছে ঠিকই, কিন্তু বসতঘর, প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, ভবিষ্যতের সব পরিকল্পনা সবকিছুই আর অবশিষ্ট নেই।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালে কড়াইল বস্তি এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, কড়াইল বস্তির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণে রক্ষা পেলেও সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসেছে অন্তত দেড় থেকে দুই হাজার পরিবার। বস্তির প্রবীণ বাসিন্দা আব্দুল জলিল বলেন, চারবার আগুন দেখছি এই এলাকায়। কিন্তু এবার যেভাবে ছড়াইছে কেউ বুঝতেই পারে নাই। চোখের সামনে আগুন ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে গেছে।
বস্তির বউবাজার এলাকার একটি দ্বিতল টিনের ঘরের দুতলায় থাকতেন মো. রাজু মিয়া। গত তিন বছর ধরে এই এলাকায় তিনি ভাড়া থাকেন। আগুন লাগে তার ঘরের কাছাকাছিই। তিনি বলেন, দুতলায় ঘুমাইতেছিলাম। মানুষ চিৎকার না করলে বেরও হতে পারতাম না। সবকিছুই পুড়ে গেছে।
ঘটনার পর ধ্বংসস্তূপে খুঁজতে খুঁজতে তিনি পেয়েছেন শুধু একটা পুরোনো বটি, একটা পুড়ে যাওয়া ফ্যানের অংশ আর কিছু লোহার রড। বাকিটা ছাই। তার হিসাব, টিভি, ফ্রিজ, ফার্নিচার মিলিয়ে অন্তত দুই লাখ টাকার ক্ষতি। রাজুর ভাষায়, আমরা সবাই আলহামদুলিল্লাহ বেঁচে আছি, কিন্তু কোনো কিছু সুতা পরিমাণও বাঁচাইতে পারি নাই।
অন্যদিকে সিএনজি চালক মো. শুক্কুর আলী ছিলেন বাড়ির বাইরে। আগুনের খবর পেয়ে ছুটে এসে দেখেন ঘরের ধারে-কাছে যাওয়া যায় না। তিনি বলেন, যে শার্টটা পরে বের হয়েছিলাম, এটাই এখন আমার সব। দুই বাচ্চা আর বউ কোনো রকমে দৌড়ায়া বের হইছে। যা ছিল সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন আমরা পথে।
আরেক ক্ষতিগ্রস্ত আসমা আক্তার বলেন, মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করতাম। অনেকদিনের চেষ্টায় ঘরে কিছু জিনিসপত্র করেছিলাম। আমার সব শেষ। এই বয়সে আবারও নতুন করে সবকিছু জোগাড় করা কঠিন। কোথায় যাব কোথায় থাকবো কিছুই বলতে পারছি না।
কড়াইল বস্তির ভয়াবহ এই আগুনে মানুষ বেঁচে গেছে ঠিকই, কিন্তু জীবন যাপনের সমস্ত ভিত্তি ভস্মীভূত হয়ে পড়েছে। পুড়ে যাওয়া পুরো বস্তিতে এখন শুধু আগুনে পোড়া গন্ধ আর সর্বস্ব হারানো মানুষের আর্তনাদ—যা মনে করিয়ে দিচ্ছে, আগুন তাদের জীবন কেড়ে নিতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু জীবন গড়ার সব উপাদান কেড়ে নিয়েছে।

Side banner