Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

নরওয়ের শিক্ষার্থী ভিসার খুঁটিনাটি


দৈনিক পরিবার | শিক্ষা ডেস্ক নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০৯:০৫ পিএম নরওয়ের শিক্ষার্থী ভিসার খুঁটিনাটি

উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে নরওয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় একটি নাম হয়ে উঠেছে। মানসম্মত শিক্ষা, নিরাপদ পরিবেশ, আধুনিক গবেষণা সুবিধা এবং শিক্ষার্থীবান্ধব নীতিমালা সব মিলিয়ে নরওয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ তৈরি করে। তবে নরওয়েতে যাওয়ার আগে সঠিক তথ্যভিত্তিক প্রস্তুতি এবং সুসংগঠিত ভিসা প্রক্রিয়া জানা অপরিহার্য। বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্ট, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, নোটারি, অনলাইন আবেদনসহ পুরো প্রক্রিয়াটি নতুনদের জন্য জটিল মনে হতে পারে। নরওয়ে স্টুডেন্ট ভিসার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া থাকছে আজকের আলোচনায়।
নরওয়ে স্টুডেন্ট ভিসার যাত্রা শুরু হয় বৈধ অফার লেটার বা অ্যাডমিশন কনফারমেশন পাওয়ার মাধ্যমে। সাধারণত ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস, টোয়েফল বা পিটিই সনদ প্রয়োজন হয়। যদি কোনো কোর্সে টিউশন ফি থাকে, তবে সেই ফি প্রদানের প্রমাণ আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হয়। ভর্তিপ্রক্রিয়া যদি সুসংগঠিত হয়, তবে ভিসা আবেদনও সহজ হয়।
শিক্ষার্থীর ভিসার নথি তালিকা
ভিসা আবেদনের জন্য ব্যক্তিগত, একাডেমিক, আবেদনসংক্রান্ত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নথি একসঙ্গে প্রস্তুত রাখা জরুরি। ব্যক্তিগত নথির মধ্যে রয়েছে পাসপোর্ট, পূর্বের পাসপোর্ট (যদি থাকে), জন্মনিবন্ধন সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ছবি; একাডেমিক নথির মধ্যে এসএসসি, এইচএসসি এবং স্নাতক সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট রয়েছে, অনুবাদ ও নোটারি করতে হয়। আবেদনসংক্রান্ত নথি হলো ইউডিআই ফরম, কভার লেটার, রেসিডেন্স পারমিট ফরম, ডিক্লারেশন ফরম, ভিএফএস অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার এবং ফি রসিদ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নথির মধ্যে রয়েছে অফার লেটার, অ্যাডমিশন কনফারমেশন ও কোর্স ডিটেইলস এবং আবাসনের জন্য স্টুডেন্ট হাউজিং বা ভাড়ার চুক্তিপত্র জমা দিতে হয়, তবে এয়ারবিএনবি গ্রহণযোগ্য নয়।
ফান্ড/ব্যাংক স্টেটমেন্ট/আর্থিক প্রমাণ
নরওয়ে স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে আর্থিক প্রমাণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নরওয়ের নিয়ম অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে বছরে কমপক্ষে এনওকে ১৬৬,৮৫০ লিভিং কস্ট হিসেবে দেখাতে হয়। এই টাকা বাংলাদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বা নরওয়েজিয়ান ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে থাকতে পারে। প্রয়োজন হয় ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট, স্পনসরশিপ লেটার, আয়ের প্রমাণ, চাকরি বা ব্যবসার কাগজপত্র এবং ট্যাক্স ডকুমেন্ট। স্টেটমেন্টে নিয়মিত লেনদেন থাকা উচিত এবং হঠাৎ বড় অঙ্কের জমা সন্দেহ তৈরি করতে পারে।
নোটারি/লিগ্যালাইজেশন
ডকুমেন্ট নোটারি করলে আবেদন আরও শক্তিশালী হয়; বিশেষ করে স্পনসরশিপ লেটার, অ্যাফিডেভিট অব সাপোর্ট, আয়ের সনদ, অনুবাদের কাগজপত্র এবং আত্মীয়তার প্রমাণ নোটারি করলে ভিসা অফিস তথ্য যাচাই করতে সুবিধা পায়।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স
যদিও নরওয়ে স্টুডেন্ট ভিসায় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বাধ্যতামূলক নয়, তবে এটি জমা দিলে আবেদন আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়। বাংলাদেশে সাধারণত ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পিসিসি পাওয়া যায়।
অনলাইন আবেদন
নরওয়ের ভিসা আবেদন সম্পূর্ণ অনলাইনে করা হয়। প্রথমে ইউডিআই ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে আবেদন ফরম পূরণ করতে হয়। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড এবং ফি পরিশোধের পর ভিএফএস অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করতে হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় সঠিক স্ক্যান কপি এবং তথ্যের নির্ভুলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভিসা জমা ও প্রক্রিয়াকরণ
বাংলাদেশে নরওয়ের দূতাবাস না থাকার কারণে ভিসা আবেদন ঢাকার ভিএফএস গ্লোবাল সেন্টারে জমা দিতে হয়। এখানে বায়োমেট্রিক সংগ্রহ, পাসপোর্ট জমা এবং ডকুমেন্ট গ্রহণ করা হয়। আবেদনটি এখান থেকেই নরওয়ের ইমিগ্রেশন বিভাগে পাঠানো হয়।
প্রসেসিং সময়
সাধারণত ৪ থেকে ৮ সপ্তাহ। তবে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি বা বাড়তি ডকুমেন্ট চাইলে সময় ১০ থেকে ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত।
নরওয়েতে পৌঁছে করণীয়
ভিসা অনুমোদনের পর নরওয়েতে পৌঁছে প্রথম কাজ হলো সাত দিনের মধ্যে পুলিশ রেজিস্ট্রেশন। এরপর রেসিডেন্স পারমিট কার্ডের বায়োমেট্রিক; ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা; প্রয়োজনীয় টাকা ট্রান্সফার; সেমিস্টার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা।
পার্টটাইম কাজ
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পার্টটাইম এবং ছুটির সময় ফুলটাইম কাজ করতে পারে। ট্যাক্স কার্ড ছাড়া কাজ করা যায় না এবং ক্যাশ জব আইনত নিষিদ্ধ।
নরওয়েতে মাসিক খরচ
নরওয়েতে জীবনযাত্রা ব্যয়বহুল। শিক্ষার্থীদের মাসিক খরচ গড়ে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার এনওকে হতে পারে। এর মধ্যে বাসাভাড়া, খাবার, যাতায়াত, ফোন-ইন্টারনেট ও অন্য খরচ অন্তর্ভুক্ত। তাই ইউডিআই বছরে নির্দিষ্ট লিভিং কস্ট দেখাতে বলে।
ভিসা রিনিউ/এক্সটেনশন
প্রতিবছর ভিসা নবায়ন করতে হয়। এ জন্য নতুন ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আবাসন চুক্তি, একাডেমিক অগ্রগতির রিপোর্ট এবং সেমিস্টার রেজিস্ট্রেশনের প্রমাণ জমা দিতে হয়।
ভিসা রিজেক্ট হওয়ার সাধারণ কারণ
ভিসা রিজেকশনের কারণ হিসেবে দেখা যায় ব্যাংক স্টেটমেন্টে হঠাৎ বড় টাকা জমা, স্পনসরের আয় প্রমাণ না থাকা, ভুয়া আবাসনের কাগজ, অসম্পূর্ণ ডকুমেন্ট বা ভুল অনুবাদ। আয় ও টাকার উৎস অস্পষ্ট থাকলে আবেদন সন্দেহজনক মনে হতে পারে।
কিছু পরামর্শ: ব্যাংক স্টেটমেন্ট ২০ থেকে ৩০ দিনের পুরোনো হওয়া উচিত। সব ডকুমেন্ট পরিষ্কারভাবে স্ক্যান করে আপলোড করা জরুরি। অফার লেটার পাওয়ামাত্র ভিএফএস অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করা ভালো। আবাসন আগে নিশ্চিত করা প্রক্রিয়াকে সহজ করে। এ ছাড়া স্পনসরের আয় ও ব্যাংক স্টেটমেন্টের পরিমাণ যেন অর্থপূর্ণ সম্পর্কযুক্ত হয়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সূত্র: নরওয়েজিয়ান ইমিগ্রেশন ডিরেক্টরেট

Side banner