“জগতের কল্যাণতরে, আকুন্ঠ বিষপানে হয়েছিলে নীলকন্ঠ চিরতরে। তাই তো ত্রিভুবনে, তোমারই আরাধনা করে।” শিব’ শব্দের অর্থ হল কল্যাণকারী অর্থাৎ যিনি জগতের কল্যান করেন। পৌরাণিক তথ্যমতে ভবগান শিব মানব জগতের পাশাপাশি, ভুত-প্রেত, পশু-পাখি দ্বারা পূজিত হন।
মহাশিবরাত্রি সাধারণত ইংরাজী মাসের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ এ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয় এই শিবরাত্রি তাই একে শিব চতুর্দশীও বলে। মহাশিবরাত্রি হল হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবতা দেবাদিদেব মহাদেব ‘শিবের মহা রাত্রি’। হিন্দু মহাপুরাণ তথা শিবমহাপুরাণ অনুসারে এইরাত্রেই শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের মহা তান্ডব নৃত্য করেছিলেন । আবার এইরাত্রেই শিব ও পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল।
তারপর রাত্রিবেলা চার প্রহরে শিবলিঙ্গকে দুধ, দই, ঘৃত, মধু ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করান। তারপর বেলপাতা, নীলকন্ঠ ফুল, ধুতুরা, আকন্দ, অপরাজিতা প্রভৃতি ফুল দিয়ে পূজা করেন। আর ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ এই মহামন্ত্র জপ করেন। সেদিন রাত্রি জাগরণ করা হয় ও শিবের ব্রতকথা, মন্ত্র আরাধণা করা হয়। ভারতবর্ষের বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ তথা সমস্ত শিবমন্দিরে এই পূজা চলে, তান্ত্রিকেরাও এইদিন সিদ্ধিলাভের জন্য বিশেষ সাধনা করেন। শিবমহাপুরাণ মতে, অতি প্রাচীনকালে বারাণসী তথা কাশীধামে এক নিষ্ঠুর ব্যাধ বাস করতেন।
তিনি প্রচুর পরিমাণে জীবহত্যা করতেন।কোন একদিন জঙ্গলে শিকার করতে বেরিয়ে খুব দেরি হওয়ার জন্য জঙ্গলে পথ হারিয়ে ফেলেন এবং কোন উপায়ান্তর না পেয়ে হিংস্র জীবজন্তুর ভয়ে রাতে বেল গাছের উপর আশ্রয় নেন । কোনো শিকার না পেয়ে তিনি হতাশ হয়ে বেলগাছ থেকে একটা করে পাতা ছিঁড়ে নিচেয় ফেলতে থাকেন। আর সেই বেলপাতা গাছের নিচেয় থাকা শিবলিঙ্গের উপর পড়তে ছিল।
সেদিন ছিল শিবচতুর্দশী অর্থাৎ মহাশিবরাত্রি এবং সেই শিকারী ছিলেন উপবাসী। ফলে তার ফেলে দেওয়া বেলপাতাগুলো শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে অজান্তেই শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হয়। পরদিন তিনি বাড়ী ফিরে এসে তার খাবার এক অতিথিকে দিয়ে দেন। এতে তার ব্রতের পারণ ফল লাভ হয়।
এর কিছুদিন পরে সেই ব্যাধ মারা গেলে যমদূতরা তাকে নিতে আসেন। কিন্তু শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হেতু শিবদূতরা এসে যুদ্ধ করে যমদূতদের হারিয়ে ব্যাধকে নিয়ে যান। যমরাজ তখন শিকার করেন যে শিবভক্ত শিবচতুর্দশী ব্রত পালন করেন তার উপর যমের কোনো অধিকার থাকেনা।
ফলে তিনি মুক্তিলাভ করেন।এইভাবে মর্ত্যলোকে শিবচতুর্দশী ব্রতের প্রচার ঘটে। ২০২৬ সালে মহাশিবরাত্রি উদযাপন আজ। চতুর্দশী তিথি শুরু ২০২৬-এর ২৬শে ফেব্রুয়ারি সকাল ১১:২২ থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯:২৪ মিনিট পর্যন্ত। এরই ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউনিয়নের শিববাড়ি নামক স্থানে শিব পূজার আয়োজনের মধ্যে দিয়ে অংশ নিতে আশা সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষ সমান ভাবে পূজা উদযাপন করেছেন। শিবরাত্রি উৎসবকে ঘিরে মেলার আয়োজন নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে মুড়ি, মূড়কি, খেলনা, গ্রামীণ সাজে সজ্জিত দোলনাসহ হরেক রকমের মজাদার জিনিস নিয়ে বসেছে দোকান।
আপনার মতামত লিখুন :