Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২

রামগতি-কমলনগরে মৌসুম শুরুর আগেই প্রস্তুত ৭১ অবৈধ ইটভাটা


দৈনিক পরিবার | স্টাফ রিপোর্টার অক্টোবর ২৩, ২০২৫, ০১:৩১ পিএম রামগতি-কমলনগরে মৌসুম শুরুর আগেই প্রস্তুত ৭১ অবৈধ ইটভাটা

লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় দুই উপজেলা রামগতি ও কমলনগরে মৌসুমের শুরুতেই ৭১টি অবৈধ ইটভাটা প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব ইটভাটায় কৃষিজমি নষ্ট করে মাটি সংগ্রহ ও কাঠ পোড়ানোর মাধ্যমে ইট তৈরি করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন ভাটা মালিকরা। বর্তমানে ভাটাগুলোতে চলছে ধোয়ামোছার কাজ, অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই শুরু হবে ইট পোড়ানো কার্যক্রম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ এসব ইটভাটার মালিকদের মধ্যে রয়েছেন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে প্রতি বছরই উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ফসলি জমিতে নতুন ভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের সরকারি ভর্তুকিতে কেনা ট্রাক্টর-টলি ব্যবহার করা হচ্ছে ইট ও মাটি পরিবহনে। দুই উপজেলায় প্রায় ৫ শতাধিক অবৈধ ট্রাক্টর-টলি চলাচল করছে বলে জানা গেছে। এসব যানবাহনের কারণে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ধুলাবালিতে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন রোগ এবং দিন দিন বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।
এদিকে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ না হলে পরিবেশ উপদেষ্টাকে চেয়ারে রাখবেনা মর্মে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন এনসিপির দক্ষিনাঞ্চলের সংগঠক মোহাম্মদ রাকিব। গত ১১ অক্টোবর দেওয়া ফেসবুক পোস্টে তিনি অভিযোগ করেন, ‘পরিবেশ উপদেষ্টা অবৈধ ভাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সরকার হয়ে রাজনীতি করছেন।
একই দিন রামগতি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিশেষ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, এবার অবৈধ ইটভাটা বন্ধে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী- কমলনগর উপজেলায় মোট ২০টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ ৬টি এবং অবৈধ ১৪টি। অন্যদিকে রামগতিতে মোট ৫১টি ইটভাটার মধ্যে বৈধ মাত্র ২টি, বাকি ৪৯টি অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, এসব অবৈধ ইটভাটায় শ্রমিক নির্যাতন, চেক জালিয়াতি এবং শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মামলা করার মতো নানা অনিয়ম ঘটে চলেছে।
একাধিকবার অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রশাসন দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাটা মালিকরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। কৃষিজমি ধ্বংসের পাশাপাশি দখল করা হচ্ছে সরকারি খাল, ভূলুয়া নদী ও খাসজমি। ইটভাটার জন্য অবৈধ সড়ক তৈরি করায় নদী-খাল দখল বেড়েই চলেছে।
রামগতির চরআফজল গ্রামের আব্দুল মান্নান, কেরামতিয়া এলাকার সাইফুল আলম ও চরলক্ষ্মী গ্রামের আবু তাহের অভিযোগ জানিয়ে বলেন, প্রশাসন এসে অভিযান চালিয়ে চিমনি ভেঙে দিলেও কিছুদিন পর আবার সেই ভাটাগুলো চালু হয়ে যায়।
কমলনগরের তোরাবগঞ্জের নুর আলম ও চরপাগলার গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন জানান, ভাটার ট্রাক্টর-টলির কারণে ঘরবাড়ি, জমি, রাস্তা সব ধ্বংস হয়ে গেছে। বৈধ ভাটা রেখে অবৈধগুলো বন্ধ করা উচিত।
রামগতি উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও বিএনপি নেতা মোহাম্মদ খলিল মিয়া বলেন, ‘সারা দেশে ইটভাটা চলছে, আমরাও চালাচ্ছি। সারা দেশে বন্ধ হলে আমরাও বন্ধ করব।’
ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন জানান, গত মৌসুমে ৫১টি ইটভাটায় ৫১ বার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে ৮৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয় এবং ১২টি ভাটার মালিক ভাটা বন্ধ রাখতে মুচলেকা দেন। গত আগস্ট থেকেই এলাকায় মাইকিং করে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।

Side banner