পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে মাথা থেঁতলে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মূল আসামিদের অদ্যাবধি গ্রেপ্তার না করা এবং মামলা এজহার থেকে মূল তিন আসামিকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা ‘রহস্যজনক’ বলে মনে করছে বিএনপির তিন সংগঠন যথাক্রমে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদল।
শনিবার (১২ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিন সংগঠনের পক্ষে যুবদলের সভাপতি এম মোনায়েম মুন্না এসব কথা বলেন।
মুন্না বলেন, ‘এই ঘটনায় যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, রহস্যজনকভাবে তাদের মামলার প্রধান আসামি করা হয়নি। যারা প্রাণঘাতী আঘাতগুলো করেছে, তারা এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারও হয়নি। এর কারণ আমাদের বোধগম্য নয়।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমে মামলার এজহারে উল্লেখিত বাদীর মেয়ে বলেছেন, মামলার এজহারে খুনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনজনকে পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরাপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। ঘটনার ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও খুনের প্রমাণাদি হাতে থাকার সত্ত্বেও অদ্যাবধি মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল না। এটা একটি বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য।
মুন্না বলেন, ‘গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরাও জানতে চাই, কারা কেন এই তিন আসামিকে বাদ দিয়ে নতুন করে অন্য কাউকে আসামি করল। আর ঘটনাটি বুধবারের। শুক্রবার এই ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। দুই দিন আগে ঘটনা কেন দুই দিন প্রচার হলো, এর পেছনে কারা জড়িত সেটাও খুঁজে দেখা উচিত। দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে এই প্রশ্নটি দেখে এর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।
এম মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। রাজধানীর চকবাজার থানার ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী মোহাম্মদ সোহাগকে প্রকাশ্য দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংস কায়দায় নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। এই নৃশংস বর্বরতা প্রত্যক্ষ করে সমস্ত জাতি স্তম্ভিত। আমি এই নৃশংসতার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। সভ্যতার এই যুগে এমন আদিম বর্বরতা আমরা কোনোভাবে মেনে নিতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ইন্ধনদাতা হিসেবে যাদের নাম এসেছে, মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের মধ্যে আমাদের তিন সংগঠনের পাঁচজনকে গতকাল আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি অতি দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার জন্য। সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার দিক থেকে যা কিছু প্রয়োজন আমরা সেই ব্যবস্থাগুলো নিয়েছি।
মুন্না বলেন, ‘গত কয়েক মাসে সারাদেশের যেকোন জায়গা থেকে যখনই আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, আমরা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। গত প্রায় এক বছরে আমরা আমাদের হাজারো নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছি।
যুবদল সভাপতি বলেন, আমরা কোথাও দায় এড়ানোর রাজনীতি করিনি। বরং দায়গ্রহণ করে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থাটুকু নিশ্চিত করেছি। কিন্তু আমরা যে হাজারো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি, প্রশাসন কি তাদের বিষয়ে যথাযথ আইনি বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছে? না নিয়ে থাকলে কেন নেয়নি আপনাদের মাধ্যমে।
মুন্না বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা মনে করছি, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে কার্যকর পদক্ষেপ নিন। এখানে আমাদের যদি কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা তা করতে সর্বদা প্রস্তুত আছি।
মুন্না বলেন, গত প্রায় এক বছরেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষের জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তাও নিশ্চিত হয়নি। আপনারা দেখেছেন, গতকাল খুলনায় যুবদলের একজন বহিষ্কৃত নেতাকে গুলি করে ও রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে। চাঁদপুরে খুতবা দেওয়ার সময়ে একজন ইমামের ওপর নারকীয় কায়দায় প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রগ কেটে হত্যা করে একটি বিশেষ সংগঠনের দীর্ঘদিনের সহিংস্র রাজনীতির চর্চার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। গতকালের দুইটা ঘটনা কিন্তু তারা জড়িত ছিল। ইতোপূর্বে কুয়েটের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পেছনেও প্রত্যক্ষ ইন্ধন ছিল।
তিনি বলেন, গত সাপ্তাহে কুমিল্লায় মব তৈরি করে একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। ইতোপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে তোফাজ্জল নামে এক যুবককে এবং পরবর্তী সময়ে ছাত্রদল নেতা সাম্যকে বর্বর কায়দায় হত্যা করা হয়। প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা পারভেজকে প্রকাশ্য দিবালোকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামধারী স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।
মুন্না অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত। কিন্তু একটি সুযোগসন্ধানী বিশেষ গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিলেক্টিভ প্রতিবাদ করে বিএনপি এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং তীব্র কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য বিবৃতি দেওয়া শুরু করেছে।
যুবদল সভাপতি বলেন, বিএনপি ইতোমধ্যে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সরকার ও প্রশাসনকে অসংখ্যবার অনুরোধ করেছে। কিন্তু সরকার ও প্রশাসন এক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা মনে করি, সরকার পরিকল্পনামাফিক প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে যাতে দেশে অরাজক পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকে এবং এই অজুহাতে জাতির দীর্ঘ প্রত্যাশিত জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়। একটি বিশেষ গোষ্ঠী যারা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে উত্তরণ চায় না তারা এই সুযোগটি গ্রহণ করে বিএনপি এবং এর শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার উসকানি দিচ্ছে।
মোনায়েম মুন্না বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনের সমর্থনসহ নানা বিষয়ে তরুণদের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। এখানে দেখা গেছে, যারা নিজেদের তারুণ্যের একমাত্র স্টেকহোল্ডার হিসেবে দাবি করেন, জরিপে তাদের সেই দাবি বুমেরাং হয়েছে। এদেশের তরুণরা বরং বহু লড়াই ও সংগ্রামের পরীক্ষিত বাংলাদেশপন্থি শক্তি বিএনপিতেই তাদের আস্থা-বিশ্বাস রাখে বলে প্রতিভাত হয়েছে। আগামীতে বিএনপিকেই এদেশের অধিকাংশ তরুণেরা ক্ষমতায় দেখতে চায় বলে জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করীম পল, ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :