বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, যারা আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, যারা নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, তাদের সাতই নভেম্বরের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরাজিত করতে হবে।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের ২ নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানের পাশে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, আমার সামনে যারা আছেন, তারা গত ১৫ বছরে জ্বলে-পুড়ে খাঁটি সোনায় পরিণত হয়েছেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা নানা বাধা ও দমন-পীড়নের মধ্যে দিয়ে আরও শক্ত ও পরিণত হয়েছেন। এই খাঁটি সোনার ওপর যেন কোনো দাগ না লাগে, কেউ যেন প্রশ্ন তুলতে না পারে- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই ঐক্যবদ্ধ বিএনপিই শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, নির্বাচন আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন শেষ হবে না। আগামী তিন, চার বা পাঁচ মাস- দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির আন্দোলন চলবে। গত ১৭ বছর যেমন ঐক্যবদ্ধ থেকে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি, তেমনি ঐক্যবদ্ধ থেকে আগামী নির্বাচনেও বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। সুতরাং ঐক্যে ভাঙন ধরানোর সুযোগ নেই।
দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা বা ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন- দলের পক্ষ থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পাশে সব নেতাকর্মীকে সর্বশক্তি নিয়ে দাঁড়াতে হবে এবং বিজয় নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এটা বিএনপি ও ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য বড় পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে সবার।
সাতই নভেম্বরের চেতনায় গণতন্ত্রের শত্রুদের মোকাবেলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে জাতি যেমন ঐক্যবদ্ধ ছিল, তেমনি এখনো যারা নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়, তাদের সাতই নভেম্বরের স্পিরিটে পরাজিত করতে হবে। দেশের মালিক জনগণ, আর তাদের অধিকার নিশ্চিত হবে একটি নির্বাচিত সংসদ ও সরকারের মাধ্যমে।
জুলাই সনদ নিয়ে বিভক্তি না তৈরির অনুরোধ জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ইতোমধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর ঐক্যমত হয়েছে এবং সেই ভিত্তিতে জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা নিজেদের দাবি অন্য দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তাদের গণতান্ত্রিক পথে ফিরতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেটের জন্য জনগণের কাছে যেতে হবে। একটি দলের মতামত আরেক দলের ওপর চাপিয়ে দেওয়া গণতন্ত্রবিরোধী।
তিনি আরো বলেন, আগামী সংসদে কী সিদ্ধান্ত হবে- সেটা ঢাকায় বসে কয়েকজন নির্ধারণ করতে পারেন না। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব চিন্তা ও দর্শন আছে। তাই সংসদে গিয়ে জনগণের ম্যান্ডেটের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংঘর্ষমূলক রাজনীতিতে না গিয়ে সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
দলীয় প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে গুলি চালিয়ে একজনকে হত্যা ও কয়েকজনকে আহত করা হয়েছে। বলা হচ্ছে দুই দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব থেকে এই ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- এই অন্তর্দ্বন্দ্ব বিএনপির কর্মসূচির সময় কেন ঘটবে? জনগণ মনে করছে, এই সুযোগ ব্যবহার করে কেউ আগামী নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। যারা নির্বাচন ঠেকাতে চায়, তারা গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের শত্রু। তাদের চিহ্নিত করেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আজ থেকেই সবাইকে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করতে হবে। তারেক রহমানের স্পষ্ট বার্তা- দলের মধ্যে বিভাজন নয়; হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আগামী নির্বাচনে ধানের শীষকে বিপুল ভোটে জয়ী করতে হবে এবং তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী দেখতে হবে, ইনশাআল্লাহ।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।








































আপনার মতামত লিখুন :