Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২

সুদানে ইসলামের আগমন যেভাবে


দৈনিক পরিবার | ধর্ম ডেস্ক অক্টোবর ৩০, ২০২৫, ০৩:৫৫ পিএম সুদানে ইসলামের আগমন যেভাবে

মক্কায় ইসলাম আগমনের পর মুসলমানদের ওপর যখন চরম নির্যাতন শুরু হয়, তখন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নির্দেশে একদল সাহাবি আশ্রয়ের সন্ধানে লোহিত সাগর পাড়ি দেন। ৬১৫ সালের দিকে তারা আকসাম অঞ্চলে পৌঁছান, যা বর্তমান ইরিত্রিয়া ও সুদানের সীমান্তঘেঁষা এলাকা। এখান থেকেই আফ্রিকা তথা সুদানে ইসলামের প্রথম আলো উদ্ভাসিত হয়।
প্রথম হিজরতের ইতিহাসে সুদানের ভূমি
মক্কা থেকে আকসামে চলে যাওয়াকে ইসলামের ইতিহাসে প্রথম হিজরত বলা হয়। সেই দলে ছিলেন ২৩ জন সাহাবি, যারা আবিসিনিয়া—অর্থাৎ বর্তমান ইথিওপিয়া ও পূর্ব সুদান এলাকায় পৌঁছান। তখনকার শাসক নাজ্জাসি তাদের আশ্রয় দেন, এমনকি পরবর্তীতে তিনিও ইসলামের পতাকাতলে আসেন।
পরের বছর আরও ১০১ জন মুসলমান ওই অঞ্চলে হিজরত করেন। তাদের মধ্যে কিছু অংশ বর্তমান সোমালিয়া ও সুদানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আশ্রয় নেন। ওই অঞ্চল তখন ‘বারবারস ভূমি’ নামে পরিচিত ছিল। সেখানেই মুসলমানরা ‘জেইলায়’ এলাকায় নির্মাণ করেন আফ্রিকার প্রথম যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ‘দুই কিবলার মসজিদ’।
ইসলামের প্রাথমিক বিস্তার
৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে ইরিত্রিয়ার মাসাওয়া শহরে আফ্রিকার সবচেয়ে পুরনো মসজিদ নির্মিত হয়। এই সময়কার ইসলাম প্রচারক ও ব্যবসায়ীরা লোহিত সাগরের উপকূল ধরে ধীরে ধীরে সুদান অঞ্চলে ইসলামের শিক্ষার প্রসার ঘটান।
এরপর ৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর আমলে মুসলিম সেনারা মিসর ও লিবিয়া জয় করেন। মিসর জয় ইসলামের জন্য উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায় এক নতুন অধ্যায় উন্মোচন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামের প্রভাব পৌঁছে যায় নীলনদের উপত্যকা ঘেঁষা সুদানের ভেতর পর্যন্ত।
বণিকদের মাধ্যমে ইসলাম বিস্তার
পরবর্তী শতাব্দীগুলোতে আরব বণিক ও ইসলামী পণ্ডিতরা বাণিজ্য ও দাওয়াতের মাধ্যমে সুদানের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন। তাদের সঙ্গে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইসলামের ন্যায়, সমতা ও সহাবস্থানের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে সুদানের রাজা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে ইসলামের ছায়াতলে আসে।
আরবি ভাষার চর্চাও তখন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইসলামী পণ্ডিতদের হাত ধরে আফ্রিকায় আরবি শিক্ষা প্রসারিত হয়। কোরআনের ভাষা হিসেবে আরবি বুঝতে পারা সহজ হয় সুদানি মুসলমানদের জন্য। এর ফলে শুধু ধর্ম নয়, সংস্কৃতি ও শিক্ষার ক্ষেত্রেও ইসলাম গভীর প্রভাব ফেলে।
বর্তমান সুদানে ইসলাম ও মুসলিম
সুদানের মুসলমানদের অধিকাংশই মালিকি মাজহাব অনুসারী সুন্নি মুসলমান। যাদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে সুফিবাদের প্রভাব অত্যন্ত গভীর। রাজধানী খার্তুমে কিছু সংখ্যক শিয়া সম্প্রদায়ও রয়েছে। 
সুদানের রাজনীতিতেও সুফি তরিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পাশাপাশি মাহদী আন্দোলনের অনুসারী ‘আনসার’ গোষ্ঠী ও মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রভাবও সুদানের রাজনীতিতে প্রবল। ষাটের দশক থেকে মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ‘ন্যাশনাল ইসলামিক ফ্রন্ট’ রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে সালাফিবাদের প্রভাব বাড়ছে সুদানে। বিশেষত সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা অভিবাসী শ্রমিকদের মাধ্যমে এই ধারা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম ও শহর উভয় জায়গায়।
ইসলামের শিকড় আজও গভীরে
ইসলাম সুদানের সমাজ, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রাথমিক হিজরতের সময়কার আশ্রয়দান ও মানবিকতার যে সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল, তা আজও সুদানের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয়।
সুদানই ছিল সেই আফ্রিকান ভূমি, যেখানে প্রথমবারের মতো ইসলামের বীজ বপন হয়েছিল। আর সেই বীজই পরবর্তীকালে গোটা আফ্রিকা মহাদেশে ইসলামের বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে দেয়।

Side banner