Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

উড়ন্ত বিমানে ঝাঁকুনি হলে কী করবেন


দৈনিক পরিবার | ভ্রমণ ডেস্ক অক্টোবর ১৯, ২০২৫, ০১:১৯ পিএম উড়ন্ত বিমানে ঝাঁকুনি হলে কী করবেন

টার্বুলেন্স অর্থাৎ উড়ন্ত বিমানে ঝাঁকুনি বা অস্থিরতা সাধারণত উদ্বেগের কিছু নয়। কিন্তু এটি কারও কারও কাছে অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। নিয়মিত বিমানযাত্রীরা কিছু অনিবার্য বিষয়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন; যেমন যাত্রায় দেরি, লম্বা নিরাপত্তা লাইন, বিমানবন্দরে দামি স্ন্যাক্স এবং মাঝেমধ্যে এই টার্বুলেন্স। শেষেরটি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক হতে পারে, বিশেষ করে সেই যাত্রীদের জন্য, যাঁরা জানেন না টার্বুলেন্স ঠিক কী এবং কেন এটি ঘটে। যদি পূর্বাভাসে বজ্রঝড় না থাকে, তবু আপনার বিমান কিছুটা টার্বুলেন্সের সম্মুখীন হলে আতঙ্কিত হবেন না।
টার্বুলেন্সের কারণ
বিমানে টার্বুলেন্স বা মধ্য আকাশে ঝাঁকুনির জন্য কোনো একটি কারণ দায়ী নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘টার্বুলেন্স হলো বায়ুমণ্ডলের অস্থির চলাচল। এটি সাধারণত উচ্চ-স্তরের ফ্রন্ট ও বায়ু শিয়ার বা জেট স্ট্রিমের কাছাকাছি বজ্রঝড়, মেঘ অথবা পাহাড়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত বাতাসের কারণে ঘটে।’ যখন বায়ুর স্রোত ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যগুলোর সম্মুখীন হয়, তখন তারা তরঙ্গ সৃষ্টি করে, যা বাতাসে ঘূর্ণির সৃষ্টি করে। এর ফলে টার্বুলেন্স হয়।
কোথায় বেশি ঝাঁকুনি হয়
মাটির স্তর থেকে শুরু করে ক্রুজিং উচ্চতার ওপর টার্বুলেন্স বেশি হয়। আপনি যেকোনো জায়গায় এটি অনুভব করতে পারেন। তবে হ্যাঁ, অবস্থানের ভিত্তিতে টার্বুলেন্সের ফ্রিকোয়েন্সি বা প্রকোপ পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিন ধরনের টার্বুলেন্স হতে পারে। প্রথমটি হলো, পরিষ্কার বায়ু টার্বুলেন্স। এটি মেঘহীন অঞ্চলে হঠাৎ ঘটে যাওয়া মারাত্মক টার্বুলেন্স, যা বিমানকে তীব্রভাবে নাড়িয়ে দেয়। এটি প্রায়ই জেট স্ট্রিম বাতাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি শীতকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশি দেখা যায়। কারণ, তখন জেট স্ট্রিম দক্ষিণে সরে যায়। দ্বিতীয়টি সংবহনজনিত টার্বুলেন্স, যাকে ‘তাপীয় টার্বুলেন্স’ও বলা হয়। এটি বজ্রঝড়সহ সংবহনশীল ঝড়গুলোতে ঘটে এবং শক্তিশালী ঊর্ধ্বমুখী ও নিম্নমুখী বায়ুপ্রবাহের কারণে সৃষ্টি হয়। এই ধরনের ঝাঁকুনি বজ্রঝড়ের অঞ্চলে বেশি হতে পারে। তৃতীয়টি হলো, পর্বত তরঙ্গ টার্বুলেন্স। এটি পাহাড়ের চূড়া থেকে বায়ুপ্রবাহের নিচে সৃষ্ট ঘূর্ণিজনিত টার্বুলেন্স। এই ধরনের ঝাঁকুনি পর্বতময় অঞ্চলের ওপর ও নিচে বেশি হয়।
টার্বুলেন্সের সময় সুরক্ষিত থাকার উপায়
টার্বুলেন্সের সময় সুরক্ষিত থাকার সেরা উপায় হলো ফ্লাইট ক্রুর নির্দেশাবলি অনুসরণ করা। আপনার হেডফোন কম ভলিউমে রাখুন, যাতে কোনো ঘোষণা এড়িয়ে না যায়। আপনি যদি ফ্লাইটে ঘুমানোর পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে আপনার সিটবেল্ট সব সময় বেঁধে রাখাই শ্রেয়। টার্বুলেন্স অপ্রত্যাশিতভাবে হতে পারে কিংবা যেকোনো সময় হতে পারে। এমনকি বিভিন্ন তীব্রতার আকস্মিক পরিবর্তন আসতে পারে। তাই নিজেকে মানসিকভাবেও প্রস্তুত করে রাখুন।
কেন টার্বুলেন্স নিয়ে চিন্তার কিছু নেই
বিমানের ঝাঁকুনির সাধারণ অনুভূতি অস্বস্তিকর বা বিরক্তিকর হতে পারে। কিন্তু এতে যাত্রীদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আধুনিক বিমানগুলো বাতাস, বজ্রপাত, তীব্র ঠান্ডাসহ বিভিন্ন আপাতদৃষ্টে বিপজ্জনক পরিস্থিতি সহ্য করার মতো করে তৈরি করা হয়েছে। তা ছাড়া ফ্লাইট যে অবস্থার মধ্যে উড়ে চলেছে, সে সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক থাকেন ফ্লাইটের সঙ্গে সম্পর্কিত কর্মকর্তারা। আবহাওয়াবিদ্যা-সম্পর্কিত তথ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ উন্নত পূর্বাভাস মডেলগুলোর কারণে এখন টার্বুলেন্সের অবস্থান, সময় ও তীব্রতা অনুমান করার ক্ষমতা অনেক বেড়েছে। পাইলটরা এখন এই পূর্বাভাসগুলো ব্যবহার করে মসৃণ রুট বেছে নিতে পারেন। অথবা তাঁরা এমন পথ বেছে নিতে পারেন, যেন সম্ভাব্য টার্বুলেন্ট পরিস্থিতির জন্য যাত্রী ও ক্রুদের প্রস্তুত করতে পারেন।
টার্বুলেন্স কি আরও খারাপ হচ্ছে
যেকোনো যাত্রায় বিপদ আসতে পারে। একেই মূলত দুর্ঘটনা বলা হয়। সে ক্ষেত্রে নন্দলাল হয়ে ঘরে বসে থাকা তো সম্ভব নয়। তাই বাস্তবতা মেনে নিয়ে জেনে রাখুন, হ্যাঁ, টার্বুলেন্স আরও খারাপ হচ্ছে। বিশেষজ্ঞের মতে, ‘সাধারণভাবে, ২০০০ সাল থেকে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলোর তীব্রতা বেড়েছে এবং এতে কোনো সন্দেহ নেই যে উষ্ণায়নের প্রবণতা জেট স্ট্রিমকে প্রভাবিত করে।’
ইউনিভার্সিটি অব রিডিংয়ের গবেষকদের ২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিষ্কার বায়ু টার্বুলেন্স বেড়েছে এবং ১৯৭৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে তা ৫৫ শতাংশ বেশি ঘন ঘন ঘটেছে। একই গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, এই ফলগুলো ‘জলবায়ু পরিবর্তনের প্রত্যাশিত প্রভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ’। তবে টার্বুলেন্স রিপোর্টিংও উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। উন্নত আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেল ও এআইয়ের কারণে এখন বিশেষজ্ঞরা সম্ভাব্য টার্বুলেন্সের ক্ষেত্রগুলো দ্রুত শনাক্ত করতে পারেন। তাই টার্বুলেন্সের ঘটনা বাড়লেও পাইলট ও আবহাওয়াবিদেরা ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করে কম টার্বুলেন্সের আশঙ্কাযুক্ত রুট বেছে নিচ্ছেন। তাই যাত্রীদের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে আপনি এখনো উদ্বেগে ভুগলে উড়ানের আগে টার্বুলেন্স পূর্বাভাস একবার দেখে নিতে পারেন।
সূত্র: ট্রাভেল+লিজার

Side banner