মাত্র কয়েকদিন আগেই গর্বে ভরে উঠেছিল দেশের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বেবিচক। যুক্তরাজ্যের পরিবহন দপ্তরের (ডিএফটি) আন্তর্জাতিক মূল্যায়নে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পেয়েছিল ৯৩ শতাংশ নম্বর, আর কার্গো নিরাপত্তায় শতভাগ। সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরও পিছিয়ে ছিল না সামগ্রিক মূল্যায়নে ৯৪ শতাংশ। যেন এক নতুন আত্মবিশ্বাসের গল্প শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের আকাশে। কিন্তু সেই আনন্দের ঠিক পরেই, ভেসে আসে ধোঁয়ার কালো মেঘ। শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে লেগে যায় ভয়াবহ আগুন। মুহূর্তেই পুড়ে যেতে থাকে গুদাম, জ্বলে ওঠে বিদেশি আমদানিপণ্য ভর্তি প্যাকেটগুলো।
ফায়ার সার্ভিসের ৩৬টি ইউনিট তখন জীবন বাজি রেখে আগুন নিয়ন্ত্রণে নামে। পাশে রয়েছে নৌ ও বিমানবাহিনীর দলও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যুদ্ধের পর তারা আগুনকে অনেকটা কাবু করে। সৌভাগ্যবশত, বিমানবন্দরের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়নি, যাত্রীদের নিরাপত্তাও ছিল নিশ্চিত।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এমন ঘটনা কি শুধুই দুর্ঘটনা, নাকি নিরাপত্তা ব্যবস্থার কোনো অদেখা ফাঁকফোকর? কারণ গত ১২ অক্টোবর বেবিচকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ডিএফটির এই মূল্যায়ন আসলে যুক্তরাজ্যের এক আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা যাচাই প্রক্রিয়া, যেখানে বিদেশি বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রী ও কার্গো নিরাপত্তা মানদণ্ড কেমনভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তা খুঁটিয়ে দেখা হয়।
এই মূল্যায়নের পেছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। ২০১৬ সালে কার্গো নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কারণে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের পণ্যবাহী ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। সেই সংকট কাটিয়ে উঠতে ২০১৭ সাল থেকে বেবিচক আধুনিক ডিটেকশন সিস্টেম, প্রশিক্ষিত জনবল এবং আন্তর্জাতিক মানের স্ক্রিনিং প্রযুক্তি যুক্ত করে। এই কঠোর পরিশ্রমের ফলেই শতভাগ নিরাপত্তার স্বীকৃতি এসেছিল। কিন্তু সেই শতভাগ পরিশ্রমের ফলই আগুনে পুড়ে কালো ধোঁয়া হয়ে উড়ে গেল।
আপনার মতামত লিখুন :