Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫, ২৬ আশ্বিন ১৪৩২

কুড়িগ্রামে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ


দৈনিক পরিবার | রফিকুল ইসলাম অক্টোবর ১১, ২০২৫, ০৭:২৫ পিএম কুড়িগ্রামে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ

কুড়িগ্রাম জেলা সদরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ। পুরাতন শহরের সুশীল সমাজের চাওয়াকে কেন্দ্র করেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। পথ চলার দীর্ঘ ৪০ বছরে জেলার অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে এই বে-সরকারি কলেজটি। 
জানা যায়, কুড়িগ্রাম শহরের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব মরহুম শামছুজ্জোহা রতন, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও বীরমুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মনসুর আলী টুংকু (বীর বিক্রম), বিশিষ্ট সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মজিবর রহমান, বিশিষ্ট সাংবাদিক মরহুম তোফায়েল হোসেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিধ মরহুম আতাউর রহমান, আইনজীবী মরহুম ইদ্রিস আলী, ব্যবসায়ী মরহুম ফনিন্দ্র মোহন সাহা, জনপ্রতিনিধি আজিজুল হক (ইউপি, চেয়ারম্যান) মোঃ ওমর ফারুক(ইউপি চেয়ারম্যান) সহ ২১ জন বিশেষ ব্যাক্তির জোড়ালো উদ্যোগ ও পদক্ষেপে ১৯৮৫ ইং সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ । আনসার অফিস নতুন শহরে স্থানান্তরের মাধ্যমে গওহর পার্ক খেলার মাঠে গড়ে তোলা হয় কলেজের অবকাঠামো। একটি টিনসেড ঘরে শুধুমাত্র এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে কলেজের যাত্রা শুরু করে কলেজটি আজ জেলার অন্যতম বিদ্যাপিঠে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে এই কলেজে এইচএসসি, এইচএসসি(বিম), বিএ/বিএসএস,অনার্স ৯ টি কোর্স ও উম্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের এইচএসসি ও বিএ/বিএসএস কোর্স চালু থাকায় সব মিলিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা তিন হাজারের উপরে রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন এমপিও এবং নন এমপিও মিলে প্রায় আশি জন,কর্মচারী ১২ জন কর্মরত আছেন। কলেজটিতে পরীক্ষার কেন্দ্র চালু আছে এইচএসসি, অনার্স ও উম্মুক্তর পরিক্ষাগুলোর । কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম হাবিবুল্লাহ বাহার খাঁন। এর পর আরো ১১ জন অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজটির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর মধ্যে সুনামের সাথে অধ্যক্ষর দায়িত্ব পালন করেন। আবুল কাশেম তালুকদার, মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও খাঁজা শরীফ উদ্দিন আলী আহমেদ রিন্টু।  মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের  বর্তমানে অধ্যক্ষের চেয়ারে আছেন মোঃ আবেদ আলী আবেদ আলী এর আগে কাঁঠালবাড়ী কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। কলেজের শিক্ষার্থী রোকসানা খাতুন,রুমা আক্তার, শরিফুল ইসলাম, সুমন সরকার বলে, আমরা এই কলেজে লেখা পড়া করে ধন্য হয়েছি। কলেজের সকল কার্যক্রম পূর্বের ধারাবাহিকতায় সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়ে থাকে। যার ফলে আমাদের পরীক্ষার ফলাফল ভালো করতে পারি। স্থানীয় তৌহিদুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, মাহবুবুর রশীদ তালুকদার বলেন,পুরাতন শহরকে এখন সবাই মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ দিয়েই চেনেন। এই এলাকায় কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে সুনামের সাথে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। কলেজের কেন্টিন বন্ধ থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। কিছু খেতে হলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কলেজের বাহিরে আসতে হয় ।এটি ভালো দেখায় না। সম্প্রতি সময়ে  মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজে ৪০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগকে অপপ্রচার বলে মন্তব্য করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবেদ আলী। তিনি বলেন, আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য একটি কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য প্রমাণ করতে না পারলে এটি মিথ্যা প্রমাণিত হবে। অধ্যক্ষ মোঃ আবেদ আলী ২০২৩ সালের ৮ আগস্ট কুড়িগ্রাম মজিদা আদর্শ ডিগ্রি কলেজে মেধার ভিত্তিতে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন। এর আগে তিনি ১৯৯৭ সাল থেকে কাঁঠালবাড়ি ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠানটির ব্যাপক উন্নয়ন হয়। সম্প্রতি ১২ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য একটি মহল নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে অপপ্রচার চালায়। অভিযোগে বলা হয়, উপাধ্যক্ষ ও অফিস সহকারী পদে নিয়োগের জন্য প্রায় ৪০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। তবে সরেজমিন খোঁজখবর নিয়ে পাওয়া যায় ভিন্ন চিত্র।
নিয়োগ প্রক্রিয়া যাতে সবার কাছে স্বচ্ছ থাকে তার জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি দেখে উপাধ্যক্ষ পদে ১৩ জন আবেদন করেন, লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন ৬ জন, এর মধ্যে ২ জন অকৃতকার্য হন এবং ভাইভায় অংশ নেন ৪ জন। সবশেষে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এটি এম মো. আসাদুল ইসলাম উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। অপরদিকে অফিস সহকারী পদে ৩ জন আবেদন জমা দেন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রমাণিত হয়ে চাকরি পান হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আউয়াল হোসেন।
নিয়োগের সুষ্ঠুতা নিশ্চিতে বোর্ডে দায়িত্ব পালন করেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা নাসির উদ্দিন, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ইস্রাফিল শাহিন। তবে ওই প্রতিনিধির হাতে যাতায়াত ভাতা দেয়ার নিয়মকেই অপপ্রচারে ঘুষ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অতিথি সদস্যদের যাতায়াত খরচ বহন করতেই হয়। কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবেদ আলী আরো বলেন, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৪০ বছরে কলেজের নিজস্ব অর্থায়নে একটি তিন তলা প্রশাসনিক ভবন, একটি দুই তলা ক্লাসরুম ভবন, একটি তিন তলা ক্লাস রুম ভবন ও সরকারি বরাদ্দে একটি চারতলা ভবন এবং টিন সেড এক তলা দুটি ভবন আছে। কলেজে একটি করে বিজ্ঞানাগার, লাইব্রেরী,কম্পিউটার ল্যাব, ছাত্রী ও শিক্ষক কমন রুম রয়েছে । কলেজের প্রায় অর্ধেক শিক্ষক -কর্মচারীরা নন এমপিও ভুক্ত থাকায় তাদের কলেজের আয় থেকে বেতন/ভাতা প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও এমপি ভুক্ত শিক্ষক- কর্মচারীরাও বাড়ি ভাড়া পান কলেজের আয় থেকে। কলেজের প্রসার বড় তাই ব্যায়ও অনেক বেশি। অনেক সময় কলেজের ব্যায় পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। তার মধ্যে এবারে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ভালো না হওয়ায় এইচএসসির ভর্তি অনেক কমে গেছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ এটি এম মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে ৩০-৪০ লাখ টাকা থাকার প্রশ্নই আসে না। আমি লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি মেধার ভিত্তিতে। যদি এত টাকা আমার কাছে থাকতো তবে কি আমি এই পদে আসতাম?অন্যদিকে অফিস সহকারী আউয়াল হোসেন বলেন, আমি গরীব ছেলে। কষ্ট করে এই চাকরিটা পেলাম। এখন এটাতেও মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। বিচার একমাত্র সৃষ্টিকর্তার কাছেই দিলাম।
সব মিলিয়ে বলা চলে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় মজিদা  আদর্শ ডিগ্রী কলেজ ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ।

Side banner