তীব্র শিক্ষক সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) ৬০টি শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রতিন্যা গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে থমকে আছে। দু’টি পৃথক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরেও প্রশাসনিক দুর্বলতা ও নানা টালবাহানার কারণে এই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
২০২৪ সালের মার্চ ও জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক এবং প্রভাষক মিলে মোট ৬০টি শূন্য পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এর মধ্যে প্রভাষক পদই ছিল ৫১টি। তবে, গত ৭জুলাই হঠাৎ করেই প্রকাশিত ৫১টি প্রভাষক পদের মধ্যে মাত্র ১০টি পদে পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর তোড়জোড় শুরু করা হয়, যা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।
জানা যায়, নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হওয়া ১০টি প্রভাষক পদের বেশিরভাগই তুলনামূলক কম শিক্ষক সঙ্কট থাকা বিভাগগুলোর জন্য ছিল। অভিযোগ উঠেছে, এর মূল উদ্দেশ্য ছিল কয়েকটি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকদের পদোন্নতি দিয়ে অধ্যাপক পদে উন্নীতকরণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের ভাষ্যমতে, অধ্যাপক পদে উন্মুক্ত নিয়োগ দিলে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীরা পিছিয়ে পড়তে পারেন এবং এতে আরো
জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই কৌশল হিসেবে, প্রথমে অধ্যাপক পদের বিপরীতে প্রকাশিত প্রভাষক পদে নিয়োগ সম্পন্ন করে সেই অধ্যাপক পদগুলোকে ‘রক’ করা হবে এবং পরবর্তীতে অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের আপগ্রেডেশন দিয়ে সেটি পূরণ করা হবে।
পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত বিভাগগুলো হলো গণিত, সমাজবিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, মার্কেটিং, কোস্টাল কোস্টাল স্টাডিজ অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ এবং মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান। পরিসংখ্যান বাদে বাকি ছয়টি বিভাগেই মূলত অধ্যাপক পদের বিপরীতে প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
এদিকে, সমাজকর্ম এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মতো একাধিক বিভাগে শিক্ষক সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করলেও সেগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হচ্ছে না। এই দু’টি বিভাগে মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে সাতটি করে ব্যাচের ক্লাস কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ফলে একেকজন শিক্ষককে সাত-আটটি করে কোর্স পড়াতে হচ্ছে। নতুন ইউজিসি নীতিমালায় খণ্ডকালীন বা বাইরের কোর্সশিক্ষক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা থাকায় শিক্ষকদের ওপর চাপ আরো বেড়েছে।
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত জাহান বলেন, মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে একটি ডিপার্টমেন্ট চালানো হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য খুবই দুর্ভোগের। শিক্ষকের এই তীব্র সঙ্কট শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও শিক্ষাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শুভব্রত মণ্ডল বলেন, শিক্ষক সঙ্কট থাকায় শিক্ষকরা অনেক সময় আমাদের দিকে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারেন না। আমরা চাই, দ্রুত এ বিষয়টি সমাধান করা হোক। সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান আবু জিহাদ বলেন, ‘মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে একটা ডিপার্টমেন্ট চালানো কোনোভাবেই সম্ভব না। আমি নিজে বারবার ভিসির সাথে কথা বলেছি দ্রুত শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম শুরণর জন্য।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মুহসিন উদ্দীন জানান, বাকি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের পুনঃবিজ্ঞপ্তিতে কোনো বাধা নেই। তবে, ইউজিসি থেকে নিয়োগের অনাপত্তিপত্র ছাড় দেয়ার পরেই কেবল আমরা কাজ শুরু করতে পারি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম পরিস্থিতি ‘স্বীকার করে বলেন, যে অর্থবছরে পদ ছাড় করা হয়েছে সেই অর্থবছরে নিয়োগ না দিতে পারায় পদগুলো ইউজিসি ব্লক করে দিয়েছে। এখন পদগুলো ছাড় করানোর জন্য চিঠি দেয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :