জুলাই সনদ স্বাক্ষরের আগে অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নেওয়া ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে সরিয়ে দেওয়াকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে দুইজনকে আটকের তথ্য দিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে ওই ঘটনার সময় পুলিশের অন্তত পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সড়কে পুলিশ ও র্যাবের অস্থায়ী কন্ট্রোলরুমে ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া বিক্ষোভকারীদের ঢিলের আঘাতে পুলিশের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপকমিশনার তানভীর আহমেদসহ অন্তত ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা ঘটনাস্থল থেকে দুইজনকে আটক করেছি, তাদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।
এ বিষয়ে একটি মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
র্যাবের অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম পোড়ানোর ঘটনায় মামলা হবে কিনা জানতে চাইলে এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, আইনি সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের দাবিত এদিন দুপুরে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে কয়েকশ মানুষ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চের সামনে অবস্থান নেন। শুক্রবার সকালে তারা জাতীয় সংসদ ভবনের প্রবেশের ফটক টপকে ভেতরে ঢুকে দক্ষিণ প্লাজায় সনদ স্বাক্ষর মঞ্চের সামনে পৌঁছে যান।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাধা উপেক্ষা করে তারা মঞ্চের সামনে অতিথিদের জন্য রাখা চেয়ারে বসে পড়েন। আরেকটি গ্রুপ গেইটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখানো অব্যাহত রাখে। আয়োজকরা বিভিন্নভাবে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করার এবং সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
এক পর্যায়ে ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি আলী রীয়াজ মঞ্চে এসে জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। তাদের দাবির মুখে সনদের অঙ্গীকারনামার ৫ নম্বর দফার সংশোধিত ভাষ্য পড়েও শোনানো হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্রমেই সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা এলাকায় বাড়ানো হয় সেনা, পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা। মোতায়েন করা হয় বিজিবি, এপিবিএন, র্যাব ও ডিএমপির সোয়াত টিমের সদস্যদের। কারও কথাতেই ‘জুলাই যোদ্ধারা’ মঞ্চ ছাড়তে রাজি না হলে বেলা দেড়টার দিকে বিপুল পরিমাণ পুলিশ ও এপিবিএন সদস্য বেস্টনী দিয়ে বলপ্রয়োগ করে তাদেরকে দক্ষিণ প্লাজা থেকে বের করে আনেন। এ সময় লাঠিচার্য ও ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে।
ভেতরে অবস্থান নেওয়া গেইটের কাছাকাছি এলে বাইরে অবস্থানরতরা পাল্টা ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। তবে আইনশঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বাধায় সবাই গেইটের বাইরে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এ সময় ‘জুলাই যোদ্ধারা’ সংসদ ভবনের বাইরে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া দিয়ে ও লাঠিপেটা করে তাদেরকে সরিয়ে দেয়। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেডও ব্যবহার করে পুলিশ। ধাওয়া খেয়ে একটি গ্রুপ খামারবাড়ির দিকে ও আরেকটি গ্রুপ আড়ংয়ের দিকে সরে যেতে থাকে। আন্দোলনকারীরা ইট পাটকেল ছুড়তে ছুড়তে এগিয়ে আসতে চাইলে পুলিশ পাল্টা টিয়ারশেলও ছোড়ে।
পুলিশের ধাওয়া খেয়ে ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ আড়ংয়ের দিকে যাওয়া গ্রুপটি সেচ ভবনের সামনে তাঁবু দিয়ে বানানো পুলিশ ও র্যাবের দুটি অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম এবং টায়ার ও কাঠ একসঙ্গে করে আগুন ধরিয়ে দেন। এর আগে কন্ট্রোল রুমে থাকা নানা আসবাব, সিসিটিভি ক্যামেরা, ফ্যান, এসিসহ প্রায় সবকিছু ভাংচুর করা হয়।
পুলিশের লাঠিপেটায় আহত কয়েকজনকে এ সময় হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধাওয়ায় বিক্ষোভকারীরা খামারবাড়ি মোড় ও আসাদ গেটের দিকে অবস্থান নেন। বেলা ২টার দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর পুরো সড়কের নিয়ন্ত্রণ নেয় পুলিশ। জুলাই যোদ্ধারের একটি গ্রুপ আড়ংয়ের দিকে, আরেকটি গ্রুপ খামার বাড়ির দিকে অবস্থান নেয়। তখনও থেমে থেমে সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
এ সময় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সড়কে বন্ধ হওয়া যান চলাচল সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান শেষ হওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে রাখে পুলিশ।
আপনার মতামত লিখুন :