Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না ভূমি অফিসে


দৈনিক পরিবার | স্টাফ রিপোর্টার জুলাই ১৪, ২০২৫, ১২:০৭ পিএম ঘুষ ছাড়া ফাইল নড়ে না ভূমি অফিসে

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে মিউটেশনে এক থেকে দশ হাজার, অন্যান্য কাজে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ ছাড়া সেবা মেলে না সেখানে। অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তহশিলদার জহিরুল হকের বিরুদ্ধে এসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শুধু চতুল নয়, এমন চিত্র পুরো বোয়ালমারীর বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসজুড়ে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঘুষ দিলে কাজ হয়, না দিলে কাজ হয় না। জমির নামজারি, খতিয়ান দেখানো, তদন্ত প্রতিবেদন, খাজনা আদায় প্রতিটি ধাপে ধাপে দিতে হয় ঘুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তহশিল অফিসের পাশে সেলিম মুন্সি, পান্নু শেখ, জাহিদ ঠাকুর, সাইফার হোসেনের দোকান রয়েছে। দোকানগুলোতে ভূমি সংশ্লিষ্ট অনলাইনে কাজ সম্পন্ন করা হয়। এসব দোকান থেকেই জমিজমার কাজ করতে আসা মক্কেল ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তহশিলদারদের কাছে। যেখানে একটি মিউটেশনের সরকারি চার্জ ১১৭০ টাকা, সেই কাজের জন্য নেওয়া হয় প্রকারভেদে দুই হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আহসান হাবিব হাসান বলেন, ভূমি অফিসে অতিরিক্ত অর্থ এক কথায় ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল নড়াচড়া করে না। এমনকি এসিল্যান্ড অফিসেও যায় না। কমপক্ষে ৪-৫ হাজার টাকা দিলে জমির মিউটেশন কাজ হয়। চতুল ইউনিয়নবাসী যেই উনার (জহিরুল হক) কাছে কাজে গেছেন তিনিই চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। আমরা সবার স্বাক্ষর নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
উপজেলার চতুল বাইখীর গ্রামের নিয়ামুল হক ফয়সাল ও বাইখীর চৌরাস্তা এলাকার মিলন শেখ অভিযোগ করে বলেন, চতুল ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তহশিলদার জহিরুল হক নিজের নিয়ন্ত্রণে কয়েকজন দালাল রেখে সেবা গ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিনি নিজেই অফিসের খরচের কথা বলে অতিরিক্ত অর্থ নেন।
এহরামুজ্জামান নামে একজন সেবাপ্রত্যাশী বলেন, বেশ কিছুদিন আগে বাবা মারা গেছেন। বাবার নামে রেকর্ড সম্পত্তি নাম জারি করার জন্য গিয়েছিলাম চতুল ভূমি অফিসে। ওই অফিসে বেশ কয়েকবার যাওয়ার পর কোনো কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে তহশিলদার বললেন অফিস খরচ না দিলে কীভাবে ফরোয়ার্ডিং হবে? বাধ্য হয়ে এক হাজার টাকা দিয়ে আমার কাজটা করতে হয়েছে।
গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা থেকে মিউটেশন করতে আসা সৌদি প্রবাসী নাজমুল হোসেন বলেন, ৮ শতাংশ জমির মিউটেশন করতে সরকারি জমা টাকার বাইরে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। দশ হাজার টাকা দিলে সাত দিনের মধ্যে কাজটি করে দেওয়া হবে। না হলে দিনের পর দিন ঘুরতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোয়ালমারী বাজারের এক কম্পিউটার দোকান মালিক বলেন, তার (জহিরুল হক) বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ শতভাগ সঠিক। আচার ব্যবহার ভালো না। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলার চতুল ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তহশিলদার জহিরুল হকের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে চতুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নবাসীর অনেকের কাছ থেকেই তহশিলদার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম অভিযোগ ও খবর পেয়েছি।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনলাইন সার্ভিস চালু হওয়ার ফলে অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতি কমেছে, তবে অনেকেই এই বিষয়টি ভালোভাবে না বুঝতে পারার কারণে দালালের খপ্পরে পড়েন। তখন তাদের অতিরিক্ত অর্থ নষ্ট হয়। মিডিলম্যানের কাছে না গিয়ে সরাসরি এসিল্যান্ড অফিসে আসুন।
এ বিষয়ে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভির হাসান চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগীদের লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Side banner