জাতীয় ফুটবল চ্যাাম্পিয়নশিপের ফাইনাল হয়েছে ফাইনালের মতোই। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে দিনাজপুর ৩-২ গোলে সিরাজগঞ্জকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দিনাজপুর খেলার এক পর্যায়ে দুই গোলে এগিয়ে ছিল। সিরাজগঞ্জ ম্যাচের শেষ দিকে ২-২ গোলে সমতা আনে। অতিরিক্ত সময়ে দিনাজপুর আরেক গোল করে। সিরাজগঞ্জ নিশ্চিত কয়েকটি গোলের সুযোগ মিস করায় শেষ পর্যন্ত দিনাজপুর ট্রফি নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
অধিনায়ক সাগর মোহান্তর গোলে ১৩ মিনিটে লিড নেয় দিনাজপুর। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে উঠে সাগরকে বক্সের বাইরে থেকে আড়াআড়ি ক্রস দেন মিডফিল্ডার ইয়াসিন আলী। গোলমুখের সামনে দারুণ হেডে লক্ষ্যভেদ করেন সাগর। শুরু থেকে প্রতিপক্ষের বক্সের একাধিক আক্রমণ করলেও সমতায় ফিরতে পারেনি সিরাজগঞ্জ। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় দিনাজপুর।
৬০ মিনিটে বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে বাঁ পায়ের ফ্রি কিক শটে দিনাজপুরের লিড দ্বিগুণ করেন প্রদীপ সরেন। দুই মিনিট পর উজ্জ্বল হোসেনের দারুণ গোলে ব্যবধান কমায় সিরাজগঞ্জ। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে একাই বক্সে ঢুকে নিচু শটে গোলকিপার মাসুদ রানাকে পরাস্ত করেন উজ্জ্বল।
এক গোল পরিশোধের পর আরো উজ্জীবিত হয়ে ওঠে সিরাজগঞ্জ। দুই মিনিট পর আরো একবার গোল মুখের সামনে প্রতিপক্ষের গোলকিপারকে পাস্ত করতে ব্যর্থ হন সিরাজগঞ্জের ফরোয়ার্ড আলী। নির্ধারিত সময় শেষে ইনজুরি সময়ে পেনাল্টি পায় সিরাজগঞ্জ। সফল স্পটকিকে দলকে ২-২ সমতায় ফেরান হাসান আলী। এতে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ে শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারত সিরাজগঞ্জ। নিজেদের ভুলে সুযোগ হাতছাড়া করে দলটি। তবে অতিরিক্ত সময়ের ১১ মিনিটে দারুণ এক ভলিতে ইয়াসিন আলী দিনাজপুরকে ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে দেন। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করে সিরাজগঞ্জ। ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় আর গোল হয়নি। এতে রানার্স আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় সিরাজগঞ্জকে।
দিনাজপুরের জয়ের নায়ক ইয়াসিন বলেন, ‘আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল জিতব। আর জেতায় অবদান রাখতে পেরে খুশি অনেক।’
তিনি আরো বলেন, ‘২-২ গোলে ওরা সমতায় ফেরার পর আমরা মনোবল হারাইনি। জানতাম সুযোগ আসবে, এবং আমরা জিততে পারব। আমার স্বপ্ন তো অনেক বড়। জানি না কতদূর যেতে পারব। দেখা যাক কী হয়।’
দিনাজপুর ঐতিহ্যবাহী ও অনেক পুরানো জেলা হলেও জাতীয় ফুটবলে কখনো চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। জেলার ফুটবলে গৌরব যোগ করতে পারায় তৃপ্ত কোচ শামীম আহমেদ, ‘ওরা (সিরাজগঞ্জ) অনেক শক্ত মানসিকতা দেখিয়েছে। দুই গোল দিয়ে ম্যাচে ফিরেছে। আপনারা দেখেছেন অতিরিক্ত সময়ে আমি পরিকল্পনা বদলাই। মধ্যমাঠে শক্তি বাড়াতে বাড়তি একজনকে খেলাই। তাতে সফলতাও পেয়েছি। তবে সব কৃতিত্ব দেবো আমার খেলোয়াড়দের। ওরা শুরু থেকে অনেক কষ্ট করেছে, পরিশ্রম করেছে।’
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলেও ফাইনাল ম্যাচের উদ্বোধন করেছিলেন। ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুব উল আলম চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে ট্রফি তুলে দেন। এ সময় বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল, ফেডারেশনের সহ-সভাপতি ও জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরি হ্যাপিসহ ফেডারেশনের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিন বছর পর জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজন করেছে ফেডারেশন। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করতে পারায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক জেলায় স্টেডিয়ামের সমস্যা ছিল। আমরা সেগুলো উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, মন্ত্রণালয়, ফেডারেশন, জেলা প্রশাসন সকলের সহায়তায় এই টুর্নামেন্ট সফল হয়েছে। আগামীতে আমরা জেলা পর্যায়ের ফুটবলকে আরো জোরদার করব।’
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকরা জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা, বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের টিকিটের আয়-ব্যয় নিয়ে বাফুফে সভাপতিকে প্রশ্ন করেছিলেন। এগুলোর কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দেননি, ‘এসব (কোচ) নিয়ে আমরা পরে আলাপ করব, আজ জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল নিয়েই থাকি। আমরা বছরের শেষে বার্ষিক হিসাব করব। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রাপ্যও আমরা দেবো। তাদের প্রতিও আমরা একাউন্টেবল।’
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ফুটবল। অথচ ফুটবলের নেই নিজস্ব কোনো স্টেডিয়াম। আজ ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব পূর্বাচলে ফুটবলের জন্য স্বতন্ত্র স্টেডিয়ামের পরিকল্পনার কথা বলেছেন, ‘ফুটবলের জন্য আলাদা স্টেডিয়াম অবশ্যই প্রয়োজন। পূর্বাচলে আমরা পরিকল্পনা করছি। এটা আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এটার প্রক্রিয়া করতে কয়েক বছর সময় লাগে।’
পূর্বাচলে আলাদা ফুটবল স্টেডিয়াম নিয়ে কয়েক বছর ধরেই আলোচনা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। বাফুফে কত দিন অপেক্ষা করবে সেটাই দেখার বিষয়।








































আপনার মতামত লিখুন :