ভারত ও ওমানের মধ্যকার এশিয়া কাপের শেষ গ্রুপপর্বের ম্যাচটি অনেকটাই নিয়মরক্ষার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল। ফলে জাসপ্রিত বুমরাহ’র মতো প্রধান পেসারকে বিশ্রামে রেখেছিল ‘এ’ গ্রুপ থেকে আগেই সুপার ফোর নিশ্চিত করা ভারত। তবে আইসিসির সহযোগী দেশটি ম্যাচে তাদের পুরোপুরি স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি। ভারতের ১৮৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় তারা পাল্টা লড়াই চালায়, যদিও শেষমেষ থেমেছে ১৬৭ রানে।
আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে গতকাল (শুক্রবার) আগে ব্যাট করতে নামা ভারত চেয়েছিল সুপার ফোরের আগে নিজেদের ব্যাটিংটা ভালোমতো ঝালিয়ে নিতে। সম্ভবত তাদের সেই প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। তবে সবাইকে ব্যাটিংয়ের সুযোগ করে দিতে গিয়ে অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের ব্যাট না করা, ব্যাটারদের পজিশনে ওলট-পালট কিংবা পরের ইনিংসে আট বোলারকে ব্যবহার যে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশ ছিল, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
এদিন ভারত মাত্র ৬ রানেই ওপেনার শুভমান গিলের (৫) উইকেট হারায়। তার আউট হওয়া দ্বিতীয় ওভারে দলটি কোনো রানও নিতে পারেনি। যা ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে কোনো সহযোগী দেশের হয়ে প্রথম (বোলার ফয়সাল শাহ)। তবে আরেক ওপেনার অভিষেক শর্মা (১৫ বলে ৩৮) নিজের ছন্দেই খেলেছেন। তিনে নামেন সঞ্জু স্যামসন। তার ব্যাটে ভারত সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান (৪৫ বলে ৫৬) পেলেও ধীরগতির ইনিংস খেলেন তিনি। চার নম্বরে নেমে ব্যর্থ হার্দিক পান্ডিয়া (১)।
ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন অক্ষর প্যাটেল (১৩ বলে ২৬), তিলক ভার্মা (১৮ বলে ২৯) ও হার্শিত রানা (৮ বলে ১৩)। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৮৮ রান তোলে ভারত। যা চলমান এশিয়া কাপে যৌথভাবে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ১০ ব্যাটার ক্রিজে এলেও নামা হয়নি অধিনায়ক সূর্যকুমারের। ওমানের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন শাহ ফয়সাল, জিতেন রামানন্দি ও আমির কালিম।
লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ধীরগতির ছিল ওমানের। তবে তাদের করা ৪৪ রান এবারের এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে সর্বোচ্চ। এর আগে বুমরাহদের বিপক্ষে প্রথম ৬ ওভারে আরব আমিরাত ৪১ এবং পাকিস্তান ৪২ রান তোলে। এ ছাড়া ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর এবারই প্রথম পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষের কোনো উইকেট নিতে পারেনি ভারত। এটি পূর্ণ সদস্য দেশের বিপক্ষে ওমানের জন্যও প্রথম। পরবর্তীতে দলীয় ৫৬ রানে ওপেনার জতিন্দর সিং (৩৩ বল ৩২) আউট হয়েছেন।
তৃতীয় উইকেটে অপর ওপেনার আমির কালিম ও হাম্মাদ মির্জা মিলে গড়েন ৯৩ রানের জুটি। দ্বিতীয় ইনিংসের ১৪ ওভার শেষ হতেই ভারত ৮ বোলার ব্যবহার করে ফেলে। যা আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। এর আগে এক ইনিংসে ৮ বোলার ব্যবহারের নজির রয়েছে ৫ বার। এর পরপরই ৩৭ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ হয় আমির কালিমের। যা টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে সবচেয়ে বেশি বয়সী (৪৩ বছর ৩০৩ দিন) ব্যাটার হিসেবে ফিফটির রেকর্ড। একদিন আগেই ওই রেকর্ডটি দখলে ছিল মোহাম্মদ নবির (৪০ বছর ২৬০ দিন)। ৪৬ বলে ৬৪ রানে আউট হয়েছেন কালিম।
হাম্মাদের সঙ্গে গড়া কালিমের ৯৩ রানের জুটি ভারতের বিপক্ষে কোনো সহযোগী দেশের সর্বোচ্চ। ওমানও কোনো পূর্ণ সদস্য দেশের বিপক্ষে প্রথমবার এত বড় জুটি গড়ল। ৩০ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন হাম্মাদও। খানিক বাদেই তিনি আউট হয়ে যান। তিনি আউট হওয়ার সময়ে ওমানের স্কোর ছিল ১৫৪/৩। ৭ বলে তাদের প্রয়োজন ছিল ৩৪ রান। অসম্ভব মনে হলেও শেষ ওভারে ৩টি চারে ব্যবধান কমিয়েছে ওমান। এর আগে ইনিংসের মাঝপথে তারা ভারতকে হারিয়ে দেয় কি না তেমন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দেশটি হেরেছে ২১ রানে।
এদিকে, ভারতের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম ১০০ উইকেট (৬৪ ম্যাচ) নেওয়ার রেকর্ড গড়লেন আর্শদীপ সিং। সবমিলিয়ে পূর্ণ সদস্য দেশের হিসাবে বাঁ-হাতি এই পেসারের উইকেটের সেঞ্চুরি তৃতীয় দ্রুততম। ৫৩ ম্যাচে রশিদ খান ও ৬৩ ম্যাচে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ১০০তম উইকেট শিকার করেছিলেন। ভারতের পক্ষে ম্যাচটিতে আর্শদীপ ছাড়াও একটি করে উইকেট নেন পান্ডিয়া, কুলদীপ যাদব ও হার্শিত।
আপনার মতামত লিখুন :