 
                                    
            রাতে একা একা ঘুরে বেড়াতে আপনি কি নিরাপদ বোধ করেন? বেশির ভাগ মানুষ এ প্রশ্নে নেতিবাচক উত্তর দেবেন। কিন্তু বিশ্বে এমন অনেক দেশ রয়েছে, যেখানে রাতে একা হাঁটতে বের হওয়া বা ঘোরাফেরা করা নিরাপদ। মহাদেশভিত্তিক তালিকা দেখলে এশিয়ায় এমন দেশের সংখ্যা বেশি। সম্প্রতি গ্যালাপ এ বছরের গ্লোবাল সেফটি রিপোর্ট অনুযায়ী রাতে হাঁটা বা ঘোরাফেরার জন্য নিরাপদ দেশের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। 
তালিকাটি করা হয়েছে বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার সাধারণ ধারণাগুলোর ওপর নির্ভর করে। এশিয়ার দেশ হওয়া সত্ত্বেও সে তালিকায় নেই বাংলাদেশ, ভারত কিংবা নেপাল, ভুটানের মতো দেশগুলোর নাম।
১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ১ লাখ ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে করা এ সমীক্ষাটি বিশ্বজুড়ে জনসাধারণের নিরাপত্তা আস্থার একটি চিত্র তুলে ধরেছে। কিছু দেশ লিঙ্গনির্বিশেষে নিরাপত্তার প্রায় সর্বজনীন আস্থা বজায় রেখেছে। আর কিছু দেশে লিঙ্গবৈষম্য ও লিঙ্গভিত্তিক অপরাধের চিত্র রয়েছে। অন্ধকার হওয়ার পর যে দেশের বাসিন্দারা বেশি সুরক্ষিত বোধ করে, তেমন শীর্ষ ৩০টি দেশের নাম রয়েছে এ তালিকায়।
সর্বোচ্চ নিরাপদ দেশগুলো
এ তালিকায় সবচেয়ে নিরাপদ দেশ সিঙ্গাপুর। দেশটির ৯৮ শতাংশ মানুষ রাতে রাস্তায় হাঁটা নিরাপদ বলে মনে করেন। অপরাধের কম হার, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং সামাজিক শৃঙ্খলা এর কারণ। সিঙ্গাপুরের পরই রয়েছে তাজিকিস্তান। দেশটির ৯৫ শতাংশ মানুষ রাতে একা চলাফেরা করার ক্ষেত্রে সুরক্ষিত বোধ করেন। সীমিত রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার নিয়েও এ দেশের বাসিন্দারা পুলিশি ব্যবস্থা এবং শক্তিশালী সামাজিক বন্ধনের মধ্যে আবদ্ধ।
এর পরই রয়েছে ওমান ও চীন। এ দুটি দেশের ৯৪ শতাংশ মানুষ রাতের বেলা রাস্তায় হাঁটতে নিরাপদ বোধ করেন। শান্তি ও আতিথেয়তার জন্য খ্যাত ওমানের খ্যাতি রাতের রাস্তায়ও প্রসারিত। ধারাবাহিক পুলিশিং ও কম অপরাধপ্রবণতা দেশটির নাগরিকদের রাতের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এমন মনোভাবের অন্যতম কারণ। 
এদিকে চীনে অনেক বাসিন্দা, বিশেষ করে প্রধান শহর ও পরিবহন কেন্দ্রগুলোতে রাতে একা ঘোরাফেরা করার ক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ করার কথা জানান। দেশটিতে জননিরাপত্তার জন্য ব্যাপক পুলিশিং ও নজরদারির ব্যবস্থা আছে। এরপরই রয়েছে সৌদি আরব। দেশটির ৯৩ শতাংশ মানুষ রাতে রাস্তায় হাঁটতে নিরাপদ বোধ করেন। শহুরে নিরাপত্তা ও গণ-অবকাঠামোতে চলমান বিনিয়োগের পাশাপাশি সৌদি আরব ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ দেশগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে।
তালিকায় এরপর একসঙ্গে রয়েছে কুয়েত, নরওয়ে ও হংকং এই তিনটি দেশ ও অঞ্চল। এসব দেশ ও অঞ্চলের ৯১ শতাংশ মানুষ রাতে রাস্তায় হাঁটতে বের হলে নিরাপদ বোধ করেন। এশিয়ার অন্যতম নিরাপদ শহর, কার্যকর পুলিশি ব্যবস্থা, নির্ভরযোগ্য পরিবহন ও শক্তিশালী নাগরিক শৃঙ্খলা, অন্ধকার নামার পরও এসব দেশ ও অঞ্চলের বাসিন্দাদের সুরক্ষিত বোধ করতে সহায়তা করে। কুয়েতের নাগরিকদের নিরাপত্তার এই উচ্চ অনুভূতি এসেছে মূলত সামাজিক সংহতি ও দৃশ্যমান আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণে। নরওয়ের সামাজিক আস্থা এবং কম অপরাধের হার দেশটিকে ইউরোপের অন্যতম নিরাপদ দেশ করে তুলেছে। চমৎকারভাবে সজ্জিত আলোকিত রাস্তা ও সামাজিক সতর্কতা নরওয়েজিয়ানদের সূর্যাস্তের পরও অবাধে চলাচলের জন্য উৎসাহিত করে।
তালিকায় এরপর রয়েছে বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ দুটি দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ রাতের রাস্তায় নিজেদের সুরক্ষিত মনে করেন। বাহরাইনের আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ওপর ব্যাপক আস্থা সৃষ্টি করেছে। এদিকে পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ শহুরে পরিবেশের জন্য পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইউএইর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি আস্থা বজায় রেখে এখানকার বাসিন্দা ও পর্যটক উভয়ই রাতে নিরাপদ বোধ করেন।
নব্বই শতাংশের নিচে যে দেশগুলো
কসোভো ও ডেনমার্কের ৮৯ শতাংশ মানুষ নিজেদের রাতের রাস্তায় নিরাপদ মনে করেন। কসোভোর দ্রুত উন্নয়ন ও ক্রমবর্ধমান সামাজিক সংহতি নিরাপত্তার অনুভূতি বাড়িয়েছে। উন্নত অবকাঠামো এবং সামাজিক কর্মসূচি নাগরিকদের আগের চেয়ে বেশি সুরক্ষিত বোধ করতে সহায়তা করে। ডেনমার্ক অধিবাসীদের সমতা ও নাগরিকদের দায়িত্বজ্ঞানের ওপর জোর দেয়। এ দুটি কারণে দেশটির শক্তিশালী নিরাপত্তা রেকর্ডের ভিত্তি। দেশটির শহরগুলোতে চমৎকার আলো এবং পুলিশের সক্রিয় উপস্থিতি রাতের পথচারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করে।
ভিয়েতনাম, সুইজারল্যান্ড, আইসল্যান্ড ও ফিনল্যান্ডের ৮৮ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তাঁরা রাতের রাস্তায় নিরাপদ। ভিয়েতনামের শহুরে এলাকাগুলো, বিশেষ করে সক্রিয় রাতের অর্থনীতি এবং দৃশ্যমান নিরাপত্তা টহলের কারণে নিরাপদ। সুইজারল্যান্ডের কার্যকর আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সুশৃঙ্খল শহরগুলো স্থিতিশীল ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করে। এর সংরক্ষিত অবকাঠামো রাতের নিরাপত্তার প্রতি শক্তিশালী জন-আস্থা বজায় রাখতে অবদান রেখেছে। বিশ্বে সর্বনিম্ন অপরাধপ্রবণতার হার যেসব দেশে, সেগুলোর মধ্যে আইসল্যান্ড অন্যতম। কম অপরাধপ্রবণতা ও সরকারের প্রতি উচ্চ জন-আস্থা রাতে একা হাঁটা দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে ফিনল্যান্ডে। বাসিন্দারা কার্যকর পুলিশিং এবং শক্তিশালী কল্যাণমূলক ব্যবস্থার কৃতিত্ব দেয় তাদের নিরাপত্তার অনুভূতির জন্য।
তাইওয়ান, মন্টেনেগ্রো ও এল সালভাদরের ৮৭ শতাংশ মানুষ রাতের বেলা বাইরে নিরাপদ বোধ করেন। একসময় অপরাধের উচ্চ হারের জন্য কুখ্যাত ছিল এল সালভাদর। তবে সেখানে বড় আকারের নিরাপত্তা সংস্কারের কারণে জননিরাপত্তায় বড় ধরনের উন্নতি হয়েছে, যা এই অঞ্চলে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অন্যতম উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। অন্যদিকে তাইওয়ানে কম অপরাধপ্রবণতা, কার্যকর পুলিশিং এবং শক্তিশালী নাগরিক সুবিধা এশিয়ায় নিরাপত্তার ধারণার সর্বোচ্চ জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। এমনকি এ ধারা ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে এলাকায়ও বিদ্যমান।
মন্টেনেগ্রোর শান্ত জীবনযাত্রা এবং সম্প্রদায়কেন্দ্রিক সংস্কৃতি নিরাপত্তার অনুভূতিকে বাড়িয়ে তুলেছে। উজবেকিস্তানের ৮৬ শতাংশ মানুষ রাতের রাস্তাকে নিরাপদ মনে করেন। নিরাপত্তা ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগ দেশটিতে জন-আস্থা বাড়িয়েছে। স্থানীয়রা অন্ধকার নামার পর শহর ও গ্রামাঞ্চলে ঘোরাফেরায় নিজেদের সুরক্ষিত বোধ করার কথা জানান। এরপরই রয়েছে আর্মেনিয়া। দেশটির ৮৫ শতাংশ মানুষ রাতের রাস্তায় নিজেদের নিরাপদ মনে করেন। অন্যদিকে অস্ট্রিয়া ও স্লোভেনিয়ার ৮৪ শতাংশ মানুষ রাতের রাস্তায় নিজেদের নিরাপদ বলে মনে করেন।
ইন্দোনেশিয়া ও এস্তোনিয়ার ৮৩ শতাংশ মানুষ রাতে নিজেদের নিরাপদ ভাবেন। মিসর, জর্জিয়া ও নেদারল্যান্ডসের ৮২ শতাংশ এবং স্পেন ও সুইডেনের ৮১ শতাংশ মানুষ রাতের বেলা চলাচলে নিজেদের নিরাপদ মনে করেন।
সূত্র: স্টার্স ইনসাইডার








































আপনার মতামত লিখুন :