সারা দেশে ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ৩৪তম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব বুঝে নেন।
নবাগত ডিসি জাহিদুল ইসলাম এর আগে রাজবাড়ী ও নারায়ণগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্বভার গ্রহণের প্রাক্কালে তিনি জনবান্ধব ও মানবিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের প্রশাসনিক দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। এছাড়াও জেলার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সকলের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন চট্টগ্রামের নতুন এই অভিভাবক।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালনকালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শহীদ আহত পরিবার, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী, দুস্থ মানুষ, অসহায় শিশু, কারাবন্দি, ঝুঁকিপূর্ণ রোগী সবার নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হয়ে ওঠেন তিনি।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সোহাগকে স্মার্টফোন, সালমা জেরিনকে ল্যাপটপ, ২০ প্রতিবন্ধীকে হুইলচেয়ার ও ইলেকট্রিক চেয়ার, বিশেষ স্কুলের শিশুদের শিক্ষা উপকরণ, অসহায় আজান, নাছিমা, আলভী, সিরাজুল ও ফয়সালসহ বহু রোগীর চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা সবখানেই ছিল তার মানবিক স্পর্শ।
জুলাই শহীদের ২১ পরিবারকে ৪২ লাখ টাকা, আহত ২১২ জনকে অনুদান, এতিমখানার ৮২ শিশুকে পাঞ্জাবি ইফতার, কারাগারের ১,২৪৪ বন্দির জন্য ক্রিকেট টুর্নামেন্ট মানবিকতার ছাপ রেখেছেন সর্বত্র।
সবচেয়ে আলোচিত হয় তার গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচি এবং মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ, যার সুফল জেলাবাসী বহু বছর ভোগ করবে।
হাসপাতালে নবজাতকের আইসিইউ চালু, খানপুর হাসপাতালে হুইলচেয়ার প্রদান, ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে অত্যাধুনিক সিবিসি ইসিজি মেশিন, ফুটবল একাডেমির শিশুদের জন্য বলবুট ও টুর্নামেন্ট খরচ বহন উন্নয়নেও রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
মানুষের সুখ দুঃখে নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতি, দ্রুত সিদ্ধান্ত ও মানবিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করে ডিসি জাহিদুল ইসলাম হয়ে উঠেছিলেন নারায়ণগঞ্জের অভিভাবক ও অঘোষিত জনপ্রতিনিধি। এর আগে ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর রাজবাড়ীতে যোগ দিয়েই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নিহতদের পরিবার ও আহতদের চিকিৎসায় নির্ভরযোগ্য ঠিকানা হয়ে ওঠেন তিনি।
যোগদানের দুই দিনের মাথায় শহীদদের বাড়িতে ছুটে যাওয়া এবং আহতদের সেবা নিশ্চিত করে সারা দেশে ‘মানবিক ডিসি’ হিসেবে পরিচিত হন।
১৯৭৯ সালের অক্টোবর মাসে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরে তার জন্ম। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে বড় হন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অনার্স–মাস্টার্স, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে রাশিয়ান ভাষায় ডিপ্লোমা, এবং যুক্তরাজ্য থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় এমএসসি সম্পন্ন করেন তিনি।
২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএস এর মাধ্যমে প্রশাসনে যোগ দেন। লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, মৌলভীবাজার ও নোয়াখালী—বিভিন্ন জেলায় এনডিসি, এসিল্যান্ড ও ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কমলগঞ্জে ইউএনও থাকাকালে তিনি জেলার শ্রেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্েয অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সাদি উর রহিম জাদিদ, পাঠান মো. সাইদুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক, মো. শরীফ উদ্দিনসহ জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।








































আপনার মতামত লিখুন :