‘আমের বাণিজ্যিক রাজধানী সাপাহার’ স্লোগানে আম চাষে প্রসিদ্ধ নওগাঁর সাপাহারে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল (উৎসব)।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এবং সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নওগাঁর উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আহমেদ, সাপাহার আল হেলাল ইসলামী একাডেমির অধ্যক্ষ মাহবুবুল আলম, সাপাহার উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও আমচাষি রফিকুল ইসলাম, তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা, নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি রায়হান আলম প্রমুখ।
ম্যাংগো ফেস্টিভ্যালে রয়েছে দেশি-বিদেশি বাজারে আম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল, আমজাত খাদ্যদ্রব্য, প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চাষিদের প্রোফাইল এবং আমের নানা জাতের প্রদর্শনী। মেলায় মোট ৪০টি স্টল রয়েছে।
এ উৎসবকে কেন্দ্র করে আম বাণিজ্যে নতুন দিগন্তের সম্ভাবনা দেখছেন স্থানীয়রা আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা। এ উৎসবের মাধ্যমে নওগাঁর আমকে আরও সুপরিচিত করে তোলা যাবে। সাপাহারকে আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে।
আম চাষিদের দাবি, নওগাঁর অধিকাংশ বাগানে উত্তম কৃষি চর্চা (গ্যাপ) অনুসরণ করে আম উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু উৎপাদনের তুলনায় রফতানি হয় খুবই সামান্য। রফতানি বাড়াতে না পারলে আমের কাঙ্ক্ষিত দাম পাবেন না আমচাষিরা। তাতে ভালো আম উৎপাদনে আগ্রহ ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
আমচাষি সোহেল রানা বলেন, রফতানির আম দূষণমুক্ত করতে হয়। না হলে আম ফেরত আসার ঝুঁকি থাকে। এর জন্য দরকার ব্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ঠঐঞ)। আবার আম বাছাইয়ের জন্য প্যাকিং হাউস ও সহজে সঙ্গনিরোধ (কোয়ারেন্টিন) সনদ পেতে নওগাঁতে কৃষি বিভাগের সঙ্গনিরোধ শাখা স্থাপন করা দরকার। সরকারিভাবে এই সুবিধাগুলো যেন করা হয় সেই দাবি জানাতে চাই প্রশাসন ও সরকারের আছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম আহমেদ বলেন, আম উৎপাদনে সাপাহার দেশের শীর্ষস্থানে থাকলেও চাষিরা এখনও বঞ্চিত। এখানে অধিকাংশ বাগানে রফতানিযোগ্য আম চাষ হয়ে থাকে। এখানকার চাষিরা আমকে একটি শিল্পে পরিণত করেছে। বর্তমানে সাপাহারে ২০ হাজারের বেশি আমচাষি রয়েছেন এবং ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আম চাষ হয়। গত বছর এই অঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার আম লেনদেন হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রফতানিকারকদের উদ্দেশে আমি বলতে চাই, সাপাহারের আম অত্যন্ত সুস্বাদু ও ভালো মানের। আপনারা সাপাহারের আম বিদেশে রফতানি করুন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, আমের চাষকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে নওগাঁ। এ অঞ্চলে এখন সারাবছর আম উৎপাদিত হয়। সারাবছর আম খেতে চাইলে সাপাহারে আসতে হবে। আম চাষের চ্যালেঞ্জ হলো রফতানির অভাব। বর্তমানে বিদেশে প্রায় দুই কোটি বাংলাদেশি আছে তাদের চাহিদাই পূরণ করতে পারি না। এমনকি বিদেশিদের মাঝেও বাংলাদেশের আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এর জন্য আম রফতানির যে বাধাগুলো আছে সেগুলো দূর করতে হবে। নওগাঁতে ভিএইচটি প্ল্যান্ট ও প্যাকিং হাউজ স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :