Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামের সড়কগুলোতে যানজট নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না


দৈনিক পরিবার | মোঃ সিরাজুল মনির মার্চ ২৭, ২০২৪, ০৯:০৮ পিএম চট্টগ্রামের সড়কগুলোতে যানজট নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না

চট্টগ্রাম মহানগরীতে রমজান মাসে যানজট নিয়ন্ত্রণে একগুচ্ছ পরিকল্পনা গ্রহণ করে নগর ট্রাফিক বিভাগ। যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিকের দক্ষিণ জোনে ১০টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কথা ছিলো ট্রাফিক বিভাগ, ব্যবসায়ী সমিতি, হকার্স সমিতি ও পরিবহন মালিক সমিতির কর্মকর্তাদের সমন্বিত উদ্যোগে সড়ক যানজটমুক্ত করতে এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে রমজানের প্রথম ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও ৪টি সিদ্ধান্ত ছাড়া বাকিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
ট্রাফিক বিভাগের দক্ষিণ জোন নগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। কারণ এ জোনে রয়েছে- আদালত ভবন, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, রেলস্টেশন, কারাগারসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এছাড়া শুধু তামাকুমন্ডি লেইন. রিয়াজ উদ্দিন বাজার, নিউ মার্কেট ঘিরে ছোটবড় মার্কেট রয়েছে ১৬০টি। এসব মার্কেটে নেই কোন পার্কিং ব্যবস্থা। ভাসমান হকারদের সবচেয়ে বেশি বসবাস ওই এলাকাতেই। এলাকায় অবস্থিত মার্কেটগুলোর দোকানের কর্মচারীর বাসস্থান খুব বেশি।
এসব বিষয়ে নগর ট্রাফিকের দক্ষিণ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) এমএম নাসির উদ্দিন জানান, আমরা চেষ্টা করছি যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে। তবে কিছু বিষয় আছে সমাধান করা একটু কঠিন। বছরের পর বছর ধরে গড়ে উঠা একটি বিষয় চাইলে দুই একদিনে সমাধান করা সম্ভব নয়। যেমন শাহ আমানত সেতুর গোল চত্বর। যেখানে অঘোষিতভাবে একটি বাসস্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। অথচ বাস দাঁড়ানোর কোন স্থানই সেখানে নেই। তার উপর রয়েছে ভাসমান হকার। প্রতিদিন বিকেল হওয়ার সাথে সাথে ভাসমান হকারদের তৎপরতা বেড়ে যায় বিশেষ করে অফিস ছুটি হওয়ার পরে ভাসমান হকাররা তাদের দোকান খুলে বসাতে সাধারণ মানুষের চলাফেরা খুব কঠিন হয়ে যায় । অথচ সিটি কর্পোরেশন হকার উচ্ছেদের নামে প্রায় প্রতিদিন এসব এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলো না।
ডিসি বলেন, যানবাহন এক জায়গা থেকে সরালে আরেক জায়গায় পার্কিং করছে। ভাসমান দোকানের অবস্থাও একই রকম। এক জায়গা থেকে সরালে আরেক জায়গায় গিয়ে বসছে। আসলে হকারদের যতক্ষণ পুনর্বাসন করা হবে না ততক্ষণ এ সমস্যার সমাধান হবে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি মানুষ যাতে যাতায়াতে দুর্ভোগে না পড়ে। সবাই যখন বাসায় ইফতারে যায় আমি ­তখন চলার পথে সড়কে যেখানে সময় হয় সেখানেই ইফতার করি।
এদিকে রমজান মাসে সড়কে যানজট নিরসনে গত ১৩ মার্চ নগর ট্রাফিকের দক্ষিণ বিভাগ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করে। মতবিনিময় সভায় ট্রাফিকের দক্ষিণ জোনে যানজট নিয়ন্ত্রণে দশটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তা হলো- নিউ মার্কেট, টেরিবাজার, বক্সির হাট, রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ বড়-ছোট সকল মার্কেট ও শপিংমল কেন্দ্রিক যানজট নিরসনের লক্ষ্যে রাস্তা ও মার্কেটের সামনে পার্কিং করা যাবে না। মেইন রোড কেন্দ্রিক মার্কেট সমূহের সম্মুখ রাস্তার প্রবেশ পথ নিজস্ব জনবল দিয়ে পরিষ্কার রাখা ও আগত যানবাহনে শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। রিকশা-সিএনজি ট্যাক্সি ও হকার মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তা দখল করে দাঁড়ানো কিংবা ডাবল লাইনে পার্ককৃত যানবাহন অপসারণ করা হবে।
সকল গুরুত্বপূর্ণ ফুটপাতে পথচারীদের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ভাসমান দোকান-পাট অপসারণ করা হবে। দিনের বেলায় ভারী যানবাহন রাস্তার পাশে রেখে দোকান বা মার্কেটের মালামাল লোড-আনলোড থেকে বিরত থাকতে হবে। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে গড়ে উঠা অবৈধ দোকান অপসারণ করতে হবে। সড়কের মূল পয়েন্টে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী উঠা-নামা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমতল ও নিউমার্কেট থেকে চলাচলকারী অটো টেম্পো, বাস ও মিনিবাস সমূহের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে হবে এবং এ এলাকা ভাসমান হকারমুক্ত রাখা হবে।
শাহ আমানত মার্কেট সংলগ্ন আমতল মোড় ও আশপাশের এলাকা সমূহে যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী রিকশা, সিএনজি ট্যাক্সি, ভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও মোটরসাইকেল দাঁড়ানো যাবে না। স্টেশন রোডে রেয়াজউদ্দিন বাজার ও গোলাম রসুল মার্কেটের প্রবেশ মুখে সবজি, ফলমূল ও অন্যান্য পণ্যদ্রব্য সকাল ৮টার মধ্যে লোড-আনলোড করতে হবে। ব্যবসায়ী সমিতি কর্তৃক রাস্তার পাশে অবৈধ দোকান উচ্ছেদপূর্বক ফুটপাত ও সড়কে নিরবচ্ছিন্ন চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। যানবাহন চলাচলের সকল রাস্তায় সংশ্লিষ্ট সমিতির নিজস্ব লোকবল দিয়ে হকারমুক্ত রাখতে হবে। স্টেশন রোডস্থ ফুটওভার ব্রিজের পাশের রেলওয়ের খািল জায়গায় গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
এর মধ্যে যে চারটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে তা হল- নিউ মার্কেট, টেরিবাজার, বক্সির হাট, রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ বড়-ছোট সকল মার্কেট ও শপিংমল কেন্দ্রিক যানজট নিরসনের লক্ষ্যে রাস্তা ও মার্কেটের সামনে পার্কিং কিছুটা রোধ করা হয়েছে। মেইন রোড কেন্দ্রিক মার্কেট সমূহের সম্মুখ রাস্তার প্রবেশ পথ নিজস্ব জনবল দিয়ে পরিষ্কার রাখা হয়েছে। রিকশা-সিএনজি ট্যাক্সি ও হকার মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাস্তা দখল করে দাঁড়ানো কিংবা ডাবল লাইনে পার্ককৃত যানবাহন অপসারণ করা হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে বাকি সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। যেমন- স্টেশন রোড-নিউ মার্কেট মোড়-আমতল হয়ে তিনপুলের মাথা পর্যন্ত ফুটপাত এবং সড়ক আগে যেমন হকারের দখলে ছিল এখনো তেমনি আছে। বরং কিছু মৌসুমী হকার বেড়েছে। লালদিঘি থেকে আন্দরকিল্লা মোড় পর্যন্ত সড়ক যথারীতি ভাসমান হকারের দখলেই আছে, তিনপুলের মাথায় দিনের বেলায় ভারী যানবাহনে মালামাল উঠানামা চলছে। ফলমণ্ডির সামনের সড়কে যথারীতি পিকআপ, ভ্যান ও ঠেলা গাড়ি পার্কিংয়ে থাকে দিনরাত সমানতালে। শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বর ছাড়িয়ে সেতুর সীমানার অভ্যন্তর পার্কিং করা থাকে যাত্রীবাহী বাস। যথারীতি আগের মতই ফুটপাত ও সড়ক দখল করে ভাসমান হকারের দৌরাত্ম্য রয়েছেই।
এদিকে নগর ট্রাফিকের উত্তর বিভাগে ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল মার্কেটগুলোর পার্কিং স্পেস খুলে দিতে হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। ১০ রমজানের পর থেকে ট্রাফিকের জনবল বাড়ানো হবে। পার্কিং ব্যবস্থার পুরো সমাধান করা সম্ভব হয়নি। বাকিগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে।

Side banner