অযৌক্তিকভাবে ফিড, মুরগির বাচ্চা ও মেডিসিনের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ৭ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই দাবিগুলো মেনে নেওয়া না হলে ১ নভেম্বর থেকে সারাদেশের প্রান্তিক খামারিরা পর্যায়ক্রমে খামার বন্ধ করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনটির সুমন হাওলাদার।
তিনি বলেন, সরকার আমাদের ৭ দফা দাবি মেনে না নিলে আমরা প্রান্তিত খামারিরা খামার বন্ধ রাখতে বাধ্য হবো এবং ডিম-মুরগির উৎপাদন স্থগিত করা হবে। সরকার যতদিন আমাদের দাবি মেনে না নিবে, ততদিন আমাদের অবরোধ চলবে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) অযৌক্তিকভাবে ফিড, মুরগির বাচ্চা ও মেডিসিনের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সুমন হাওলাদার বলেন, ডিম ও মুগরির ৮০ শতাংশ উৎপাদন করে আমাদের প্রান্তিক প্রান্তিক খামারিরা। কিন্তু, এই খাতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের প্রান্তিক খামারিদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। গুটিকয়েক কোম্পানির সিদ্ধান্তে আমাদের প্রান্তিক খামারিদের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। এতে বিগত কয়েক বছরে হাজার হাজার প্রান্তিক খামারি ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ১টি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা এবং মুগরি বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। কিন্তু, আমাদের দেশে তা বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা এবং ১৫০-১৬৫ টাকায়। আমরা কেন অল্প দামে ডিম-মুগরি বিক্রব করতে পারছি না। এই স্বল্প দামে বিক্রি করতে না পারার পেছনে রয়েছে কয়েকটি কোম্পানির স্বার্থ সিংশ্লিষ্টতা এবং সরকারের নজরদারিতার অভাব।
বিপিএ সভাপতি বলেন, ২০২৩ সালে ট্রেড অ্যান্ড ট্র্যারিফ কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতি কেজি ফিডের দাম ১৫-২০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। ফিডের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের একটি বিক্রয়যোগ্য পল্টি মুরগির উৎপাদন খরচ ১৫০-১৬৫ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু, আমরা প্রান্তিক খামারিদের লোকসান করে ১৩০-১৪০ টাকার মধ্যে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে।
বিপিএ বলছে, যখন ডিম বা মুরগির দাম বৃদ্ধি পায়, তখন সারা দেশে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত হস্তক্ষেপও দেখা যায়। কিন্তু ফিড বা মুরগির বাচ্চার দাম বাড়লে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় না। যতদিন পর্যন্ত সরকার এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত ডিম-মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে না।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার। দাবিগুলো হলো-
১. কর্পোরেট সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে ফিড, মুরগির বাচ্চা, মেডিসিন/ভ্যাকসিনের দাম সরকারকে নির্ধারণ করতে হবে।
২.অবিলম্বে কর্পোরেট প্রবাবমুক্ত, ন্যায্য ও স্বচ্ছ বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।
৩. প্রান্তিক খামারিদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিতিনির্ধারনী পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪. ফিড, বাচ্চা ও ওষুধের বাজারে নিয়মিত অডিট ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৫. উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ১০ শতাংশ লাভ যুক্ত করে ডিম ও মুরগির ন্যায্য দাম নির্ধারণ করতে হবে।
৬. ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জন্য প্রণেদনা, সহজ শর্তে জামানতবিহীন ঋণ ও ভর্তুকি দিতে হবে।
৭. দুর্নীতিগ্রস্ত ও কর্পোরেটপন্থি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :