Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৪ আশ্বিন ১৪৩২

সালমান শাহ’র জন্মদিন আজ


দৈনিক পরিবার | বিনোদন ডেস্ক সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫, ১২:২৫ পিএম সালমান শাহ’র জন্মদিন আজ

আজ ১৯ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার। নব্বই দশকের ঢাকাই সিনেমার উজ্জ্বল নক্ষত্র সালমান শাহর জন্মদিন আজ। ১৯৭১ সালের এই দিনে সিলেটে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। যদি বেঁচে থাকতেন, আজ তার বয়স হতো ৫৪ বছর। 
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মাত্র ২৫ বছর বয়সে হঠাৎ নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। ক্ষণিকের জন্যে ইন্ডাস্ট্রিতে আসলেও রাতারাতি হয়ে ওঠেন বাংলার পর্দার স্টাইল আইকন। সে সময়ের তার আলোকচ্ছটা আজও ম্লান হয়নি; বরং সময়ের সঙ্গে যেন তার জনপ্রিয়তা গভীর হচ্ছে।
অনেকে মনে করেন, অল্প সময়ের জন্য এসেছিলেন বলেই সালমান এতটা আলো ছড়াতে পেরেছিলেন। তাই তার চলে যাওয়ার প্রায় তিন দশক পরও এখনও ভক্তদের হৃদয়ে গেঁথে রয়েছেন তিনি।
সালমান শাহ ছিলেন নব্বইয়ের দশকের তরুণদের কাছে এক অনন্য নায়ক। শুধু দর্শক নয়, সহকর্মী অভিনেতারাও তাকে মানতেন অনুপ্রেরণা ও আদর্শ হিসেবে। তার অভিনয় আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না, আর ফ্যাশন-স্টাইলের ছাপ ছিল কয়েক ধাপ এগিয়ে। 
অনেকের মতে, তিনি যেন ছিলেন বিনোদন জগতের টাইম ট্রাভেলার। কারণ তিন দশক আগেই তিনি যে সাজসজ্জার ধারা শুরু করেছিলেন, আজকের নায়কদের মধ্যে তা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত।
আজকের দিনে সালমান শাহকে জন্মদিনের শুভেচ্ছায় ভাসাচ্ছেন, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন তার ভক্তরা। বাংলা সিনেমার এই অমর নায়ক নেই প্রায় তিন দশক, তবুও যে তার অনুপস্থিতিতে আজও ভক্তদের হৃদয় পুড়ছে- তা বলাই বাহুল্য।
তার জন্মদিন উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্তে ভক্তদের গড়ে ওঠা ‘সালমান শাহ ফ্যান ক্লাব’-এর সদস্যরা আজও আয়োজন করেন স্মরণসভা ও উদযাপন। সিলেট শহরের শেখঘাটে তার দাদার বাড়ি আর দারিয়াপাড়ায় নানার বাড়ি এখনো ভক্তদের কাছে তীর্থক্ষেত্রের মতো। সেই বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউজ’। তার নানা অভিনয় করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ। অভিনয় করেছেন তার মা নীলা চৌধুরীও। হয়তো সেই উত্তরাধিকার থেকেই সালমান অভিনয়ে আসেন।
চলচ্চিত্রে আসার আগেই গান গাইতেন তিনি। স্কুলজীবনে ছিলেন বন্ধুমহলে পরিচিত সংগীতশিল্পী। ছায়ানট থেকে পল্লীগীতিতে পাশও করেছিলেন ১৯৮৬ সালে। এরপর নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে পথচলা শুরু। মঈনুল আহসান সাবেরের লেখা ধারাবাহিক ‘পাথর সময়’-এ অভিনয় করে দারুণ প্রশংসা পান।
তবে তার অভিনয়ের আসল ঝলক আসে বড় পর্দায়। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে মৌসুমীর বিপরীতে অভিষেক হয় তার। সেখান থেকেই শুরু হয় কিংবদন্তি হয়ে ওঠার গল্প। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেয়ে একের পর এক হিট ছবি উপহার দেন সালমান শাহ। শাবনূরের সঙ্গে তার জুটি হয়ে ওঠে অমর, যা আজও বাংলা সিনেমার সেরা জুটির তালিকায় প্রথম সারিতে।
জীবদ্দশায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিলন’, ‘আশা ভালোবাসা’, ‘বিচার হবে’, ‘প্রিয়জন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তুমি আমার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘এই ঘর এই সংসার’, ‘আঞ্জুমান’, ‘স্নেহ’, ‘দেনমোহর’সহ অসংখ্য ছবির সাফল্য তিনি নিজে উপভোগ করেছিলেন। মৃত্যুর পরও তার অভিনীত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বুকের ভিতর আগুন’সহ অনেক ছবিই দর্শকের হৃদয় জয় করে নেয়।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার আকস্মিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে দেশ। সেই শূন্যতা আজও পূরণ হয়নি। কোনোদিন হবেও না। কারণ সালমান শাহ কেবল একজন নায়ক ছিলেন না, তিনি হয়ে উঠেছিলেন একটি সময়, আবেগ ও প্রেমের প্রতীক।
বাংলাদেশের সমান বয়সী সালমান শাহ আজও তাই কিংবদন্তি হয়ে বেঁচে আছেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে। তার প্রজন্মের পর আর কয়েক প্রজন্মের কাছেও তিনি সেরা নায়ক, না পাওয়ার এক হাহাকার। যেন স্বাধীনতার মতোই তিনিও চিরকাল অমলিন ও অবিরাম।

Side banner