সুস্থ ও সুন্দর থাকতে আমরা কত কিছুই না করি! তবে শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য অনেক সময় দৈনন্দিন জীবনে নেওয়া ছোট ছোট পদক্ষেপ অনেক ফলদায়ক হয়ে ওঠে। জেনে নিন শরীর ও মনের যত্নে কী কী কাজ করবেন।
আমরা কমবেশি সবাই হাতের চেয়ে মুখের যত্ন বেশি নিই। এখন থেকে নিয়মটি বদলে ফেলুন। প্রতিবার ধোয়ার পর হ্যান্ডক্রিম বা ময়শ্চারাইজার দিয়ে হাত ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এতে হাতের খসখসে ভাব কমে যাবে ও নখের চারপাশের ত্বক নরম থাকবে। তবে এই ময়শ্চারাইজারে গ্লিসারিন বা সূর্যমুখী বীজের তেল রয়েছে কি না, দেখে কিনুন। কারণ এই উপাদানগুলো হাতের ত্বক অনেক বেশি ময়শ্চারাইজড রাখে বলে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে।
ভালো কাজে নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করলে মন ভালো থাকে। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করলে একদিকে যেমন মানুষ, পরিবেশ ও প্রাণীর জন্য কাজ করার সুযোগ পাওয়া যায়, তেমনি এ কাজগুলো আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং একাকিত্ব দূর করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সব সময় অ্যাংজাইটিতে ভোগা মানুষেরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে মানসিকভাবে নির্ভার অনুভব করতে পেরেছেন।
ঘরের বাড়তি জিনিসপত্র সরিয়ে ফেলুন
ড্রয়ারে জমে থাকা অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র, শেলফে অব্যবহৃত জুতার স্তূপ এবং আলমারি থেকে উপচে পড়া কাপড়চোপড় একেবারে সরিয়েই দেখুন। ঘর ও মস্তিষ্ক অনেকটাই হালকা লাগবে। আমাদের আশপাশে ব্যবহার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলা জিনিসপত্র জমে থাকলে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এ ছাড়া এসব জিনিস দৈনন্দিন কাজেও ঝামেলা সৃষ্টি করে। এগুলো সরিয়ে ফেললে মানসিক স্বস্তি বোধ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশৃঙ্খল পরিবেশের সঙ্গে মানসিক চাপ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রতিদিন সকালে গায়ে রোদ লাগান
‘স্লিপ হেলথ’ জার্নালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের আলোর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের ঘুমের মান উন্নত হয়। রোজ সকালে উঠে বাড়ির সব জানালা খুলে পর্দা সরিয়ে দিন। ঘরে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে দিন। শরীরে রোদ লাগালে রাতে নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হয়। ভালো ঘুম কেবল খিটখিটে ভাবই কমায় না, স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমায়। রাতে ৬ ঘণ্টার কম ঘুম আপনাকে হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, বিশেষ করে যদি আপনার ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা থেকে থাকে।
চোখকে বিরতি দিন
বর্তমানে আমাদের দিনের বেশির ভাগ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কেটে যায়। এসব কারণে বাড়ছে চোখের ওপর চাপ। চোখের শুষ্কতা, মাথাব্যথা এবং ঝাপসা দৃষ্টির সমস্যা এখন ঘরে ঘরে। এসব সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব ২০-২০-২০ নিয়ম অনুসরণ করে। অর্থাৎ প্রতি ২০ মিনিটে, ২০ ফুট দূরে কিছু দেখার জন্য ২০ সেকেন্ডের বিরতি নিন। যাঁরা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন, তাঁরা কিছুক্ষণের জন্য চোখের বিরতি দেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনার কন্টাক্ট লেন্স খুলে কয়েক মিনিটের জন্য স্যালাইনের দ্রবণে রাখুন। এরপর যখন আবার লেন্স পরবেন, তখন আরামটা নিজেই টের পাবেন।
দুপুরের খাবারের বিরতিতে হাঁটুন
গবেষণায় দেখা গেছে, সারা দিনে অন্তত ১৫ মিনিটও যদি আপনি হাঁটেন, তাহলে শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, জ্ঞানীয় প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এমন ব্যক্তিসহ বয়স্ক ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ যাঁরা মাঝারি গতিতে ট্রেডমিলে ১৫ মিনিট হেঁটেছেন, তাঁদের স্মৃতিশক্তি ও ভাষার উন্নতি কিছুটা হলেও ঘটেছে। এ ছাড়া প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটলে শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে, ফলে কাজে উদ্যম আসে।
বিশেষ নিয়মে গোসল করুন
গোসলের শুরুতে উষ্ণ পানি, সাবান ও লুফা দিয়ে শরীর ঘষে নেওয়ার পর ২ মিনিট ধরে ঠান্ডা পানি দিয়ে গা ধুয়ে নিন। এতে শরীরে রক্ত সঞ্চালন এবং এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়বে। এতে মানসিক অবসাদ থেকে থাকলে তা কেটে যাবে নিমেষেই।
নিজের হাতে কিছু তৈরি করুন
গবেষণায় দেখা গেছে, নিজের হাতে তৈরি করা যেকোনো ধরনের শিল্পই মানসিক উদ্বেগ কমাতে সহায়তা করে। ছবি আঁকা, মাটি বা কাঠ দিয়ে কিছু তৈরি করা, আসবাবপত্র তৈরি বা রং করা, বাগান করা ইত্যাদি যেকোনো কিছুই উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, সৃজনশীল কিছু তৈরি করার প্রক্রিয়া স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল নিঃসরণ কমাতে সহায়তা করে প্রশান্তির অনুভূতি জাগায়। এ ছাড়া, এসব কাজ তৃপ্তিদায়কও বটে। এসব কাজ করলে অনেক সময় মানুষের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।








































আপনার মতামত লিখুন :