আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে ২০২৪ সালে বিগত সরকার পতনের পর মাঠ প্রশাসনে দেখা দেয় চরম অস্থিরতা। সেই সাথে আতঙ্ক উৎকন্ঠায় ভরে উঠে মানুষের জীবন। এমন ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যেই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের পালন করতে হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্ব, নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব, এমনকি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে সহকারি কমিশনার (ভূমি) দায়িত্ব পালন করতে হতো নির্বাহী কর্মকর্তাদের। এক কর্তব্য পালন করতে গিয়ে আরেক দায়িত্ব গড়ে উঠেছিল অস্বস্তি। আবার স্কুলের সভাপতি দায়িত্ব পালন করতে হতো নির্বাহী কর্মকর্তাদের। এমন এক পরিস্থিতির মুখে যখন দাঁড়িয়েছিল গাইবান্ধার সদর উপজেলার ভূমি সেবা তখন গাইবান্ধা সদর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে ২৩-০৪-২০২৫ ইং তারিখে দ্বায়িত্বভার গ্রহণ করেন মোহা. জাহাঙ্গীর আলম বাবু।
যোগদান পরবর্তিতে তিনি তার সমস্ত মেধাকে কাজে লাগিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ভূমি সেবায় নিয়ে আসেন নতুন এক মাত্রা। যা দ্বার খোলে নতুন এক দিগন্তের। ভূমি সেবায় উদ্যোগ নেন বিদ্যমান অস্থিরতাকে কিভাবে স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে নেয়া যায়।
তবে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এর বলিষ্ঠ ভূমিকায় ভূমি সেবায় শৃংখলা ফিরে আসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি। গাইবান্ধা সদর উপজেলার জনমনে ফিরে আসে স্বস্তির সুবাতাস। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে ভূমি সেবায় আসে অভূতপূর্ব পরিবর্তন। আসে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা।
দীর্ঘদিনের ভূমি সেবার বিদ্যমান পরিস্থিতিকে একেবারেই স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে যোগদানের পরে তেমন ছুটি নেননি তিনি। সকালে অফিসে এসে দীর্ঘদিনের স্থায়ী কর্মকর্তা না থাকার যে হতাশা, যে জটলা তৈরি হয়েছিল তা তিনি সকাল থেকে শুরু করে রাত এগারোটা পর্যন্ত সময় দিয়ে একদিনে ৪০০ থেকে ৪৫০ মিস কেস ধৈর্য সহকারে শুনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তীক্ষ্ম মেধায় নিরলস পরিশ্রমের ফলে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় প্রতিস্থাপন করেন ভূমি সেবার নাগরিক আন্তরিকতার এক দৃষ্টান্ত। এতে করে সদর উপজেলাবাসীর মনের মনিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন তিনি। সেই সাথে সন্তুষ্টি দেখা যাচ্ছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার মানুষের মাঝে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহা. জাহাঙ্গীর আলম বাবুর এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, “নিজের প্রশংসা তো ভালই লাগে। কিন্তু আমি এটা আশা করি না। কাজ যদি ভাল হয় তাহলে মানুষ কাজের প্রশংসা করবে। সহকারি কমিশনার ভূমি পোস্টটা এমন একটা পোস্ট যখন আমি কোন মিস কেসের আদেশ দেই তখন অটোমেটিকেলি একটা পক্ষ আমার বিপক্ষে চলে যায় তথা আদেশের বিপক্ষে চলে যায়। কারণ তার পক্ষে আদেশটা হয় না। আমি আগে সহকারী কমিশনার ভূমি হিসাবে কর্মরত ছিলাম কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুরে। সেখানে আমাকে রিলিজ প্রদান করা হয় ২২-৪-২০২৫ ইং তারিখে। ২৩-৪-২০২৫ ইং তারিখ সকালে আমাকে ফেয়ারওয়েল দেয়া হলে ২৩-৪-২০২৫ ইং তারিখ বিকেলে আমি গাইবান্ধা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করি। যোগদান করেই দেখি এখানে ৪,০০০ নামজারি পেন্ডিং পড়ে আছে। আমি আস্তে ধীরে কাজ শুরু করে ধৈর্য সহকারে ভূমি সেবা নিতে আসা সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে তাদের কথা শুনে কাজ করতে থাকি। গাইবান্ধা সদর উপজেলায় একটা বিষয় আমি লক্ষ্য করেছি যে রাত দশটা এগারোটা বাজলেও মানুষ কাজ না হলে বাড়ি ফিরে যেত না। তবে সবার কাছে একটা অনুরোধ রেখেছিলাম যে আপনার কাগজপত্র যদি ঠিক থাকে, ন্যায্যভাবে আমার কাছে এসে বঞ্চিত হবেন না, আর যার কাজ তাকেই আসতে হবে। কখনো কোন সেবা প্রত্যাশী আমার কাছে সেবা নিতে এসে ফিরে যায়নি। কিন্তু যার কাগজপত্র ঠিক ছিলো না তাকে কিন্তু আমার কাছে এসে ফিরে যেতে হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন তদবির অথবা কেউ ফোন করতো সে ক্ষেত্রে সেটাও আমি রাখিনি। এর আগেও চাকুরী জীবনে আমি এক সেবা প্রত্যাশীর কাগজপত্র ঠিক না থাকায় কাজ করিনি, পরে তিনি তদবির করেছিল। কিন্তু আমি সেই তদবির শুনিনি, বিধায় আমাকে অন্য স্টেশনে বদলি হতে হয়েছিল। ১০০ টা কাজ করলে একটা ভুল হলে মানুষ কিন্তু ৯৯ টার প্রশংসা করে না। একটা ভুল হলে সেটাকেই প্রাধান্য দিয়ে সেই ভুলটাকেই সামনে নিয়ে আসে। আমি সবার কাছে আহবান রেখেছিলাম, আমি মানুষ আমি ভুলের উর্ধে না। আমারও ভুল হতে পারে। আমার ভুলটা যদি সঙ্গে সঙ্গে ধরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে দিয়ে দ্রুত সেবা দিতে পারব। এই কথাগুলো গাইবান্ধা সদর উপজেলার ভূমি সেবা প্রত্যাশী মানুষগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছে, নিজের কাজ নিজে করতে এসেছে। কোন তদবির করেনি সেজন্য কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে পেরেছি। একদিনে সর্বোচ্চ ৩৭টি মিস কেস নিস্পত্তি করেছি। আগে গড়ে নামজারি পেন্ডিং ফাইল ছিল ১৮৭টি সেখান থেকে কমে এখন গড়ে ৩৫টি নামজারি রয়েছে। নামজারি (শুরুতে পেন্ডিং ছিল ৪,০০০টি। যোগদানের পরে আবেদন পড়েছে ৩,০০০+২,০৫০=৫,০৫০টি অর্থাৎ সর্বমোট (৫,০৫০+৪,০০০= ৯,০৫০টি) আবেদনের নিষ্পত্তি করেছি (৯,০৫০ - ১২০০) = ৭,৮৫০টি মিসকেস নিষ্পত্তি ২০০টি এছাড়া অন্যান্য প্রতিবেদন (এমআর মামলা/ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩/মিস আপীল/অন্যান্য) নিয়মিত দিয়েছি। আমি মনে করি যত বড় কঠিন কাজই হোক না কেন যদি শুরু করা যায়, আর যদি সৎ উদ্দেশ্যে থাকে তাহলে কঠিন থেকে কঠিনতম কাজ ও অবশ্যই শেষ করা সম্ভব হয়। আমার বেলায়ও তাই হয়েছে। কাজের ধারাবাহিকতায় সদর উপজেলায় কোন পেন্ডিং কাজ নেই। গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক স্যার অত্যন্ত একজন ভালো মানুষ। স্যার গাইবান্ধা জেলার উন্নয়নে কাজ করছেন। স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জহির ইমাম স্যারের নির্দেশনার ফলে, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদ আল হাসান স্যারের পরামর্শে ধৈর্য সহকারে কাজ করার কারণে কোন পেন্ডিং কাজ আর নেই। এতে সদর উপজেলার ভূমি সেবা নিতে আসা মানুষ যেমন খুশি আমারও পেন্ডিং কাজগুলো সফলভাবে করতে পেরে ভালো লাগছে”।
ভূমি সেবা পেন্ডিং কাজের বিষয়ে জারি কারক যোগেশ বলেন, সহকারী কমিশনার সদর ভূমি তার নিরলস প্রচেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলে আজ আর কোন কাজ পেন্ডিং নেই।
এ কে এম সামিউল আরেফিন বলেন, দক্ষতা মেধা ধৈর্য সবি স্যারের মধ্যে আছে সেজন্যই তিনি কাজগুলো সফলতার সহিত সম্পূর্ণ করতে পেরেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ভূমি সেবা প্রত্যাশী বলেন, সদর উপজেলায় এরকম একজন চৌকস ভূমি কর্মকর্তা থাকলে সদর উপজেলা ভূমি সেবায় কোন কাজ আর পেন্ডিং পড়ে থাকবে না। সরকারি চাকুরীর বিধি মোতাবেক ভবিষ্যতে সদর উপজেলার চাকুরীর মেয়াদ শেষে যেখানেই তিনি যাবেন সেখানেই তিনি উত্তর উত্তর সাফল্য লাভ করবেন।
আপনার মতামত লিখুন :