Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫, ২১ কার্তিক ১৪৩২

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা কী পাবেন? জানালেন গভর্নর


দৈনিক পরিবার | নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ৫, ২০২৫, ০৮:৫১ পিএম পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডাররা কী পাবেন? জানালেন গভর্নর

আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত শরিয়াভিত্তিক পাঁচটি ব্যাংককে অকার্যকর ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে মার্জার বা একীভূত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
অকার্যকর ঘোষণা করা ব্যাংকগুলোর শেয়ারহোল্ডারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে পুঁজিবাজারে দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন একীভূত হওয়ার পর তাদের শেয়ারের মূল্য কীভাবে নির্ধারিত হবে? এ বিষয়ে বুধবার (৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ব্যাখ্যা দেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
গভর্নর বলেন, এই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন নেগেটিভ। তাই তাদের শেয়ারের ভ্যালু শূন্য (জিরো) হিসেবে বিবেচনা করা হবে। কাউকেই কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক যেমন লভ্যাংশ পান, তেমনি ক্ষতির দায়ও নিতে হয়। আমরা এখানে শেয়ারহোল্ডারদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি না, কেবল তাদের শেয়ারমূল্যকে শূন্য ধরা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, অন্য দেশে হলে এই অবস্থায় শেয়ারহোল্ডারদের জরিমানা করা হতো। এখন এসব ব্যাংকের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক, কিছু ক্ষেত্রে তা ৪২০ টাকা পর্যন্ত নেগেটিভ।
এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, পাঁচ ব্যাংকের আমানকারীরা চলতি নভেম্বর মাসের শেষের দিকে আমানতের অর্থ তুলতে পারবে। তবে যেসব আমানতকারীদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার নিচে তারাই প্রথমে আমানত তুলতে পারবেন। আর যাদের আমানতের পরিমাণ ২ লাখ টাকার উপরে তাদের অর্থ উত্তোলনের বিষয়ে গিরগিরই একটি নির্দেশনা জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আমানতকারীদের উদ্দেশ্যে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলো যেহেতু সরকারের অধীনে যাচ্ছে তাই আমানতকারীদের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাই যাদের প্রয়োজন আছে তারাই শুধু অর্থ উত্তোলন করবেন। অযথা ব্যাংকে ভীড় করবেন না।
গভর্নর বলেন, পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে সরকারি ব্যাংক হলেও এটি বেসরকারি ব্যাংকের মতই পরিচালিত হবে। ব্যাংকগুলোতে স্বাভাবিক সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম চলবে, গ্রাহকসেবায় কোনো বিঘ্ন ঘটবে না। আগের নামেই ব্যাংকগুলোতে পেমেন্ট, আমদানি রপ্তানির এলসি খোলা যাবে, আমানত ও চেক নিষ্পত্তি হবে এবং রেমিট্যান্স কার্যক্রম আগের মতোই সচল থাকবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর দায়িত্ব সরকার নিলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কাঠামোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন হবে না। বিদ্যমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী কর্মকর্তারা বেতন-ভাতা পাবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রশাসক হিসেবে এক্সিম ব্যাংকে দায়িত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শওকাতুল আলম, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক সালাহ উদ্দিন, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাহী পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান দিদার, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে পরিচালক মো. মোকসুদুজ্জামান এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান, জাকির হোসেন চৌধুরী, কবির হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে সরকার। আর আমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হবে। একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকে ৭৫ লাখ আমানতকারীর বর্তমান জমা আছে এক লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ রয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এক লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ এখন খেলাপি।
এর আগে গত ৯ অক্টোবর সরকারি মালিকানাধীন ইসলামী ব্যাংক গঠনের অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত  হয়। একীভূত করে একটি নতুন সরকারি মালিকানাধীন ইসলামি ব্যাংক গঠন করা হবে। যার নাম হবে ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা ধারাবাহিকভাবে খারাপ হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, তারল্য সংকট, বিশাল অঙ্কের শ্রেণি করা ঋণ, প্রভিশন ঘাটতি এবং মূলধন ঘাটতি— এসব কারণে ব্যাংকগুলো কার্যত দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছেছে। অনেকবার তারল্য সহায়তা দেওয়ার পরও এই ব্যাংকগুলোর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। বরং তাদের শেয়ার মূল্য মারাত্মকভাবে পড়ে গেছে এবং প্রতিটি ব্যাংকের নিট সম্পদ মূল্য বা নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে।

Side banner