নিজেদের মধ্যে সহিংসতা ও সংঘর্ষ স্থায়ীভাবে বন্ধে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে তিনদিন বৈঠকের পরও কোনও সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। ভেস্তে গেছে শান্তি স্থাপনের পুরো উদ্যোগটি।
আর এই শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পেছনে আফগানিস্তানকেই সম্পূর্ণরূপে দায়ী করছে পাকিস্তান। তারা বলছে, সন্ত্রাসী সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) কার্যক্রম ঠেকাতে পাকিস্তানকে সহায়তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে আফগানিস্তান।
এমন পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানকে ভয়ংকর এক হুমকি দিয়ে বসেছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ। তিনি বলেছেন, যদি আরেকবার আফগানিস্তানের ভূখণ্ড থেকে এসে সন্ত্রাসীরা আত্মঘাতী বা যে কোনো ধরনের হামলা চালায় তাহলে তালেবান সরকারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে। এছাড়া, তালেবান নেতাদের আবার গুহায় ঢোকানো হবে বলেও মন্তব্য করেন আসিফ।
মূলত, এই মন্তব্যের মাধ্যমে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন দখলদার বাহিনীর ২০ বছরের যুদ্ধের কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানি প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এই যুদ্ধের সময় তালেবানের উচ্চপদস্থ নেতারা লুকিয়ে থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন।
বুধবার মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে পাকিস্তানি মন্ত্রী লিখেছেন, অনেক বন্ধুদেশের অনুরোধে পাকিস্তান তালেবান সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিল, যেন শান্তি আসার একটা সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু, তালেবান সরকারের কিছু মন্তব্য পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেয় যে, তাদের উদ্দেশ্য খারাপ এবং তাদের নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে।
তিনি লিখেছেন, তালেবান শাসকরা যেন জেনে রাখে, তাদের পুরোপুরি ধ্বংস করে আবার গুহায় ঢুকিয়ে দিতে পাকিস্তানের খুব সামান্য সামরিক শক্তিই যথেষ্ট। তারা যদি যুদ্ধ করতে চায়, তবে সেই দৃশ্য আবার দেখা যাবে, যখন তারা লেজ গুটিয়ে তোরা বোরা থেকে পালিয়েছিল।
আফগানিস্তানে তালেবান সরকার যুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে খাজা আসিফ আরও বলেছেন, এটা খুবই দুঃখের বিষয় যে তালেবান সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং যে যুদ্ধের মাধ্যমে তারা টাকা রোজগার করে সেটি অব্যাহত রাখতে আফগানিস্তানকে আবার একটা ঝামেলার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নিজেদের দুর্বলতা এবং যুদ্ধের ফাঁকা আওয়াজ সম্পর্কে তারা ভালো করেই জানে, তবুও তারা নিজেদের ভেঙে পড়া ভাবমূর্তি ধরে রাখতে যুদ্ধের দামামা বাজাচ্ছে। আফগান তালেবান সরকার যদি আফগানিস্তান ও এর সাধারণ মানুষকে আবার শেষ করে দিতে চায়, তবে তাই হোক।
আফগানিস্তানকে বলা হয় সাম্রাজ্যবাদের কবরস্থান। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চেয়েও পারেনি। সেদিকে ইঙ্গিত করে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, আফগানিস্তান সাম্রাজ্যবাদীদের কবরস্থান হয়নি, হয়েছে সাধারণ মানুষের কবরস্থান। যেসব মানুষ যুদ্ধে মারা গেছে তাদের বেশিরভাগই আফগানি।
খাজা আসিফ বলেন, সাম্রাজ্যের কবরস্থান কথাটার প্রসঙ্গে বলি, পাকিস্তান নিজেকে কোনো সাম্রাজ্য মনে করে না। তবে আফগানিস্তান অবশ্যই একটা কবরস্থান—তবে সেটা আফগানদের নিজেদের মানুষের জন্য। এটা কখনোই সাম্রাজ্যবাদীদের কবরস্থান ছিল না, বরং এটি ছিল বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদীদের খেলার জায়গা।
তিনি আরও বলেন, তালেবান সরকারের যারা যুদ্ধ চায় এবং এই এলাকায় অশান্তি জিইয়ে রাখতে চায়, তাদের বোঝা উচিত যে তারা হয়তো আমাদের সাহস ও প্রতিজ্ঞাকে ভুল বুঝেছে। তালেবান সরকার যদি আমাদের সঙ্গে লড়তে চায়, তবে ইনশাআল্লাহ বিশ্ব দেখবে যে তাদের হুমকিগুলো কেবলই ফাঁকা বুলি!
তালেবান সরকারকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসিফ বলেন, আমরা আপনাদের প্রতারণা ও উপহাস অনেক সহ্য করেছি, আর নয়। পাকিস্তানের ভেতরে যেকোনো সন্ত্রাসী হামলা বা আত্মঘাতী বোমা হামলার ফল আপনাদের খারাপভাবে ভোগ করতে হবে। আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, যদি আপনারা চান, তবে আমাদের শক্তি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, কিন্তু সেটা আপনাদের নিজেদের বিপদ ও ধ্বংস ডেকে আনবে।








































আপনার মতামত লিখুন :