সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজার আজ মহা সপ্তমী। সিলেটের বিশ্বনাথে এই উৎসব পালন হচ্ছে মোট ২৪ টি মণ্ডপে। সার্বজনীন ২২ মণ্ডপের পাশাপাশি রয়েছে ২টি ব্যাক্তিগত পুজাণ্ডপ। সকল প্রস্তুতি শেষে মহাসপ্তমীর মাধ্যমে পূজামণ্ডপে চলছে সনাতনী অর্চনা। দুর্গা পূজালম্বীদের মনে বইছে উৎসবের আমেজ,ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে কেনাকাটার ধুম।
প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ উপজেলার বিভিন্ন মন্ডপে অনুষ্ঠিত দুর্গা পূজায় পূর্ণাথী আগমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরব উপস্থিতি রয়েছে, এমনটি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে।
পূজাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে কয়েকদফা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা ও রাজনৈতিক মহলের সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য সবার সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে এমনটি আশ্বাস দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতির পাশাপাশি সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের পূজামণ্ডপ ঘিরে সকল অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে উপজেলা পূজা কমিটির পক্ষে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। যে কোন প্রয়োজনে বিভিন্ন মন্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দ’সহ যে কেউ ওই মনিটরিং সেলের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন (মোবাইল ০১৭১২১৪৮১৪২, ০১৭১৩৮০৭৯২৬)। সর্বমহলের সার্বিক সহযোগীতায় অতীতের ন্যায় এবারও শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্প্রীতি বজায় রেখে নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপন করা সম্ভব হবে এমনটি জানিয়েছেন, বিশ্বনাথ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুনীল কান্তি দেব ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিভাংশু গুন বিভু।
বিশ্বনাথ পৌর শহরের পুরাণ বাজারস্থ শ্রী শ্রী শনি মন্দিরের পুরোহিত রণজিৎ ভট্টাচার্য্য রঞ্জু জানিয়েছেন, ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের সূচনা হয়েছে। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী এবং ২ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে। এবার পৃথিবীতে দেবীর দশভুজার আগমন হবে হাতির পিঠে চড়ে কৈলাশে ফিরবেন দোলায়।
সিলেট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের কার্যনির্বাহী সদস্য নিশি কান্ত পাল বলেন, আশা করি প্রতি বছরের ন্যায় এবারও শান্তিপূর্ণভাবে ও উৎসব মুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি প্রশাসন’সহ সর্বমহলের সার্বিক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
উপজেলার ২৪টি পূজা মণ্ডপের মধ্যে লামাকাজী ইউনিয়নে ৩টি, খাজাঞ্চী ইউনিয়নে ৪টি, রামপাশা ইউনিয়নে ১টি, দৌলতপুর ইউনিয়নে ২টি, বিশ্বনাথ পৌরসভায় ৭টি, দেওকলস ইউনিয়নে ১টি, দশঘর ইউনিয়নে ৪টি সার্বজনীন পূজা মণ্ডপ রয়েছে। এছাড়া উপজেলার লামাকাজী ইউনিয়নে ২টি ব্যক্তিগত পূজা মণ্ডপ রয়েছে।
পূজা মন্ডপগুলোর নিরাপত্তা ও ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলোর ব্যাপারে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী বলেন, সার্বজনীন ২২টি পূজা মন্ডপের মধ্য ১২টি মন্ডপকে অধিক গূরুত্বপূর্ণ ও ১০টি মন্ডপকে গূরুত্বপূর্ণের তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে আমরা নিরাপত্তার স্বার্থে সবকটি মন্ডপকেই অধিকতর গূরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা প্রদান করে যাব। শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য থানা পুলিশ, গোয়েন্দা ইউনিট, আনসার ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন।
অধিক গূরুত্বপূর্ণ মণ্ডপগুলোর মধ্যে রয়েছে- শ্রীশ্রী শিব ও দুর্গা বাড়ি পূজা কমিটি (দিঘলী), সুরমা বহুমুখী সংঘ (দিঘলী উত্তরপাড়া), সূর্যোদয় সনাতন সংঘ (মদনপুর), ত্রি-নয়নী পূজা কমিটি (চন্দগ্রাম), শ্রীশ্রী বৃন্দাবন জিউর আশ্রম পূজা কমিটি (বৈরাগী বাজার), চরচন্ডী (দুর্গাপুর) পূজা কমিটি (চরচন্ডী), শ্রীশ্রী শনি মন্দির পূজা কমিটি (বিশ্বনাথ থানা সম্মুখ), বিশ্বনাথ সদর পূজা কমিটি (বিশ্বনাথ পুরান বাজার), রাধা গোবিন্দ যুব সংঘ পূজা কমিটি (বিশ্বনাথ নতুন বাজার), জানাইয়া পূজা কমিটি (জানাইয়া), শ্রীশ্রী কালীবাড়ি কালীগঞ্জ পূজা কমিটি (কালীগঞ্জ বাজার), কালীজুরী পূজা কমিটি (বাগিছা বাজার)।
গূরুত্বপূর্ণ মণ্ডপগুলোর মধ্যে রয়েছে- একতা যুব সংঘ পূজা কমিটি (দিঘলী পূর্ব পাড়া), মহামায়া সনাতন সংঘ পূজা কমিটি (রায়পুর), সনাতন সংঘ পূজা কমিটি (চন্দগ্রাম, বৈদ্যপাড়া), কৃপাখালী পূজা কমিটি (কৃপাখালী), পশ্চিমগাঁও পূজা কমিটি (পশ্চিমগাঁও), পশ্চিমগাঁও (কাদিপুর) পূজা কমিটি (পশ্চিমগাঁও), কালাচাঁদ জিউর তলা হরিনাম সংঘ পূজা কমিটি (বাউসী), বাউসী লক্ষীময়ী পূজা কমিটি (বাউসী পশ্চিপাড়া), শ্রীশ্রী গোবিন্দ জিউর আখড়া রাধা-কৃষ্ণ সংঘ পূজা কমিটি (দশঘর), দশঘর (পশ্চিম পাড়া) পূজা কমিটি (দশঘর) এবং লামাকাজী ইউনিয়নের দিঘলী গ্রামে স্বরবিন্ধু চক্রবর্তীর বাড়িতে ও মাখরগাঁও গ্রামের কাবিন্দ্র শুক্ল বৈদ্যের বাড়িতে অনুষ্ঠিত ব্যক্তিগত পূজা মন্ডপগুলোতে সাধারণ মন্ডপ হিসেবে রাখা হয়েছে।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী (ইউএনও) সুনন্দা রায় জানিয়েছেন, পূজাকে কেন্দ্র করে কেউ যেন কোনো ফায়দা বা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলার পূজা মণ্ডপ ঘিরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে। আর গুজব থেকে সবাইকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :