পল্লী চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ সেবনের পর শরীরের চামড়া ঝলসে গেছে নুরজাহান (৯) নামে একটি শিশুর। বর্তমানে ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে সে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার রায়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ নূরুন্নবী জানান, রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফল।
জানা যায়, নুরজাহান কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের টেপারকুটি গ্রামের ইউনুস আলীর মেয়ে। গত ২৯ জুলাই জ্বরে আক্রান্ত হলে ইউনুস আলী মেয়েকে নিয়ে একই উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সবেদের মোড় এলাকায় পল্লী চিকিৎসক আলমগীর হোসেনের ফার্মেসিতে যান।
আলমগীর শিশুটিকে পরীক্ষা করে তিন ধরনের ওষুধ দেন। সেগুলো সেবনের পর নুরজাহানের শরীরে ছোট ছোট ফোঁসকা দেখা দেয় এবং অল্প সময়ের মধ্যে পুরো শরীর কালো হয়ে যায়। দুই দিনের মধ্যে তার ত্বক উঠে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। চিকিৎসক আলমগীর শুরুতে সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। অবশেষে ১ আগস্ট শিশুটিকে রংপুর মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।
নুরজাহানের বাবা ইউনুস আলী বলেন, জ্বর নিয়ে আলমগীরের কাছে যাই। সে তিন-চারটা ওষুধ দেয়। সেগুলো খাওয়ানোর পরই মেয়ের শরীরের এই অবস্থা হয়। পরে আলমগীরের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করলেও সে এড়িয়ে যায়। শেষমেশ মেয়েকে রংপুরে ভর্তি করি। এখন সে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় আছে।
স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন ‘আল মদিনা’ নামে একটি ফার্মেসি চালাচ্ছেন, যার কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। সেখানেই তিনি চেম্বার খুলে শিশুসহ নানা রোগীর চিকিৎসা দেন। প্রেসক্রিপশন প্যাডে নিজেকে ‘ডাক্তার’ এবং ‘জেনারেল মেডিসিন প্র্যাকটিশনার’ লিখে থাকেন। এমনকি নিজেকে সরকারি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক হিসেবেও দাবি করেন।
ঘটনা সম্পর্কে আলমগীর হোসেন বলেন, আমি কোনো ভুল চিকিৎসা দিইনি। জ্বরের জন্য শুধু কয়েকটি ওষুধ দিয়েছিলাম। হয়তো মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, তবে নিশ্চিত নই।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার রায় বলেন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা তা নির্ণয়ের জন্য রংপুর মেডিক্যালে টিম কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :