শরতের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতি সেজে উঠেছে শুভ্র কাঁশফুলে। তার শুভ্র রঙটাই যেন মানুষের মনকে সতেজ করে তোলে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩ একরের ক্যাম্পাস যেন প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। কখনো পলাশ, কখনো জারুল, কখনো কাশফুল, কিংবা কখনো সোনালুর সৌন্দর্যে মহিমান্বিত হয় ক্যাম্পাস।
বর্ষা ঋতুকে বিদায় জানিয়ে এবং শরতের আগমনী বার্তা নিয়ে নীল স্বচ্ছ আকাশ ও কাশফুলের শুভ্রতার রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দেখে মনে হয়ে যেন নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলা ও কাশফুলের শুভ্রতার মাঝে বসে আছে এক লাল বউ এবং প্রকৃতির ছন্দে শুভ্রতার ভেলায় ভেসে বেড়াচ্ছে। আর এই শুভ্রতার মাঝে লাল রং টা একটু বেশি চোখে পড়ার মত।
কাশফুলের শুভ্রতা যেন লাল ইটের সৌন্দর্যকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলছে। কাশফুল দেখলে মনে হয় শরৎ যে এসেছে ধারায়। সকল মানুষ কাশফুলের এই শুভ্রতার সাথে শরৎকে বরণ করে নেয়। বর্ষার ঘন কালো মেঘকে বিদায় জানিয়ে প্রকৃতি শরতের স্বচ্ছ নীল আকাশ ও কাশফুলের শুভ্রতায় নিজেকে সাজায় সেইসাথে মানুষের মনের দুঃখ ক্লেশ সবকিছু যেন এই শুভ্রতার সাথে বিলীন হয়ে যায় তৈরি হয় এক স্বচ্ছ অনুভূতি।
বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলের মনে যেন এক উৎসব মুখর অনুভূতি জেগে ওঠে, সকলেই যেন চায় এই শুভ্রতার সাথে মিশে যেতে। কাশফুলের এই অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় জনগণের আনাগোনা বাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারদিকে বেষ্টন করে আছে শুভ্র কাশফুল আর এই শুভ্রতাই যেন সকলের মনকে দোলা দিয়ে যায়। সকলে যেন বিলীন হয়ে যেতে চায় এই শুভ্রতার রঙে।
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। এই দেশের ছয়টি ঋতু এক এক সময় তার এক এক রুপ রং ফুটিয়ে তোলে। প্রকৃতি তার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাধ্যমে প্রত্যেক ঋতুকে বরণ করে নেয়। ঠিক একই ভাবে শরৎ আসে চুপিসারে প্রকৃতি তাকে বরণ করে নেয় কাশফুলের শুভ্রতার সাথে।
কাশফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum Spontaneum এবং এটি এক ধরনের Poaceae (ঘাসজাতীয়) উদ্ভিদ। কাশফুল ১০ থেকে ১৫ ফুট লম্বা হয়ে থাকে এবং কাশফুল দেখতে সাদা, লম্বা ও তুলার মত নরম। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বিস্তীর্ণ মাঠ ও নিরিবিলি জায়গায় শরৎ এলেই ফুটে ওঠে কাশফুল। সকালবেলায় কুয়াশার সঙ্গে ভেজা কাশফুল কিংবা বিকেলের সোনালি আলোয় দুলতে থাকা কাশবন শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করে। বন্ধুদের আড্ডা, ক্যামেরার ফ্রেম কিংবা নিঃসঙ্গ পথচলা—সবকিছুর সঙ্গী হয়ে ওঠে এই কাশফুল।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শরৎকালে কাশফুলকে ঘিরে নানা স্মৃতি তৈরি করে। অনেকেই বলেন, কাশবনের ভেতর দিয়ে হাঁটলে মনে হয় এক অন্যরকম শান্তির জগতে প্রবেশ করা যায়। কারও কাছে এটা নিভৃতে বসে কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা, কারও কাছে ফটোগ্রাফির শ্রেষ্ঠ দৃশ্যপট।
কাশফুল শুধু প্রকৃতির সাজসজ্জা নয়, বরং বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। শরৎকাল আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবনের স্বচ্ছতা, নির্মলতা আর নতুন সূচনার কথা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাশফুল সেই বার্তাকেই আরও জাগিয়ে তোলে।
আপনার মতামত লিখুন :