২০১১ সালে কীর্তনখোলা নদীর তীর প্রতিষ্ঠিত হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। ২০১২ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়া দেশের ৩৪তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১৫ বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পারেনি বরিশাল বিভাগের একমাত্র সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি। ১ জনের বেডে ২ জন, ৪ জনের রুমে ৮ জন করে থাকেন, তারপরও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধাবঞ্চিত। নেই কোনো অডিটোরিয়াম, জিমনেসিয়াম, পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল সেন্টার, আছে শিক্ষক ও ক্লাসরুম সংকটও।
বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী আছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার। কিন্তু বর্তমানে আবাসিক সুবিধা পাচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৩১ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আবাসিক হল দুইটি এবং ছাত্রী আবাসিক হল দুইটি।
শিক্ষার্থীরা জানান, কাগজে কলমে বর্তমানে আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৩১ হলেও বাস্তবে সেটা আরো কম (২০ শতাংশেরও কম)। পড়াশোনা শেষ বা অন্য কোনো কারণে হল ছেড়ে চলে গেলেও হলের সিট বাতিল হওয়া এবং পরবর্তী আসন বরাদ্দ না দেওয়া পর্যন্ত তার নামেই ফাঁকা সিটটি থেকে যায়। হলের সিট পেতে হলে থাকতে হবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অথবা কোনো ক্ষমতাবান শিক্ষকের রেফারেন্স। এতে করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যাদের হলের সিট খুব প্রয়োজন তারা পায় না। সম্প্রতি নিউজে দেখলাম মাস্টার্স শেষ করেও হলে আসন বরাদ্দ পেয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে হলে একটি সিট না পেয়ে কান্না করছেন অনেকে শিক্ষার্থী। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এতটা সুবিধাবঞ্চিত কীভাবে হয় বুঝে আসে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি হল ২৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সেই হিসেবে ৪টি হলে মোট ১ হাজার ১২০ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারে, যা মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১১ শতাংশ। প্রতিটি রুমে ৪টি করে বেড ও ৪টি চেয়ার-টেবিল রয়েছে। প্রতি রুমে চারজন করে থাকার কথা, কিন্তু বর্তমানে হলে প্রত্যেক রুমে ৮ জন করে থাকেন। তবে মাস্টার্স জোনে প্রতি রুমে ৪ জন কটে থাকেন। সবগুলো হলের চিত্র প্রায় একই।
বিজয় ২৪ হলে একক ও দ্বৈত আসন মিলিয়ে ৫৪৪ শিক্ষার্থী থাকার সুযোগ রয়েছে।এর মাঝে মাস্টার্স জোনে ৮টি রুমে চারজন করে মোট ৩২ জন একক সিটে থাকার সুযোগ পায়। বাকি সবগুলো রুমেই চারটি বেডে ২ জন করে প্রত্যেক রুমে মোট ৮ জন শিক্ষার্থী থাকেন।
শেরে বাংলা হল প্রশাসন জানায়, শেরে বাংলা হলে মোট ৫৩৬টি আসন রয়েছে ।এর মাঝে দ্বৈতাবাসিক সিট রয়েছে ৪৭২টি এবং একক ৬৪টি। রাবেয়া তাপসী বসরী হলে ৪৫০ আসনের মাঝে সিঙ্গেল বেড ৩০টি। সুফিয়া কামাল হলে মোট ৫৩০টি আসন রয়েছে।
আবাসিক সুবিধাবঞ্চিত এক শিক্ষার্থী জানান, আমি সম্মান চতুর্থ বর্ষে পড়ালেখা করছি। হলে কয়েকবার আবেদন করেও সিট পাইনি। যেসব বিষয় বিবেচনা করে হলে সিট দেওয়া হয় তার সবগুলো পূরণ করলেও আমি সিট পাইনি। অথচ অনেকেই সচ্ছল পরিবারের বা জুনিয়র হলেও সিট পায়।
পর্যাপ্ত সুবিধা পায় না আবাসিক শিক্ষার্থীরা
আবাসিক শিক্ষার্থীরা জানান, ৪ জনের রুমে ৮ জন থাকতে আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। মানুষ বেশি হওয়াতে রুমে পড়ার পরিবেশ থাকে না। বেডের সাথে অতিরিক্ত কাঠের তৈরি বেঞ্চ বসিয়ে ১ জনের বেডে দুইজন ঘুমাই, সেই টাকাও আমাদের দিতে হয়। কিন্তু পড়ার টেবিল তো একটাই! আমাদের বই খাতা ও মালামাল রাখার পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যায় না। ওয়াসরুম থেকে শুরু করে সব জায়গাতে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
দ্বৈতাবাসিক সিটের জন্য ৬ মাসে ১ হাজার ৪২৭ টাকা এবং একক সিটে ২ হাজার ৪০০ জমা দিতে হতো। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন থেকে সিট ভাড়া কমানোর দাবি জানিয়ে আসছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ৬ মাসের জন্য ৬০০ টাকা অর্থাৎ বাৎসরিক ১২০০ নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে কমিটি গঠন করে দেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. সূচিতা শরমিন। গত বছরের ডিসেম্বরে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে সিন্ডিকেট ও অর্থ কমিটিতে তা পাশ হয়ে প্রজ্ঞাপন জারি জারি হয়েছে গত সপ্তাহে ।
কমিটি গঠনের ১৪ মাস পরে পাওয়া প্রজ্ঞাপনে দ্বৈত সিটের জন্য ২ হাজার ৩৭৫ নির্ধারণ করা হয়েছে। যা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। উপাচার্যের আশ্বাসে আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসলেও দাবি না মানা পর্যন্ত টাকা জমা দিবেন না বলে জানিয়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
রসায়ন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ইয়ামিন বলেন, নতুন ধার্যকৃত ফি কাঠামো শিক্ষার্থীদের আর্থিক সক্ষমতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অন্যায্য ও অযৌক্তিক।
আমাদের দাবির সাথে উপাচার্য স্যারও অনেক ক্ষেত্রে একমত হয়েছেন। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আমাদের দাবি বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। কিন্তু দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত আমরা টাকা জমা দেব না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. তৌফিক আলম বলেন, আবাসিক সংকট প্রকট, এটা সঠিক। এজন্য আমরা যে নতুন প্রস্তাব দিয়েছি সেখানে কয়েকটি হল নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। সেই প্রস্তাবের ফিজিবিলিটি টেস্টের জন্য প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। নতুন আবাসিক হল নির্মাণ হলে সংকট অনেকটা লাঘব হবে। হলের আবাসন ফি কমানোর বিষয়টি অর্থ কমিটি ও সিন্ডিকেট সভায় পাশ করতে হবে। সামনের সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :